Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

ধর্মীয় নির্দেশের বাইরে পৃথক পরিসর

ভূমিকায় অনুবাদক বলেছেন, ‘...প্রাতিষ্ঠানিক আচারের বিরুদ্ধে বারবার এসে দাঁড়িয়েছেন ভক্ত। কখনও বেদের, কখনও পুরাণের, কখনও কোরানের নির্দেশের বাইরে পৃথক পরিসর খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।’

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

দূরের মাদল

সম্পাদক: আব্দুল কাফি

২৫০.০০

তৃতীয় পরিসর

ভারত, ইরান, ইরাকের ভক্তি ও প্রেমের গানের তর্জমার একটি সংকলন এই বইটি। সম্পাদক আব্দুল কাফিই গানগুলি তর্জমা করেছেন। তামিল, কন্নড়, মরাঠি, কাশ্মীরি, হিন্দি, তেলুগু, সিন্ধি ও গুজরাতি ভাষার কুড়িজন ভক্তিবাদী কবি এবং সুফি ঘরানার তেরোজন ফার্সি আরবি পঞ্জাবি ও সিন্ধিভাষী কবির লেখনে সমৃদ্ধ এই সংকলনে আনুমানিক ষষ্ঠ শতকের তামিল মহিলা কবি কারাইকাল আম্মাইয়ার থেকে আঠেরো শতকের তামিল কবি অভিরামী ডাত্তার, অষ্টম শতকের সুফি সাধিকা মরমিয়া সন্ত ইরাকের রাবেয়া বাসরি থেকে ১৭৪২-এ যাঁর জন্ম সেই ফার্সি কবি শাহনিয়াজ, চোদ্দো শতকের কাশ্মীরি মহিলা কবি লাল দেদ, পনেরো শতকের গুজরাতি কবি নরসিন মেটা সকলেই আছেন। ভূমিকায় অনুবাদক বলেছেন, ‘...প্রাতিষ্ঠানিক আচারের বিরুদ্ধে বারবার এসে দাঁড়িয়েছেন ভক্ত। কখনও বেদের, কখনও পুরাণের, কখনও কোরানের নির্দেশের বাইরে পৃথক পরিসর খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।’ তাঁর মতে, ‘ভক্তি এবং প্রেম এই অর্থে চরম প্রতিবাদী একটি অবস্থান।’ প্রাতিষ্ঠানিক দেবভাষা নয়, ভক্তিসাহিত্যের ভাষা দেশীয়— যা জীবনের সঙ্গে লগ্ন।

বিচিত্র কলকাতার বিচিত্র সংগ্রাহক

লেখক: গৌতম বাগচী

মূল্য: ৪৯৫.০০

প্রকাশক: বিগ বুকস

‘আজব শহর কলিকাতা।’ ইতিহাসপ্রসিদ্ধ নানা শহরের পাশে নিতান্ত তরুণ এই শহর জন্ম থেকেই যেন ব্যতিক্রমী। ‘রেতে মশা দিনে মাছি’-র বাইরে শৌখিনতায় ভরপুর এক অন্য কলকাতাও গড়ে উঠছিল ধীরে ধীরে। গড়ে উঠছিল এক নব্য গুণিজন সমৃদ্ধ শহরজীবন। যাঁদের অনেকেই ছিলেন সংগ্রাহক। যাঁদের সংগ্রহ পরবর্তী কালের কলকাতার ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। সেই ইতিহাসের অনুসন্ধান সূত্রেই লেখা হয়েছে আলোচ্য বইটি। কলকাতার অতীত ও বর্তমানের বেশ কিছু সংগ্রাহক ও তাঁদের সংগ্রহকাহিনিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই বই থেকে অতীতের অনেক কথা জানা যায়। নবকৃষ্ণ দেবের গ্রন্থাগার নাকি গড়ে উঠেছিল সিরাজের সমৃদ্ধ সংগ্রহ থেকেই। রাধাকান্ত দেব, প্রসন্নকুমার ঠাকুরের পাশাপাশি শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুরের বাদ্যযন্ত্রের অনন্য সংগ্রহের কথা যেমন আছে তেমনই আছে এখনকার কলকাতার সংগ্রাহকদের কথা— সুশীলকুমার চট্টোপাধ্যায় বা নকুদার মাইক্রোফোন ও প্রজেক্টরের সংগ্রহ, অনুপ মিত্রের মুদ্রা সংগ্রহ, দেবজিত্‌ বন্দ্যোপাধ্যায়ের থিয়েটারের উপাদান সংগ্রহ, উৎপল সান্যালের ডাকটিকিট ও দেশলাই বাক্স সংগ্রহ। এ ছাড়াও আছে ইন্দ্রকুমার কাথোতিয়া, পরিমল রায় কি সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথা।

রাশিয়ায় আসিয়াছি

লেখক: প্রদীপ ঘোষ

৩৫০.০০

এবং মুশায়েরা

বিপ্লবের গর্ভগৃহ রাশিয়া। এ দেশ নিয়ে আগ্রহ বাঙালির রক্তে রয়েছে। বাঙালি রাশিয়া গিয়েছে। রাশিয়া নিয়ে লিখেওছে। কালস্রোতে বিশাল সোভিয়েত সাম্রাজ্য ধসে পড়েছে। রাশিয়া এখন পুতিনের বজ্রমুষ্টিতে। কেমন সেই রাশিয়া। এই রাশিয়াতেই গিয়েছিলেন প্রদীপ ঘোষ। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ‘রাশিয়ায় আসিয়াছি’ বইটি। বইটি বাংলা ও ইংরাজি দু’টি ভাষায় লেখা। প্রথমেই বলে রাখা দরকার তত্ত্বের কচকচানি নয়, এটি নিখাদ ভ্রমণ কাহিনী। তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, গর্কি, লেনিন, স্তালিনের রাশিয়া কম সময়ে দেখে ওঠা কঠিন। কিন্তু লেখক সেই প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করেছেন। ফলে কয়েক দিনে মস্কো ও আশপাশের অঞ্চল তাঁকে চষে ফেলতে হয়েছে। রাশিয়া তথা পৃথিবীর ইতিহাস ও সাহিত্যের এই অবিস্মরণীয় ব্যক্তিদের বাসস্থান, যার অধিকাংশ আজ মিউজিয়াম, ঘুরে দেখেছেন তিনি। বাদ যায়নি বিখ্যাত প্রাসাদ ও গির্জাগুলিও। তিনি সবই খুঁটিয়ে দেখেছেন। কিন্তু গোল বেঁধেছে অন্যত্র। ভ্রমণ কাহিনী উপভোগ্য হয়ে ওঠে লেখার প্রসাদগুণে। আর এখানেই ‘রাশিয়ায় আসিয়াছি’র সবচেয়ে বড় খামতি। বইয়ের শুরুতেই বলা আছে লেখাটির ইংরেজি তর্জমা রয়েছে। কিন্তু পড়তে বসে ঠিক উল্টোটিই মনে হয়। পাশাপাশি ছবিও রয়েছে বেশ কিছু যা বইটিকে উপভোগ্য করে তুলেছে। প্রাণীকুলে মানুষ শ্রেষ্ঠ এ কারণে যে, একমাত্র সে-ই এই ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম ও বিবর্তন নিয়ে ভাবে। সব কিছু আদি ইতিহাস জানতে চায়। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, দি মোস্ট ইনকমপ্রিহেন্‌সিবল থিং ইন দিস ইউনিভার্স ইজ দ্যাট ইট ইজ কমপ্রিহেন্‌সিবল। সত্যি, চেষ্টার ফলে মানুষ কেন ব্রহ্মাণ্ডের রহস্যাবলি উদ্‌ঘাটন করতে পারে, তা এক বড় বিস্ময়। এর কোনও ব্যাখ্যা নেই। কেউ কেউ বলবেন, অন্য প্রাণীর তুলনায় মানুষের মস্তিষ্ক উন্নত বলে মানুষ রহস্যের কিনারায় পৌঁছয় ওই ব্যাখ্যা মানা যায় না। প্রশ্ন থাকে, মানুষের বুদ্ধি বা এমন হল কেন, যাতে সে বিশ্বরহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারে?

সীমাহীন মহাবিশ্বে

লেখক: নিখিলচন্দ্র মণ্ডল

১৫০.০০

আনন্দ পাবলিশার্স

সীমাহীন মহাবিশ্বে বইতে লেখক তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীদের বিশ্বরহস্য উদ্‌ঘাটনের কিছু নমুনা। ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম, গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রপুঞ্জের বিবর্তন, ডার্ক ম্যাটার, নক্ষত্রের জীবনকাল কিংবা পৃথিবীর এন্তেকাল বিষয়ে আলোচনা বইখানির উপজীব্য। লেখক আলোচনা শুরু করেছেন গ্রিক যুগ থেকে। চিন বা আরবে চিন্তাবিদেরা প্রকৃত পর্যবেক্ষণের অভাবে শুধু চিন্তায় বিশ্ববীক্ষণের কাজে কী ভাবে এগিয়ে ছিলেন, তা বর্ণনা করেছেন তিনি। ওই আদিচর্চা থেকে একেবারে হালফিলের চর্চার বিষয়— ব্রহ্মাণ্ডে দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য বস্তুর প্রসঙ্গও এসেছে তাঁর আলোচনায়। অনেকগুলি অধ্যায়ের মধ্যে রীতিমতো কৌতূহলোদ্দীপক হল ‘রাতের আকাশ আঁধারে কেন?’ শীর্ষক ব্যাখ্যাটি। সূর্য ঢাকা পড়ে গেলেও, আদিগন্ত বিস্তৃত নক্ষত্ররাজির আলোয় আকাশ উজ্জ্বল হয়ে ওঠার কথা। তা কেন নয়, সে প্রশ্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সামনে বিশাল এক ধাঁধা হিসেবে হাজির হয়েছিল। কী ভাবে মীমাংসা হল সে ধাঁধার, তা বিশদে আলোচিত হয়েছে।

এ সব সত্ত্বেও লেখকের প্রকাশভঙ্গির দুর্বলতায় পাঠক বিরক্ত হতে পারেন। ‘দূরের বৃক্ষরাজি কর্তৃক চোখের বাধাকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি’ অথবা ‘গ্যালিলিওর সেই সময়কার নব আবিষ্কৃত টেলিস্কোপের সাহায্যে আকাশের তারকাপুঞ্জের পর্যবেক্ষণের কথা জেনে তিনি বেশ চঞ্চলতা অনুভব করেছিলেন’— যেন অন্য ভাষায় রচনার আক্ষরিক অনুবাদ। আবার Sub-atomic-এর বাংলা ‘অতিপারমাণবিক’ না-হয় মানা গেল। Mystic, ultraviolet, fluid শব্দগুলোর অনুবাদ যথাক্রমে ‘পারলৌকিক’, ‘বেগনি পারের আলো’ এবং ‘সরিল’ কি মানা যায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review দূরের মাদল
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE