Advertisement
E-Paper

অন্তঃপুর মিশে গিয়েছিল বৃহত্তর জগতে

বিগত দু’শো বছরে চরম দুরবস্থা থেকে বাঙালি মেয়েদের ক্রমিক জাগরণ, তাঁদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনা নিয়ে অনেক বই বেরিয়েছে, লেখা হয়েছে বহু প্রবন্ধ। সেই ধারায় নতুন সংযোজন আলোকময়ীদের কথা। লেখক দুই শতাব্দীর মহিলা-সম্পাদিত চৌত্রিশটি পত্রিকা বেছেছেন: ‘খ্রীষ্টীয় মহিলা’ (সূচনা ১২৮৭/১৮৮১) থেকে ‘মাতৃভূমি’ (সূচনা ১৩৫২/১৯৪৫) পর্যন্ত। বইটি সুমুদ্রিত, মুদ্রণপ্রমাদ চোখে পড়েনি। আলোচনায় স্বচ্ছ অবলোকন এবং সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণের ছাপ স্পষ্ট।

প্রণতি মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০০:০১

বিগত দু’শো বছরে চরম দুরবস্থা থেকে বাঙালি মেয়েদের ক্রমিক জাগরণ, তাঁদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনা নিয়ে অনেক বই বেরিয়েছে, লেখা হয়েছে বহু প্রবন্ধ। সেই ধারায় নতুন সংযোজন আলোকময়ীদের কথা। লেখক দুই শতাব্দীর মহিলা-সম্পাদিত চৌত্রিশটি পত্রিকা বেছেছেন: ‘খ্রীষ্টীয় মহিলা’ (সূচনা ১২৮৭/১৮৮১) থেকে ‘মাতৃভূমি’ (সূচনা ১৩৫২/১৯৪৫) পর্যন্ত। বইটি সুমুদ্রিত, মুদ্রণপ্রমাদ চোখে পড়েনি। আলোচনায় স্বচ্ছ অবলোকন এবং সুশৃঙ্খল পদ্ধতি অনুসরণের ছাপ স্পষ্ট।

সারা বিশ্বেই আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচবার অধিকার পেতে মরণপণ লড়াই করতে হয়েছে মেয়েদের। আর আমাদের মতো যে দেশ ভিতরে-বাইরে পরাধীন ছিল, সে দেশের মেয়েদের কথা তো বলাই বাহুল্য। স্বাধীন ভারতীয় সমাজে নারীর অবস্থান অনেক পাল্টেছে, দিনে দিনে পাল্টাচ্ছে আরও। কিন্তু মুষ্টিমেয়র জন্য পাল্টালে তো হবে না, সবার জন্যই পাল্টাতে হবে। সমাজ-সংসারের আনাচে-কানাচে আজও জমে আছে কত কালি। আজও তো ভয়ঙ্কর নিগ্রহের শিকার মেয়েরা। যেমন ভবিষ্যতের পানে চায় মন, কখনও আবার সে-মন অতীতমুখে চলে, আরও এক বার স্মরণ করতে চায় কোন অন্ধকার পথ সে পেরিয়ে এল, সেই আঁধার ঘোচাতে ছোট-বড় দীপগুলি কারা জ্বাললেন, তার পরে রাত্রিশেষে কী করেই বা দিনের আলো ফুটল। সেই বহু প্রসারিত ইতিহাসের একাংশের অনুসন্ধান এই গ্রন্থে। মেয়েদের মনকে সচেতন করতে এবং তাদের উন্নতি সাধনে ক্রমে শিক্ষিত মেয়েরা যে-ভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, তার একটি প্রধান দিক ছিল সাময়িকপত্র সম্পাদনা ও প্রকাশ।

বাংলা ভাষায় সাময়িকপত্রের প্রথম প্রকাশ ১৮১৮ সালে। ১৮৭০ সালে বেরোয় মহিলা-সম্পাদিত পত্রিকা ‘বঙ্গ মহিলা’। সম্ভবত সম্পাদকের নাম মোক্ষদায়িনী দেবী, তিনি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোন। পাক্ষিক এই পত্রিকা বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে এক নতুন পথ খুলে দিল। ‘বঙ্গ মহিলা’ প্রকাশের মানসিকতাকে কি গড়ে তোলেনি বঙ্গনারীর জীবনে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রকাশিত ‘মাসিক পত্রিকা’ (প্যারীচাঁদ মিত্র ও রাধানাথ শিকদার সম্পাদিত। ১৮৫৪), ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ (উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদিত। ১৮৬০), কি ‘অবলা বান্ধব’ (দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত। ১৮৭০)?

উনিশ শতকের তেরোখানি মহিলা-সম্পাদিত পত্রিকার সন্ধান ছিল, যার প্রথম সাতটি অবলুপ্ত। লেখক তবু নিরাশ করেননি, ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ ‘ঢাকা প্রকাশ’ প্রভৃতিতে সমকালে পত্রিকাগুলির অল্পবিস্তর যেটুকু বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল, তার মাধ্যমে এগুলির কিছু পরিচয় হাজির করতে পেরেছেন। বাঙালি খ্রিস্টান মহিলাদের আন্তরিক চেষ্টার প্রমাণ রইল ‘খ্রীষ্টীয় মহিলা’-র পৃষ্ঠায়। মাসিক এই পত্রিকায় কেবল মেয়েরাই লিখতেন, সম্পাদক ছিলেন কুমারী কামিনী শীল। খ্রিস্টধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার লক্ষ্য হলেও পত্রিকার দৃষ্টি সংকীর্ণ ছিল না। নারীর কল্যাণ দেশপ্রেম সমাজসংস্কার ইত্যাদি প্রসঙ্গের আলোচনার দ্বারা এই পত্রিকা মেয়েদের সচেতন করতে চেয়েছিল।

ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ থেকে স্ত্রীপাঠ্য মাসিক পত্রিকা ‘পরিচারিকা’ দীর্ঘ দিন প্রকাশিত হত বিভিন্ন সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে (প্রথম প্রকাশ ১ জ্যৈষ্ঠ ১২৮৫/১৮৭৮)। আর্য নারী-সমাজের মুখপত্র ছিল এই পত্রিকা। ‘অন্তঃপুর’ও মাসিক পত্রিকা (প্রথম প্রকাশ মাঘ ১৩০৪/ ১৮৯৭), বিশিষ্ট ব্রাহ্মদের চেষ্টায় প্রকাশিত। বেশ কয়েক জন সম্পাদক এর দায়িত্ব নেন এবং এটিও দীর্ঘ দিন প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকা দু’টির প্রকৃতিগত অনেক মিল ছিল এবং শুধু এ ক্ষেত্রে নয়, প্রায় প্রতিটি পত্রিকার ইতিহাস এবং চরিত্রবৈশিষ্ট্য লেখক বিশ্লেষণ করেছেন এবং রচনা-বৈচিত্রের পরিচয় দিয়েছেন রচনা-অংশ উদ্ধৃত করে। এই শতকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে তিনটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে— ‘ভারতী’ (প্রথম প্রকাশ শ্রাবণ ১২৮৪/১৮৭৭, সম্পাদক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর), ‘বালক’ (প্রথম প্রকাশ বৈশাখ ১২৯২/ ১৮৮৫, সম্পাদক জ্ঞানদানন্দিনী দেবী), ‘পুণ্য’ (প্রথম প্রকাশ আশ্বিন ১৩০৪/১৮৯৭, সম্পাদক প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী)। ১৮৮৪ সালে পরিবারের অভাবনীয় অঘটনের বিষাদে ‘ভারতী’-র কণ্ঠ যখন স্তব্ধ হয়ে যায়, স্বর্ণকুমারী দেবী পত্রিকাটির ভার নেন। তিনি ও তাঁর দুই কন্যা হিরণ্ময়ী দেবী ও সরলা দেবীর সম্পাদনায় এই পত্রিকা আপন গৌরব অক্ষুণ্ণ রেখে পঞ্চাশ বছর চলেছিল। অবশ্য বেশ কয়েক বছর মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় ও সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় সম্পাদক ছিলেন। পরে আবার ভার নেন সরলা দেবী। ‘বালক’-এর আয়ু অল্প দিনেই ফুরিয়েছিল, তবু সে স্থায়ী চিহ্ন রেখে গেল বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে। বছর চারেকের আয়ু ‘পুণ্য’ পত্রিকার। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর রন্ধন শিল্পনৈপুণ্য সুবিদিত, পত্রিকায় এ বিষয়ের চর্চা সম্পাদক নিয়মিত করতেন। তাঁর জন্মবর্ষ ১৮৭৪ নয়, সম্ভবত ১৮৭১। তথ্যমূলক নানা প্রবন্ধ বেরিয়েছে ‘পুণ্য’-র পৃষ্ঠায়, কিন্তু স্ত্রী-শিক্ষা প্রভৃতি সম্পর্কে পত্রিকা যথেষ্ট রক্ষণশীল ছিল।

বাঁ দিক থেকে, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ও স্বর্ণকুমারী দেবী

বইটি জানায়, উনিশ শতক থেকে এ দেশে মহিলাদের সম্পাদনায় সাময়িক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে শুধু নয়, অনেক ক্ষেত্রে পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও তাঁরা গ্রহণ করেছেন। ব্যতিক্রমও অবশ্য ছিল। পিতা বা স্বামীর পরিকল্পনা ও পরামর্শে পত্রিকা প্রকাশে কেউ কেউ উদ্যোগী হয়েছেন, সহযোগী রূপে পাশে পেয়েছেন প্রেরণাদাতাদের। বিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত মহিলা-সম্পাদিত সাময়িকপত্রের আলোচনার বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রকে লেখক তিনটি অধ্যায়ে ভাগ করে নিয়েছেন: এক, ‘বিশ শতকের শুরু থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ’, দুই, ‘বিশ শতকের ষোলো বছর’, তিন, ‘স্বাধীনতার প্রাক্-লগ্ন’। তিন অধ্যায় মিলে বহু পত্রিকা-প্রসঙ্গ এসেছে, লেখক প্রথম অধ্যায়ের মতো একই পদ্ধতি অনুসরণে পত্রিকাগুলির পরিচয় দিয়েছেন, মূল্যায়ন করেছেন। পত্রিকা সম্পাদনায় উনিশ শতকের উত্তরাধিকার নিয়েই বিশের শুরু, পাশাপাশি নতুনেরও প্রবেশ। রচনাংশ যা উদ্ধৃত হয়েছে, তাতে বহু বৈচিত্রের স্বাদ। দেশকে ভালবাসার, দেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার, তার জন্য আত্মত্যাগের বার্তা অনেক পুরনো পত্রিকাতেও পাওয়া যাচ্ছিল, ক্রমে ‘ভারতী’-র মতো পত্রিকা রাজনৈতিক আলোচনাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আলোচনায় স্বাধীনতা আন্দোলন স্থান করে নিয়েছে, স্থান নিয়েছেন গাঁধীজি। ‘সুপ্রভাত’ যখন প্রকাশিত হল (প্রথম প্রকাশ শ্রাবণ ১৩১৪/১৯০৭), সম্পাদক কুমুদিনী মিত্রের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ উদ্দীপক কবিতা লিখে দিলেন ‘সুপ্রভাত’। সেবা ও সাধনা সমিতি দেশের মানুষকে খাঁটি স্বদেশি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করতে, শিক্ষায় স্বাবলম্বনে নারীজাতিকে আত্মপ্রতিষ্ঠিত করতে তন্নিষ্ঠ ছিল। এই সমিতির মাসিক মুখপত্র ‘সেবা ও সাধনা’-য় (প্রথম প্রকাশ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩০/১৯২৩) সম্পাদক ইন্দুনিভা দাস মেয়েদের উদ্দেশে কিছুটা অনুযোগের সুরে যা লিখেছিলেন, সেটা অভিনব: “হ্যাঁ গা দেশের মেয়েরা, তোমাদের কি ঠেলে ঠেলে জাগিয়ে রাখতে হবে? বছর কতক পূর্বে তোমরা গা ঝাড়া দিয়ে উঠলে, পথে পথে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ালে, পল্লীতে পল্লীতে সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা কর্লে, সংবাদপত্রের স্তম্ভে স্তম্ভে তোমাদের অভাব-অনুযোগ জানালে— তারপর আবার পাশ ফিরে শুয়েচ— কি ঘুম বাবু তোমাদের—”

‘শ্রমিক’ (প্রথম প্রকাশ সম্ভবত অক্টোবর ১৯২৪, সম্পাদক সন্তোষকুমারী দেবী) শ্রমজীবী মানুষের জন্য এবং তাঁদের কল্যাণে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। ১৯২১-২২ সালে কলকাতায় শ্রমিক আন্দোলনে ঝাঁপ দিয়ে পড়েছিলেন সন্তোষকুমারী দেবী। এর প্রায় সব সংখ্যাই নষ্ট হয়ে গেছে, শ্রমিকনেত্রী সন্তোষকুমারী গ্রন্থ থেকে এটির পরিচয় সংগ্রহ করা হয়েছে। এই গ্রন্থে এমন আরও একটি ব্যতিক্রমী পত্রিকার পরিচয় আছে, সেটি ‘আনন্দ সঙ্গীত পত্রিকা’, কিন্তু সেই পরিচয় বেশ অপ্রতুল। এও লক্ষ করা গেল, প্রজ্ঞাসুন্দরীর ব্যক্তিপরিচয়ে লেখিকা তবু একটু সবাক, কিন্তু তিনি ‘বালক’ পত্রিকার সম্পাদক জ্ঞানদানন্দিনী দেবী এবং ‘আনন্দ সঙ্গীত পত্রিকা’-র (প্রথম প্রকাশ শ্রাবণ ১৩২০/ ১৯১৩) দুই সম্পাদক প্রতিভাসুন্দরী ও ইন্দিরা দেবীর ক্ষেত্রে তাঁরা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সদস্যা এইটুকুই যথেষ্ট মনে করেছেন। অন্য প্রায় সব পত্রিকার ক্ষেত্রে সম্পাদকদের ব্যক্তিপরিচয় যথাযথ দেওয়া হয়েছে। আর ‘আনন্দ সঙ্গীত পত্রিকা’ পাঁচ-ছয় বছরে থেমে যায়নি। এটি দশম বর্ষ থেকে প্রতিভা দেবীর ভাই ঋতেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সারদা’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় (১৩৩১)। তা ছাড়া ৩১৮ পৃষ্ঠায় ‘আনন্দ সঙ্গীত পত্রিকা’র সম্পাদক কিরণময়ী সেনকে ক্ষিতিমোহন সেনের স্ত্রী লেখা হয়েছে, এ কোন ‘আনন্দ সঙ্গীত পত্রিকা’? আর ক্ষিতিমোহনের স্ত্রীর নাম কিরণবালা সেন। তিনি ছিলেন ‘শ্রেয়সী’-র সম্পাদক।

প্রতি অধ্যায়ের শুরুতে সেই কালসীমায় দেশবিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। হয়তো লেখক অধ্যায়ভিত্তিক একটি পশ্চাদপট গড়ে নিতে চেয়েছেন। কিন্তু সব তথ্যই যে মূল আলোচ্যের প্রেক্ষিতে সর্বদা প্রাসঙ্গিক, তা নয়। আলোচ্য বিষয়ের টীকা হিসেবে তার প্রাপ্তি পাঠকের পক্ষে আরও বেশি মূল্যবান হত। প্রয়োজন ছিল একটি নির্দেশিকারও।

অনেক পত্রিকার নাম শুনে মনে হয় কেবলমাত্র অন্তঃপুরিকাদের জন্যই সেগুলির প্রকাশ। লেখক বলেছেন, ‘কিন্তু দেশ-বিদেশের সংবাদ থেকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক চর্চায় পত্রিকাগুলির আগ্রহ ও উত্‌কর্ষ দেখে বলতে হয়, এরা মেয়েদের অন্তঃপুরকে মিশিয়ে দিয়েছিল বৃহত্তর জগতের সঙ্গে। প্রায় প্রতিটি পত্রিকাই বহুমুখীনতার পরিচয় দিয়েছিল চমত্‌কার ভাবে।’ সেই বহুমুখীনতার নানা দিকে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন লেখক।

pranati mukhopadhyay book review books gyanodanandini devi tagore swarnakumari devi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy