Advertisement
E-Paper

প্রকৃতি ও প্রাণীজগতের বৈসাদৃশ্য

বিশেষ করে ১৯১২ সালে প্রথম যে স্টাইল সমস্ত বিশ্বে নাড়া দিয়েছিল সেই প্রণালীতে করা ‘বেহালা এবং আঙুর’ বা ১৯৩২ সালের ‘আয়নার সামনে নারী’ যে ভাবে সৃষ্ট সেগুলি থেকেই তরুণ শিল্পী ‘মিশরের ছবি’ বা ‘শেষ কামনা’ চিত্রের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে ভাবা যেতে পারে।

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
সম্পর্ক: বিড়লা অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত পলাশ হালদারের প্রদর্শনীর একটি ছবি

সম্পর্ক: বিড়লা অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত পলাশ হালদারের প্রদর্শনীর একটি ছবি

তরুণ শিল্পী পলাশ হালদারের একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। পলাশ সুন্দরবনের অধিবাসী। তাঁর তো প্রকৃতিপ্রেমী হওয়ারই কথা। সুন্দরবন কলাভবনের সঙ্গে যুক্ত থেকে শিল্পী তাঁর এই প্রদর্শনীটিও সেখানকার মাছ চাষী এবং মধু-সংগ্রাহকদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন যা মহৎ উদ্দেশ্য।

শিল্পীর পরিচয় তাঁর বিমূর্ত শিল্পকর্মে। নিসর্গ বা প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং প্রাণীজগতের বৈসাদৃশ্য এবং আন্তঃসম্পর্ক নিয়েই তিনি ছবি আঁকেন। ছবির গঠনশৈলীতে কিউবিজম যে প্রথমেই শিল্পীকে কিছু অংশে প্রভাবিত করেছে তা লক্ষণীয়। বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার, যেমন গোলাকৃতি বা চক্রাকার, চারচৌকো বা সমচতুর্ভুজ এবং ত্রিকোণ আকারের পাশাপাশি অবস্থান বা সন্নিধি স্থাপন করে বস্তুকে ভেঙে তার সঙ্গে অন্য পদার্থের সম্পর্ক গঠন করলে তবেই তা কিউবিজমের দলভুক্ত হতে পারে। এতে বিশ্লেষণমূলক বা সমন্বিত কিউবিজম দুই ভাবেই শিল্পীরা নানা দেশে একশো বছরেরও আগে শিল্পকর্ম নির্মাণ করতে সক্ষম হন।

এই প্রদর্শনীর একটি ছবি যেটির শিরোনাম ‘মিশরের ছবি’ সেটি পিকাসোকে মনে করায়। বিশেষ করে ১৯১২ সালে প্রথম যে স্টাইল সমস্ত বিশ্বে নাড়া দিয়েছিল সেই প্রণালীতে করা ‘বেহালা এবং আঙুর’ বা ১৯৩২ সালের ‘আয়নার সামনে নারী’ যে ভাবে সৃষ্ট সেগুলি থেকেই তরুণ শিল্পী ‘মিশরের ছবি’ বা ‘শেষ কামনা’ চিত্রের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে ভাবা যেতে পারে। এ ছাড়াও কিছুটা মিরোর সুরিয়্যালিজম-এর কথা মনে পড়ায় শিল্পীর রক্তদান বা গ্র্যাভিটেশন ছবি দু’টি। শিল্পীর উপর ক্যান্ডিনস্কির প্রভাবও কিছুটা দেখা যায়। তাঁর ‘লস অফ ন্যাচরাল গিফট’ দেখলে ক্যান্ডিনস্কির ‘ওয়াইট লাইন’ মনে করায়।

তবে এই সব প্রভাব তো তরুণ শিল্পীদের উপর থাকবেই। এতে বোঝা যায় যে, তিনি বড় শিল্পীদের ছবি দেখেন। তাই এই প্রভাব কাটিয়ে তাঁকে নিজস্ব একটি ভাষা সৃষ্টি করতে হবে। এই প্রতিভাবান তরুণ চিত্রশিল্পীর একটি ছবি ‘বিবাহের প্রস্তুতির আগে হলুদ’ সব প্রভাব কাটিয়ে শৈল্পিক উৎকর্ষ লাভ করেছে। এ ছাড়া আরও একটি ছবি ‘প্রেমের বিহ্বলতা’ চিত্তাকর্ষক এবং নিজস্ব শৈলীতে ভরপুর। তাঁর ‘আনন্দ’ ছবিটি বেশ মজাদার। শিল্পী চরিত্রটির শারীরিক গঠন অন্যরকম ভাবে দেখিয়েছেন।

শমিতা বসু

শয়তানের ছাওয়াল

উপনিবেশ আমেরিকার উপর ব্রিটিশ সেনার অত্যাচার ও আমেরিকানদের আত্মত্যাগের কাহিনি নিয়ে জর্জ বার্নার্ড শ-এর বিখ্যাত নাটক ‘দ্য ডেভিল’স ডিসাইপল’ (১৮৯৭)। বার্নার্ড শ-এর এই নাটকটিকেই ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে ফেলে ‘শয়তানের ছাওয়াল’ নামে চমৎকার বঙ্গীকরণ করেছিলেন নারায়ণ সান্যাল। ‘নাটকওয়ালা কলকাতা’র প্রযোজনায়, শ্যামলকুমার চক্রবর্ত়ীর নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হল এই নাটকটি। যথাসম্ভব আড়ম্বরহীন এই প্রযোজনা দাঁড়িয়ে আছে দু’টি মাত্র উপাদানের উপরে ভর করে। প্রথম হল নাট্যকাহিনি। খান সেনার অত্যাচার নেমে আসছে বাংলাভাষী হিন্দু-মুসলমানের উপরে। মার্শাল ল বসিয়ে গ্রামের একজন করে মুরুব্বি-প্রতিবাদীকে ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছে। আহমদনগরে আসান আলিকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর তারা মোতিগঞ্জ গ্রামে এসে ভিড়েছে। গ্রামের মৌলানা হাজি সাহেবকে ফাঁসিতে ঝোলানো তাদের পরবর্তী লক্ষ্য। এ দিকে মোতিগঞ্জের ‘শয়তানের ছাওয়াল’ নামে পরিচিত হাসন আলি, ছোটবেলা থেকেই ইসলামের চোখে শয়তান। মদ, জুয়া, মেয়েমানুষ নিয়েই তার কারবার। শরিয়তি কানুন সে মানে না। আপাতভাবে গ্রামের মানুষের চোখে এই শয়তানের ছাওয়ালই মৌলানা হাজিকে বাঁচালেন। হাসি মুখে ফাঁসির দড়ি গলায় নিতে গেলেন। তার পর খান সেনাদের আত্মসমর্পণ, আজাদির লড়াইতে ভারতীয় ফৌজ ও মুক্তিযুদ্ধের অবদান, শয়তানের ছাওয়ালের ‘হিরো’ হয়ে ওঠা এবং পরিশেষে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানে সমবেত ভাবে গলা মেলানো-সরলভাবে ঘটে যাওয়ায় দর্শক খানিক হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন।

প্রযোজনার একমাত্র আকর্ষণ শয়তানের ছাওয়াল চরিত্রে গৌতম হালদারের চিরাচরিত অভিনয়। সেই তিন দশক আগের একই ম্যানারিজম, সেই সার্কাসের ক্লাউনবৎ অঙ্গসঞ্চালন, সেই যাত্রাসুলভ উচ্চারণ শেষে দন্তব্যাদান হাসি-টানা আড়াই ঘণ্টা দর্শক উপভোগ্য মনোরঞ্জনের সমস্তই তিনি একা দিয়ে গেলেন। সহ অভিনেতাদের ততোধিক জড়তা, জন-গণ-মন গাওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়ানো, খান সেনাদের বাংলায় সংলাপ বলিয়ে উর্দু-উর্দু দুয়ো দেওয়া, চার-পাঁচটি কাপড়ের সেটকে এধার ওধার করে বানানো গৃহদৃশ্য। হঠাৎ হঠাৎ বিউগল বেজে ওঠা, ক্বচিত দু’-একটা আলোর বিচ্ছিন্ন বিচ্ছুরণ, এ সমস্ত দেখে দর্শক চিন্তামুক্ত নিরাপদ নিশ্চিন্তিতে ক্ল্যাপ দিতে দিতে বেরিয়ে এলেন।

মলয় রক্ষিত

অনুষ্ঠান

পিকাসো আয়োজন করেছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সন্ধ্যা। কণ্ঠসঙ্গীতে সুমন ঘোষ তাঁর সুনাম বজায় রেখেছেন। গিটারে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন দীপক। তবলায় ছিলেন জ্যোতির্ময় রায়চৌধুরী।

কবিতা শুধুমাত্র একটি শিল্পমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়। দিশাহীন জীবনে আশার আলোও দেখাচ্ছে। এমনই বাস্তব সত্য উঠে এল বাংলা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত ‘একটি বৈঠকী আড্ডা’য়। আয়োজক সমকাল। আবৃত্তি এবং আলাপচারিতায় ছিলেন বাচিকশিল্পী মুনমুন মুখোপাধ্যায়, মানস সিংহ, ইন্দ্রনীল রায়, ঝর্ণা বারুই, শান্তনু তালুকদার, শ্রীমন্তী দাশগুপ্ত, পরিমল চক্রবর্তী, শর্মিষ্ঠা দত্ত রায়, অলোক মুখোপাধ্যায়, ছন্দা রায়। সূত্রধরের ভূমিকায় ছিলেন রত্না মিত্র, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, প্রণতি ঠাকুর, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত এবং ঊর্মিমালা বসু। পরিকল্পনায় বাসুদেব নন্দী, উপস্থাপনায় পারমিতা সমাদ্দার।

গানের ভুবন-এর উদ্যোগে রণজিৎ কুমার সেনের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদ্‌যাপিত হল জীবনানন্দ সভাঘরে। এই উপলক্ষে গান ও পাঠে অংশ নিয়ে ছিলেন প্রবীণ ও নবীন শিল্পীরা। গান শোনালেন দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, দীপান্বিতা সেন প্রমুখ। আয়োজক অহর্নিশ।

তরুণ শিল্পী পলাশ হালদারের একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। পলাশ সুন্দরবনের অধিবাসী। তাঁর তো প্রকৃতিপ্রেমী হওয়ারই কথা। সুন্দরবন কলাভবনের সঙ্গে যুক্ত থেকে শিল্পী তাঁর এই প্রদর্শনীটিও সেখানকার মাছ চাষী এবং মধু-সংগ্রাহকদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন যা মহৎ উদ্দেশ্য।

Drama Painting Theatre শয়তানের ছাওয়াল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy