টেন লেসনস ফর আ
পোস্ট-প্যানডেমিক ওয়ার্ল্ড
ফরিদ জ়াকারিয়া
৫৯৯.০০
পেঙ্গুয়িন
অতিমারি দুনিয়াকে দশটি শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, লিখেছেন আমেরিকার প্রবীণ সাংবাদিক। এক দুই তিন করে সেই তালিকা রচনার অবকাশ নেই, প্রয়োজনও নেই। মোদ্দা কথা একটাই। আমরা একটা রেসিং কার নিয়ে আপনবেগে পাগলপারা হয়ে দৌড়চ্ছি, মাঝেমধ্যেই গাড়ি খারাপ হচ্ছে, তখন কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে আবার দৌড় শুরু করছি, সামনে বড় বিপদ ক্রমশ আরও বড় হচ্ছে। কোভিড-১৯’এর পরেও কি সেই ইতিহাসই বহাল থাকবে? না কি, এ-বার পৃথিবী একটু দম নিয়ে, দু’দণ্ড স্থির হয়ে ভাববে, এবং তার বেলাগাম যাত্রায় রাশ টানার চেষ্টা করবে? অসাম্য কমিয়ে, সর্বজনীন শিক্ষা আর জনস্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বাড়িয়ে, পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হয়ে গাড়িটাকে খাদের কিনারা থেকে ফেরাতে চাইবে?
ফরিদ জ়াকারিয়ার আশা, চাইবে। এবং সেই আশার পিছনে আছে লিবারালিজ়ম বা উদারপন্থায় তাঁর আস্থা। তিনি বিশ্বাস করেন, সেই পন্থা, তার সমস্ত দোষ ত্রুটি অসম্পূর্ণতা সত্ত্বেও, মানুষকে পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে সুস্থ পৃথিবী গড়ার প্রেরণা দেবে। ‘সোশ্যাল ক্যাপিটাল’-এর জয়গান গেয়ে তিনি বলেছেন, যে সব দেশের নাগরিকরা সামাজিক বিশ্বাসের পুঁজিতে সমৃদ্ধ, তারা অতিমারির মোকাবিলায় তুলনায় অনেক বেশি সফল হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর প্রত্যাশা, যে সব দেশে এই বিশ্বাসের ঘাটতি আছে, সেখানকার নাগরিকরাও নিজেদের বাঁচার তাগিদেই ঘাটতি পূরণে তৎপর হবেন, সহযোগিতার পথে আসবেন। পোড়-খাওয়া সাংবাদিক বিলক্ষণ জানেন, এমন আশাবাদকে অনেকেই বলবে ‘অবাস্তব’। জানেন বলেই, তাঁর দশ নম্বর শিক্ষাটির কথা যে অধ্যায়ে আছে তার শিরোনাম: অনেক সময় আদর্শবাদীরাই সবচেয়ে বেশি বাস্তববাদী। অর্থাৎ, সহযোগিতার আদর্শ ছাড়া মানুষের পক্ষে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে, সুতরাং সেই আদর্শকে স্বীকার করে নিতেই হবে। নান্যঃ পন্থাঃ।
সহযোগিতার ধর্মকে নৈতিকতার চশমা দিয়ে না দেখে বাস্তববোধের কাঠামোয় দেখবার এই উদ্যোগটি ভাল। ‘এখনও নিজেদের সামলাও, না হলে কেউ বাঁচবে না’— এই হুঁশিয়ারিতে অতি বড় নির্বোধ পাষণ্ডেরও টনক নড়তে পারে। কিন্তু মুশকিল হল, রেসিং কারটির নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে, সেই অতিকায় শক্তিমানদের টনক শুধু এই যুক্তিতে নাড়ানো যাবে কি? জ়াকারিয়া খেয়াল করতে বাধ্য হয়েছেন যে, সামাজিক পুঁজির সঙ্গে অসাম্যের একটা সম্পর্ক আছে, অসাম্য বাড়লে সে-পুঁজি কমে। অসাম্যের মাত্রা কমাতে সরকারকে নানা ভাবে সচল হতে বলেছেন তিনি। কিন্তু অসাম্যের মূলে যে অর্থনৈতিক কাঠামো, তার পরিবর্তনের কথা তাঁর তালিকায় নেই। শেষ পর্যন্ত তাই তাঁর ভরসা থাকে হ্যারি ট্রুম্যানের ওয়ালেটে রাখা টেনিসনের পদ্যে, যে পদ্য বলে— বহুজনের কাণ্ডজ্ঞানই জয়ী হবে, দয়ালু পৃথিবী বিশ্ববিধানের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ঘুমোবে। এর পরে শান্তিজল বিতরণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy