Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তুলিতে আঁকা শব্দে আশ্চর্য আড্ডাছবি

এই শিবতত্ত্বের ইতিবৃত্ত মাধবচন্দ্র গিরি মোহান্তজির সংগৃহীত কিছু নোট ও ভট্ট গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত হয়েছিল। তৎকালীন সেই প্রয়াস প্রায় শতবর্ষ পরে সটীক সম্পাদনায় প্রকাশিত হল।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৭:২০
Share: Save:

তারকেশ্বর শিবতত্ত্ব/ সতীশ গিরি মোহান্ত

সম্পাদক: শিবেন্দু মান্না

মূল্য: ২৫০.০০

পরিবেশক: অরুণা প্রকাশনী

সতীশচন্দ্র গিরি মোহান্ত সংগৃহীত ও লিখিত মূল বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৮ বঙ্গাব্দে। এই শিবতত্ত্বের ইতিবৃত্ত মাধবচন্দ্র গিরি মোহান্তজির সংগৃহীত কিছু নোট ও ভট্ট গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত হয়েছিল। তৎকালীন সেই প্রয়াস প্রায় শতবর্ষ পরে সটীক সম্পাদনায় প্রকাশিত হল। সুবিশাল ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে প্রচলিত ধর্মীয় কাহিনি, লোকশ্রুতি, লোকগাথা ইত্যাদি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের পরিচয়বাহী। বিগত প্রায় তিনশতাধিক বছর যাবৎ বর্তমান হুগলি জেলার শৈবতীর্থ তারকেশ্বর এবং ওই তীর্থক্ষেত্রে আরাধিত তারকনাথ শিব এক সুবিস্তীর্ণ এলাকার লোকমানসে, প্রাত্যহিক জনজীবনে, লোকধর্মে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। রাজা বিষ্ণুদাস-ভারামল্ল তারকনাথ শিবের পূজার্চনার ব্যবস্থা করেন। সেই সময়েই দশনামী শৈব সন্ন্যাসী মায়াগিরি ধূম্রপান প্রধান পূজক মোহন্ত পদে বৃত হন। এই বইয়ে কাব্যিক ছন্দে শৈবধর্ম সংস্কৃতির বিষয় ও তারকেশ্বরের শিবের প্রেক্ষাপটে রাঢ় বাংলার ইতিহাসেরও ইঙ্গিত আছে। ধর্মসংস্কৃতির সেই কাব্যকাহিনি সম্পাদক মুন্সিয়ানার সঙ্গে বিস্তারিত টীকায় সাধারণের কাছে প্রাঞ্জল ও প্রাসঙ্গিক করেছেন। তবে কিছু মুদ্রণপ্রমাদ রয়েছে।

এবং আড্ডা... (২য় খণ্ড)

লেখক: দেবব্রত চক্রবর্তী

মূল্য: ৩০০.০০

প্রকাশক: রক্তকরবী

‘এখন সত্যিই আড্ডা ব্যক্তিত্বরা ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছেন’ বলে আক্ষেপ করে আশ্চর্য সব আড্ডাছবি তুলিতে আঁকা শব্দে ফুটিয়ে তুলেছেন দেবব্রত চক্রবর্তী। একটি দৈনিক পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত লেখাগুলির এই সংকলনে ধরা রয়েছে বিগত দিনের নানা স্মৃতি। আছেন কবি তুষার রায় তাঁর অনবদ্য ছড়ায়— ‘ইনি একটু আঁকেন টাকেন/ উনি একটু লেখেন...ইনি উনি দুই সমান/ একটু পড়লে পেটে।’ আছেন একদা পোস্টম্যান পরে শিল্পী বিমান ঘোষ, বুকপকেটে পাঁচটা কলম নিয়ে ঘোরা বাংলা ছবির প্রচারসচিব শ্রীপঞ্চানন, অন্নদা মুন্সী তাঁর সুতো জড়ানো ডাঁটি ভাঙা চশমায়, রণেনআয়ন দত্ত গোপাল ঘোষের মতো শিল্পী, তরুণ মজুমদারকে ‘হেডমাস্টার’ ডাকা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে বন্‌ধের দিন চা ফেরি করায় যাঁর মাথা ফাটানো হয় সেই ইসমাইল-ও। আড্ডাসূত্রেই ফুটে ওঠেন বিমানবিহারী মুখোপাধ্যায়, মডেল জয়ন্তীলাল, কমলাদি, যাত্রার ছবি তোলা রবি দাস, আরও কত জন। আর্ট কলেজ, কফি হাউস— আর্ট কলেজের ডুমুরতলা, ফেভারিট কেবিন, বাদুড়বাগানের দুর্গাপুজো— এক অমলিন কিশোরবেলা— পঞ্চমীর সকালে ঢাকে কাঠি মানেই প্যান্ডেলে প্রতিমা, মুখ ধুয়ে এক ছুট্টে ঠাকুর, চারদিন সমানে ঠাকুর দেখা, বিসর্জন, জলসা, গলিতে পর্দা খাটিয়ে সিনেমা— সব গাঁথা হয় আড্ডার হারানো সুতোয়। নবীন-প্রবীণ সবার কাছেই আদ্যন্ত এক হারানো সুর।

নান্দনিক স্পর্শে লেখায় ও রেখায় ‘ওবিন ঠাকুর’

লেখক: ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত

মূল্য: ৩৫০.০০

প্রকাশক: সাগ্নিক বুকস

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৭১-১৯৫১) ছবি আঁকা ও লেখার বহুবিস্তৃত জগৎকে দুই মলাটে ধরতে চেয়েছেন ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত। ছবি লিখিয়ে ওবিন ঠাকুর নিয়মমাফিক ছবি আঁকা শিখলেও তাঁর মন তৃপ্তি পাচ্ছিল না। ইন্দ্রাণী দেখিয়েছেন, অবনীন্দ্রনাথের ‘কৃষ্ণলীলা’ সিরিজেই ‘এক অর্থে শুরু আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার জয়যাত্রা’। ১৯০৫-১৯১৫ সরকারি আর্ট স্কুলে থাকাকালীন তাঁর নেতৃত্বেই নব্যভারতীয় তথা প্রাচ্যরীতির চিত্রকলা দেশেবিদেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই সময়েই তিনি তাঁর প্রথম সারির ছাত্রদের যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে গড়ে তোলেন। ছবি আঁকাতেই থেমে থাকেননি তিনি, তাঁর ভাষাতেই বলা যায়, ‘মনকে পিঞ্জরখোলা পাখির মতো’ মুক্তি দিয়েছেন ‘কল্পনালোকে ও বাস্তবজগতে সুখে বিচরণ করতে’। খুব কম লেখকই তাঁর মতো করে গল্প বলতে পেরেছেন। এক দিকে ‘শকুন্তলা’, ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘রাজকাহিনী’, ‘নালক’ অন্য দিকে ‘আত্মকথা’, ‘ঘরোয়া’ আর ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’র স্মৃতিকথন। লেখক একেবারে ছোটবেলায় জোড়াসাঁকোর পরিবেশ-প্রকৃতি দিয়ে শুরু করে অবনীন্দ্রনাথের লেখার মধ্যে দিয়েই তাঁর জীবনপথে তাঁরই সঙ্গে এগিয়েছেন যাতে পাঠক ক্রমিক পরিবর্তনের আঁচ সহজেই পেতে পারেন। বলেছেন তাঁর লেখায় বিদেশি গল্পের ছোঁয়ার প্রসঙ্গ। এসেছে ‘বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী’, ‘শিল্পায়ণ’ আর ‘বাংলার ব্রত’-এর কথাও। সব শেষে আছে তাঁর পরিণত বয়সের সৃষ্টি ‘কুটুমকাটাম’। আলোচনায় এসেছে তাঁর ছবির শৈলীর সঙ্গে অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনার কথা। লেখক শিল্পীমনের সব দিকেই আলো ফেলে সহজ ভাষায় পাঠকের সামনে অবনীন্দ্রনাথের একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি তুলে ধরতে চেয়েছেন।

গণশুনানির পরে

লেখক: রঙিলী বিশ্বাস

মূল্য: ২০০.০০

প্রকাশক: দে’জ পাবলিশিং

রঙিলী বিশ্বাসের গল্প প্রচলিত কাহিনি কথন নয়। অলীক দার্শনিকতা আর নষ্ট জীবনের সুবিধেভোগী মানুষের গল্প নয়। তার বাইরে আরও বড় এক মাত্রায় উদ্ভাসিত। তাঁর দেখা কম নয়। দেখা তো শুধুই দেখা নয়, তা অন্তরের উপলব্ধিও। অভিজ্ঞতা এবং জীবনের প্রতি ভালবাসার মেলবন্ধন যদি ঘটে তা হলে এমন গল্প জন্ম নিতে পারে। এই নগরের বাইরে যে বিপুল পৃথিবী পড়ে আছে, গ্রাম ভারতবর্ষ, তার গল্প লিখেছেন রঙিলী। তার একটি লক্ষ্য আছে, সেই লক্ষ্যে তিনি অবিচল এই দশ আখ্যানে। তা কখনও প্রায় রিপোর্টাজ হতে হতেও গল্প হয়ে গিয়েছে, আবার গল্প হতে হতে রিপোর্টাজ। যেমন অহিদুর রহমানদা। ভাগচাষী অহিদুরের সঙ্গে হিন্দু ভূম্যধিকারী পরিবারের সম্পর্ক। দেশভাগের আগের ও পরের কথা। দেশ ভাগের অনেক বছর পেরিয়েও ওপার বাংলায় হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক নিয়ে এই আখ্যান, নানা খুঁটিনাটি বিষয় কথনে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কিন্তু এই আখ্যান কখনও স্মৃতিকথনের মতো, তার বাইরে গিয়ে অন্য আস্বাদ দিয়েও যেন থেমে গিয়েছে। ‘গণশুনানির পরে’ গল্পটি ক্ষুধার। নিম্নবর্গের মানুষ নিয়ে রাজনীতিকদের নিষ্ঠুর মিটিং-মিছিল। গল্পটি পশ্চিম সীমান্ত বাংলা, পুরুলিয়ার পাহাড়ি উষর মৃত্তিকার মানুষজন নিয়ে। এমন গল্পের চল তো উঠেই গিয়েছে। তাঁর ভিতরে সেই সাহিত্যের পরম্পরা যা নিয়ে আমরা গর্বিত হই। মহিমা বেওয়া গল্পটি একটি কৃষক রমণীর বেঁচে থাকার কঠিন বৃত্তান্ত। রঙিলী লেখেন খুব নিবিড় আত্মীয়তা আর ভালবাসা নিয়ে। এই আখ্যান অতি দীর্ঘ মনে হয়েছে। কথক, লেখকের আত্মীয়তা স্থাপিত হয়েছে মহিমা বেওয়ার সঙ্গে। কথন অনেক সময় তথ্যে ভারী। কিন্তু কুলেশ ডাক্তারের ঘোড়া বা রাতবঁধুয়ার মতো গল্পে তা হয়নি। পশু ও মানুষের সম্পর্ক নিয়ে গল্প কম নেই, এই গল্পে জুড়ে গিয়েছে নিঃসঙ্গ কুলেশ ডাক্তারের বউয়ের মৃত্যু, কুলেশ আর তার ঘোটকীর বিচিত্র সম্পর্ক। গল্পটি মনে থাকবে বহু দিন। আর মনে থাকবে রাতবঁধুয়া। মর্গ থেকে লাশ ভ্যান রিকশায় টেনে নিয়ে শ্মশানে যায় রাধা। একা। তার সঙ্গী সেই লাশ। সে-ই বন্ধু। বন্ধুর লাশ চিতায় উঠলে সে ফেরে। না সে আর পিছনে ফেরে না। ফিরতে নেই। গল্পটি অন্তিমে অন্য মাত্রায় পৌঁছে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pictures Drawing Books
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE