Advertisement
E-Paper

প্রতিবাদী চেতনায় প্রবীণ ও নবীনের ঐকতান

সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত ক্যালকাটা পেইন্টার্স-এর প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষ।ক্যালকাটা পেইনটার্স দলের ৫২-তম বার্ষিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে। দ’ুজন ভাস্কর সহ মাট ২২-জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় তৈরি হয়েছিল এই দল। ষাটের দশকের শিল্পকলার বিশেষ এক আদল গড়ে তুলেছিলেন এই দলের সংগঠক শিল্পীরা। তার পর থেকে বিগত ৫২ বছর ধরে জীবনে ও শিল্পে বহু পরিবর্তন এসেছে।

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০১:০০

ক্যালকাটা পেইনটার্স দলের ৫২-তম বার্ষিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে। দু’ জন ভাস্কর সহ মাট ২২-জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় তৈরি হয়েছিল এই দল। ষাটের দশকের শিল্পকলার বিশেষ এক আদল গড়ে তুলেছিলেন এই দলের সংগঠক শিল্পীরা। তার পর থেকে বিগত ৫২ বছর ধরে জীবনে ও শিল্পে বহু পরিবর্তন এসেছে। সেই পরিবর্তনের ছন্দে দলের প্রকাশভঙ্গিও পাল্টেছে। নতুন সদস্য এসেছেন। প্রবীণ ও নবীনের ঐকতান অনুভব করা যায় এখানকার প্রদর্শনীতে। যে আবেগ ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে শুরু হয়েছিল এই দল, তাকে নবীকৃত করে নিতে নিতে এতটা পথ সে অতিক্রম করেছে। কিছু ক্লান্তি ও গতানুগতিকতার ছাপ তার চলাকে যে ভারাক্রান্ত করেনি, এমন বলা যায় না। তবু দীর্ঘদিন ধরে এই সংঘবদ্ধ চলা গোষ্ঠীচেতনার এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে আছে। সেই ছায়া ও আলোর টানাপড়েনেই বিশেষ অভিঘাত সৃষ্টি করে আলোচ্য প্রদর্শনী।

বিপিন গোস্বামী তাঁর ব্রোঞ্জ-ভাস্কর্যে লৌকিক সারল্য ও রূপবন্ধের সমন্বয় ঘটান। প্রদর্শনীর দ্বিতীয় ভাস্কর অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রদীপ মণ্ডল। জঙ্গমতায় সংশ্লিষ্ট বিমূর্ত রূপচেতনার বিশেষ ধরণ তৈরি করেছেন তিনি তাঁর ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যগুলিতে। এই সন্ধানের সূচনা অবশ্য ষাটের দশকের শিল্পীদের হাতেই।

১৯৬০-এর দশকের প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে এই প্রদর্শনীতে রয়েছেন রবীন মণ্ডল, অমল চাকলাদার, যোগেন চৌধুরী, ধীরাজ চৌধুরী, শ্যামশ্রী বসু, ঈশা মহম্মদ, নিখিলেশ দাস, অনিতা রায়চৌধুরী ও বরুণ রায়। এদের অনেকেই শুরু থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত। রবীন মণ্ডলের দুটি ছবি ‘উওম্যান’ ‘ফেস’, আদিমতার আধুনিকীরণের দৃষ্টান্ত। নতুন কোনও পরিসর অবশ্য উন্মীলিত হয়নি। একই কথা বলা যায় যোগেন চৌধুরীর ছবি সম্পর্কেও। তাঁর শায়িত পুরুষ মুখটির ভিতর সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের সংকট আভাসিত। অমল চাকলাদারের তিনটি ছবি ‘ফাইটিং বার্ড’, ‘মর্নিং কক’‘টেমিং দ্য সারপেন্ট’ ষাটের শিল্পীদের শ্রেষ্ঠ ছবিগুলির অন্যতম। নব্য-ভারতীয় ঘরানার ধারায় তিনি কাজ করে আসছেন দীর্ঘদিন। তারই নিদর্শন এই তিনটি ছবি। অনিতা রায়চৌধুরী ও শ্যামশ্রী বসু নিসর্গকে দু’ ভাবে বিমূর্তায়িত করেছেন। অনিতার ছবিতে ঐতিহ্য-সম্পৃক্ততা থাকে। শ্যামাশ্রী জোর দেন অভিব্যক্তিবাদী বিমূর্তায়নে। কিন্তু প্রবহমান বাস্তবতা দু’ জনের ছবিরই উত্‌স। ঈশা মহম্মদ স্বাভাবিকতাতে সংশ্লিষ্ট থেকেও প্রতিবাদী-চেতনায় অভিষিক্ত করেন। ধীরাজ চৌধুরী রূপকে বিশ্লিষ্ট করে সংকটের স্বরূপ বিশ্লিষ্ট করতে চান।

১৯৭০-এর দশকে প্রতিষ্ঠা পাওয়া শিল্পীদের মধ্যে প্রদর্শনীতে রয়েছেন অনিমেষ নন্দী, তপন ষোষ, দেবব্রত চক্রবর্তী ও দ্বিজেন গুপ্ত। অনিমেষ নন্দীর ‘জার্নি’ চিত্রমালার ছবিটি স্বাভাবিকতার সঙ্গে কল্পরূপাত্মক অনুষঙ্গের মেলবন্ধনের অসামান্য দৃষ্টান্ত। উদিত-সূর্যের আলোকিত বিভায় ধ্যানমগ্ন মানবিক অস্তিত্বকে তিনি উদ্ভাসিত করতে চেয়েছেন। তপন ঘোষের দুটি ছবির শিরোনাম ‘সুন্দরী’, তৃতীয়টির ‘ডায়লগ’। স্বাভাবিকতার সঙ্গে লৌকিক অনুষঙ্গকে মিলিয়েছেন তিনি। ‘ওয়ারিয়র’ শীর্ষক দুটি ছবিতে দেবব্রত চক্রবর্তী সংঘাতের দুই রূপ উন্মীলিত করতে চেয়েছেন। তপন ঘোষের দুটি ছবির শিরোনাম ‘শ্যাডো সিম্ফনি’‘ভয়েড অব রিমেম্ব্রেন্স’। মানবী অস্তিত্বের নিহিত করুণা ও উজ্জীবনের স্বপ্নকে উদ্ভাসিত করেছেন তিনি।

আশির দশকের শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন ওয়াসিম কপূর, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুশান্ত চক্রবর্তী। ওয়াসিমের ছবিতে কাঁটায় আবৃত যিশুর মুখ অন্ধকারের উত্‌স হতে উত্‌সারিত আলোয় দীপ্ত। সুদীপের ছবি ‘বিউটি অব সাইলেন্স’। পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন শুভব্রত নন্দী, গৌতম ভৌমিক ও সুব্রত ঘোষ। বিশ্বায়ন ও বানিজ্যিকতায় ভাঙছে শহরের মুখ। এই সংকট নিয়ে শুভব্রতর ছবি। অভিব্যক্তিবাদী রীতিতে তৈরি করেছেন গৌতম। ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিকের গভীর বিশ্লেষণ করেছেন সুব্রত ঘোষ।

art exhibition mrinal ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy