Advertisement
E-Paper

এ শহরের বুকের গভীরে

‘পূজারিণী’ কবিতার আধারে নাটকটি লেখেন রবীন্দ্রনাথ তার আগের বছরেই (বৈশাখ, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ)। নাটক লেখার ক’দিন আগেই মন্দির-ভাষণে ‘ধর্মের নামে পশুত্ব’কে ধিক্কার জানান কবি।

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০

নটীর পূজা/ রবি পরিক্রমা
দেবজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায়
৪০০.০০
সিগনেট প্রেস

‘‘একটা ব্যাপার নিয়ে কলকাতায় হৈ হৈ পড়ে গেছে... জোড়াসাঁকোয় বিশ্বকবির ‘নটীর পূজা’ অভিনয়।’’ স্মৃতিকথায় লিখেছেন অহীন্দ্র চৌধুরী। ১৯২৭ সালের গোড়ায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে চার দিন ‘নটীর পূজা’ অভিনয় হয়। ‘পূজারিণী’ কবিতার আধারে নাটকটি লেখেন রবীন্দ্রনাথ তার আগের বছরেই (বৈশাখ, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ)। নাটক লেখার ক’দিন আগেই মন্দির-ভাষণে ‘ধর্মের নামে পশুত্ব’কে ধিক্কার জানান কবি। প্রথমে এতে কোনও পুরুষ-ভূমিকা ছিল না, কিন্তু কলকাতায় মঞ্চায়নের আগে মুক্ত মঞ্চে শুধু মেয়েদের অভিনয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় রবীন্দ্রনাথ যোগ করলেন ‘উপালি’ চরিত্র, অভিনয়ে নামলেন নিজেই। এ দিকে ‘মাসিক বসুমতী’তে ‘নটীর পূজা’ প্রকাশিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন ‘প্রবাসী’ সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। পেশাদার মঞ্চে নাটকটি অভিনয়ের অনুমতি দেননি রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩১-৩২ সালে আবার জোড়াসাঁকোয় পাঁচ দিন অভিনীত হল ‘নটীর পূজা’। ’৩২-এই তার চলচ্চিত্ররূপ মুক্তি পেল, যদিও তা সাফল্য পায়নি। এমনকি তার প্রিন্টটিও ১৯৪০-এ আগুনে পুড়ে যায়। নাট্যরচনা থেকে মঞ্চ ও চলচ্চিত্রায়ণের এই যাত্রাপথ সমসাময়িক সূত্রের ভিত্তিতে সযত্নে পুনর্নির্মাণ করেছেন লেখক। সংযোজন অংশে কয়েকটি দুষ্প্রাপ্য রচনা, অনেক দুর্লভ ছবির সঙ্গে সমগ্রত পাওয়া গেল জোড়াসাঁকোয় প্রথম অভিনয়ের পুস্তিকা ও সিনেমার পুস্তিকাটি।

নির্বাচিত নিবন্ধ
রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য
৩০০.০০
অনুষ্টুপ

‘‘খুব অল্প সাহিত্য পড়ে, প্রচুর পরিভাষা জেনে আপাতত তৈরি হচ্ছে নিজস্ব বোধবুদ্ধিহীন কিছু তোতাপাখি, যাদের পেটে গজগজ করছে পরিভাষা, আরও পরিভাষা। আর তাঁদের শ্রদ্ধেয় দাদা-দিদিরা খুঁজে চলেছেন প্রতিশব্দ, আরও প্রতিশব্দ। সাহিত্যচর্চার ইতিহাসে এমন দুর্যোগ কি আগে কখনও এসেছিল?’’— রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের পাণ্ডিত্য অগাধ, বিচার-বুদ্ধি তীক্ষ্ণ, ভাষা নির্মেদ এবং প্রায়শ নির্মম। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর প্রায় ত্রিশটি লেখা বেছে নিয়ে তৈরি হয়েছে নির্বাচিত নিবন্ধ। সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের ইতিহাসের নানা দিক নিয়ে ভেবেছেন এবং লিখেছেন রামকৃষ্ণবাবু। ভাবিয়েছেন তাঁর পাঠকদের। চার্বাক থেকে সুকুমার রায়, বিনয় ঘোষের বিদ্যাসাগর-চর্চা থেকে ডব্লিউ এইচ অডেন-এর কবিতা স্পেন, ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি থেকে কখনও বা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস— যখন যা নিয়ে লেখেন তিনি, তাতেই তাঁর মননের সমৃদ্ধ প্রতিফলন ঘটে, পাঠক সেই প্রজ্ঞাকে সসম্ভ্রম স্বীকার করেন এবং ঋদ্ধ হন। বেশ কয়েকটি লেখায় সংলাপের আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন প্রাবন্ধিক। বিভিন্ন মেজাজের কয়েক জন তার্কিকের মধ্যে আড্ডা চলছে, ফালতু কথার আধুনিক আড্ডা নয়, যেন ধ্রুপদী গ্রিসের জ্ঞানান্বেষণী আড্ডা, যার কথা বলেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’ ছবির মনোমোহন। বাচাল, সবজান্তা, আশাবাদী, জিজ্ঞাসু— আড্ডাবাজদের তুমুল তর্ক আর টিপ্পনী পড়তে পড়তে পাঠকের মনে হয়, সংস্কৃতিগর্বে সদা-গর্বিত বাঙালির ঘরে ঘরে যদি সত্যিই আজও এমন আড্ডা জমত, জমতে পারত!

গদ্যসংগ্রহ
ব্রাত্য বসু
৪৯৯.০০
দে’জ পাবলিশিং

ব্রাত্য বসুর গদ্যলেখা শুরু সেই কমবয়স থেকে, নাটক লিখতে গিয়ে গদ্যলেখা থেকে কখনও ক্ষান্ত হননি। প্রথম দিকে থিয়েটারে মগ্ন থাকার সুবাদে শুধু তা নিয়েই লিখতেন, কিন্তু গত দশকের দ্বিতীয়ার্ধে সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত আন্দোলনে যখন জড়িয়ে পড়লেন, ‘সেইসময় প্রথম থিয়েটারের বাইরে সমসময় ও ঘূর্ণাবর্ত নিয়ে যাবতীয় লেখালিখির সূচনা’, নিজেই জানিয়েছেন লেখক। বইটি যে ক’টি পর্বে বিভক্ত, তার মধ্যে একটির শিরোনাম ‘রাজনীতি’, ছ’টি লেখা আছে এ-পর্বে, একটিতে লিখছেন ব্রাত্য: ‘‘প্রত্যেক দেশে প্রত্যেক কালে যাঁরা অন্যস্বর তুলে ধরতে চেয়েছেন... রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান বা পার্টি তাঁদের মধ্যে সন্ত্রাস চালিয়েছে... যে কোনো প্রতিরোধকে অবৈধ হিংসা তথা উন্মত্ততা বলে চিহ্নিত করে... তাকে মেরে হটিয়ে নিজের গঠনের ভেতর যে অন্তর্গত ভায়োলেন্স থাকে তার বৈধতা কীভাবে সে নির্মাণ করে।’’ স্বাভাবিক নিয়মেই ‘থিয়েটার’ পর্বের রচনাদি সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি, তাতে নিজের নাট্যভাবনার নানান দিকের সঙ্গে যেমন লিখেছেন শম্ভু মিত্র উৎপল দত্ত অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাট্যনির্মাণ নিয়ে, তেমনই চেখভ পিরানদেল্লো বা আর্থার মিলারকে নিয়েও। কবিতা-নাটক-চলচ্চিত্রের আন্তঃসম্পর্কের আলোচনা ‘শিল্পান্তর’ পর্বটিতে। আর ‘ব্যক্তিগত’ বা ‘হরেকরকম’ পর্বে তো রীতিমতো আত্মনেপদী গদ্য ব্রাত্য-র, স্মৃতির হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যান এ-শহরের বুকের গভীরে: ‘‘এই বাড়ি দেখলে মনে হয় কেউ যেন আজও তার ছাদে ডালবড়ি শুকায়, এলোচুলে কারা যেন ঝুঁকে তলার রাস্তা দেখে, সন্ধেবেলায় একটা একটা করে আলো জ্বলে ওঠে সিংহদুয়ার বরাবর।’’

Review Books
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy