Advertisement
E-Paper

শিল্প থেকে সাহিত্যে অনায়াস অভিযাত্রা

রফিকুন নবী বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী। তেল এবং জলরঙে তিনি সিদ্ধহস্ত। এ ছাড়া ছাপাই ছবির জগতে, বিশেষত কাঠখোদাইয়ে গ্রিসে শিক্ষাগ্রহণের পর হয়ে ওঠেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী। দীর্ঘ পথযাত্রার মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের শ্রদ্ধেয় এক শিল্পব্যক্তিত্ব।

আবুল হাসনাত

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
দেশসেরা জগৎসেরা শিল্পীকথা। রফিকুন নবী। প্রথমা প্রকাশন, ৪০০.০০

দেশসেরা জগৎসেরা শিল্পীকথা। রফিকুন নবী। প্রথমা প্রকাশন, ৪০০.০০

রফিকুন নবী বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী। তেল এবং জলরঙে তিনি সিদ্ধহস্ত। এ ছাড়া ছাপাই ছবির জগতে, বিশেষত কাঠখোদাইয়ে গ্রিসে শিক্ষাগ্রহণের পর হয়ে ওঠেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী। দীর্ঘ পথযাত্রার মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের শ্রদ্ধেয় এক শিল্পব্যক্তিত্ব। কখনও এক জায়গায় স্থির থাকেননি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন নানা দিক থেকে। বাস্তবধারার সৃজনে তিনি জীবনের নানা অনুষঙ্গকে প্রতিফলিত করে চলেছেন। তাঁর তেলরঙের বৃহৎ ক্যানভাসের ছবি বাংলাদেশে শিল্প সংগ্রাহকদের কাছে এখন আগ্রহের বিষয়।

বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে স্বরূপ ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার যে প্রমত্ত আন্দোলন চলেছিল বাংলাদেশে, সেই দিনগুলোতে তিনি ছিলেন আন্দোলনের নিরলস এক কর্মী। দেশচেতনা ও অঙ্গীকার তাঁর শিল্পীচৈতন্য সৃজনের যে পথ সৃষ্টি করেছিল, কালের যাত্রায় তা বেগবান হয়েছে এবং সেই অঙ্গীকার থেকে তিনি খ্যাতি, প্রতিপত্তি ও অর্থপ্রাপ্তির পরও এতটুকু সরে আসেননি। তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের নদী, নিসর্গ, সমাজবাস্তবতারও রূপকার।

শিল্পী রফিকুন নবী চিত্র চর্চার পাশাপাশি কার্টুন এঁকেছেন দীর্ঘদিন। নাম ছিল টোকাই। ‘টোকাই’-এর অর্থ— পথেঘাটে যে সব শিশু ফেলে দেওয়া নানা কিছু সংগ্রহ করে ও জীবন-জীবিকা সেই সংগ্রহ থেকে নির্বাহ করে। পথশিশুদের নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে এই যে তাঁর সৃজন, তা রফিকুন নবীকে কার্টুনিস্ট হিসেবেও পরিচিতি দিয়েছিল। ভ্রমণ, রম্যরচনা, ছড়া ও শিল্পবিষয়ক প্রবন্ধ তিনি দীর্ঘদিন থেকে লিখছেন। স্মৃতি ও ভ্রমণ বিষয়েও তাঁর গ্রন্থ আছে।

আলোচ্য বইটিতে বাংলাদেশের কয়েক জন শীর্ষ চিত্রকর ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশিষ্ট কয়েক জন শিল্পীর জীবন ও কর্ম তিনি বিশ্লেষণ করেছেন এবং তাঁর আগ্রহের ক্ষেত্রগুলোকে মনোগ্রাহী ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। তিনি আচার্য জয়নুল আবেদিন, শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ, কামরুল হাসান, আনোয়ারুল হক, মোহাম্মদ কিবরিয়া ও আমিনুল ইসলামকে চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন। সে জন্য তাঁর সুযোগ হয়েছিল তাঁদের সৃজন ভুবন, শিল্পাদর্শ ও ব্যক্তিস্বরূপ সম্পর্কে বিশদ ভাবে জানার। এক পর্যায়ে তাঁদের সবার সঙ্গে চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতাকালে সখ্যও গড়ে উঠেছিল। এই সখ্যের সূত্রে পূর্ববর্তী কালের চিত্রের নানা প্রবণতা সৃজন উৎকর্ষ শিল্পধারা নানা ভাবে তিনি এঁদের কাছ থেকে অবহিত হয়েছিলেন। তাঁদের প্রভাব, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কেমন করে তাঁরা পরবর্তী কালে বাংলাদেশের শিল্প-দীক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চারিত করেছিলেন, গ্রন্থটিতে তা বৃহৎ পরিসরে উন্মোচিত।

পরানের গহিন ভিতরে/ সৈয়দ শামসুল হক। সম্পা: শামসুজ্জামান খান।

বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০.০০

এই গ্রন্থে রবীন্দ্রচিত্রকলা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ রয়েছে। ভারতীয় চিত্রকলার সব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে তাঁর চিত্র কী ভাবে হয়ে উঠেছিল আধুনিকতার প্রকাশে উজ্জ্বল, রফিকুন তা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

আন্তর্জাতিক শিল্প পরিমণ্ডলে রফিকুন নবীর প্রিয় ছিলেন পাবলো পিকাসো, ভ্যান গঘ, অঁরি মাতিস, হেনরি মুর ও মার্ক শাগাল। এঁদের প্রত্যেকেরই সৃজনবৈভব হয়ে উঠেছিল প্রকাশে ও অভিব্যক্তিতে নব্য ধারায় উজ্জ্বল।

রফিকুন নবীর অনুভবে, প্রত্যক্ষণে ও বিশ্লেষণে আমরা পাই ভিন্ন স্বাদ।

সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি প্রয়াত হলেন তিনি। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে বাংলাদেশের সাহিত্যে হাতেগোনা যে কয়েক জন আধুনিকতার পথ নির্মাণ করেছিলেন, সৈয়দ শামসুল হক তাঁদের অন্যতম। তাঁর মৃত্যুর পর মাত্র দশ দিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বাংলা একাডেমি থেকে প্রায় তিনশো পৃষ্ঠার শ্রদ্ধাজ্ঞাপক গ্রন্থ পরানের গহিন ভিতরে। সম্পাদনা করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তিনি ভূমিকায় বলেছেন, ‘বাংলা একাডেমি বাংলা সাহিত্যের অনন্যসাধারণ শিল্পস্রষ্টা সৈয়দ শামসুল হক স্মরণে ‘পরানের গহিন ভিতরে/ সৈয়দ শামসুল হক’ শীর্ষক স্মৃতি-নিবেদনের প্রয়াস পেয়েছে। আমাদের সমকালীন সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বর্ণাঢ্য ও বর্ণিলতম এই ব্যক্তিত্বের স্মরণে শঙ্খ ঘোষ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, পবিত্র সরকার, হাসান আজিজুল হক সহ বাংলা সাহিত্যের নবীন-প্রবীণ বিশিষ্টজন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গ তাৎক্ষণিক ভাবে তাঁদের লেখার মধ্য দিয়ে আন্তরিক অংশগ্রহণ করেছেন, যা সৈয়দ শামসুল হকের প্রতি আমাদের বৃহৎ সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের ভালবাসা ও শ্রদ্ধারই পরিচয়বহ।’

এই গ্রন্থে ব্যক্তিস্বরূপ অর্জন জীবনবোধ ও বাংলাদেশের সাহিত্যে তাঁর অবস্থান বিশ্লেষিত হওয়ায় এটি একটি অনন্য সম্পদ হয়ে উঠেছে।

Books
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy