Advertisement
E-Paper

লোক-ঐতিহ্যের সন্ধানে তীর্থযাত্রা

বছর কয়েক আগে আনা ডালাপিকোলা-র সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল একটি কৌতূহল-জাগানো বই, ইন্ডিয়ান পেন্টিং/ দ্য লেসার-নোন ট্র্যাডিশনস (নিয়োগী বুকস)। সেখানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের দেশজ চিত্রকলার বিচিত্র সব নমুনা ছিল। সংগ্রহশালার নিদর্শনের পাশাপাশি ছিল পরম্পরাবাহিত সজীব শিল্পধারার কথা।

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১

বছর কয়েক আগে আনা ডালাপিকোলা-র সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল একটি কৌতূহল-জাগানো বই, ইন্ডিয়ান পেন্টিং/ দ্য লেসার-নোন ট্র্যাডিশনস (নিয়োগী বুকস)। সেখানে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের দেশজ চিত্রকলার বিচিত্র সব নমুনা ছিল। সংগ্রহশালার নিদর্শনের পাশাপাশি ছিল পরম্পরাবাহিত সজীব শিল্পধারার কথা। এই সব প্রান্তিক শৈলীর দিকে সম্প্রতি গবেষকদের নজর পড়ছে। ‘কাবড়’ নিয়ে চমত্‌কার বই লিখেছেন নিনা সাবনানি (কাবড় ট্র্যাডিশন অফ রাজস্থান/ আ পোর্টেবল পিলগ্রিমেজ, নিয়োগী বুকস, ১৪৯৫.০০)। কাঠপুতলি কি জড়ানো পটের মতো ‘কাবড়’ও কথকদের গল্প-বলার অন্যতম উপকরণ, কিন্তু চরিত্রে বিশিষ্ট। মাড়োয়ারের কথকদের (কাবড়িয়া ভাট) জন্য মেবারের সূত্রধররা কাঠের ছোট মন্দিরের আকারে ‘কাবড়’ তৈরি করেন, এর পরম্পরা শ’চারেক বছরের। সর্বাঙ্গে চিত্রিত এ মন্দিরের পাল্লায় অনেক ভাঁজ, গল্পের পরতে পরতে যা খুলতে থাকেন কথক। চলতি কথায় এর নাম ‘চল্‌তা ফিরতা মন্দির’— কথকরা লাল কাপড়ে মোড়া ‘কাবড়’ নিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রাম-গ্রামান্তরে। ‘কাবড়’ একটু একটু করে দেখা আর বংশগৌরবের কথা শোনা তো আসলে ‘তীর্থযাত্রা’রই শামিল। নিনা-র বইয়ে আছে শিল্প ও শিল্পীদের কথা, সঙ্গে কথকদের ইতিবৃত্ত, কাহিনি-বিশ্লেষণ। লোক-ঐতিহ্যের অনুসন্ধানে এও এক তীর্থযাত্রা।

রাজস্থানেরই আর এক ঐতিহ্যময় শিল্পধারা ‘পিছোয়াই’। আওরঙ্গজেবের ভয়ে ১৬৭০ সালে বৃন্দাবন থেকে গোবর্ধননাথজিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রাজস্থানের নাথদোয়ারা-য়, মেবারের রাজার নিরাপদ আশ্রয়ে। বিগ্রহ চিহ্নিত হন ‘শ্রীনাথজি’ নামে। গিরিগোবর্ধনধারী কৃষ্ণের সেই রূপই মূলত ‘পিছোয়াই’-এ চিত্রিত হয়। বিগ্রহের পিছনে টাঙানোর জন্যই নাম ‘পিছোয়াই’, বল্লভ সম্প্রদায়ের মন্দিরেই এর ব্যবহার। ১৯৭৩-এ রবার্ট স্কেলটন থেকে অমিত অম্বালাল, ট্রাইনা লিয়ন্স থেকে কল্যাণ কৃষ্ণ ও কে তলওয়ার, ‘পিছোয়াই’ নিয়ে অনেকেই আলোচনা করেছেন। এ বার আমদাবাদের ক্যালিকো মিউজিয়াম অফ টেক্সটাইলস ও সরাভাই ফাউন্ডেশনের সংগ্রহে রক্ষিত দুর্লভ ‘পিছোয়াই’গুলি প্রকাশ্যে আনলেন বি এন গোস্বামী ও করুণা গোস্বামী (ওয়ানড্রাস ইমেজেস/ কৃষ্ণ সিন অ্যাজ শ্রীনাথজি, সরাভাই ফাউন্ডেশন, মূল্য অনুল্লেখিত)। আঠেরো শতক থেকে উনিশ শতক জুড়ে আঁকা শতাধিক ‘পিছোয়াই’-এর সচিত্র বিবরণের সঙ্গে আছে বল্লভ সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও এই শিল্পধারার সৃষ্টি-পুষ্টির কথা।

হায়দরাবাদের ‘জগদীশ অ্যান্ড কমলা মিত্তল মিউজিয়াম অফ ইন্ডিয়ান আর্ট’ ভারতীয় শিল্পকলার সুপরিচিত সংগ্রহ। এই সংগ্রহশালা থেকেই প্রকাশিত হয়েছে জগদীশ মিত্তলের ডেকানি স্ক্রোল পেন্টিংস (৩৫০০.০০)। এত অসাধারণ গ্রন্থনির্মাণ এ দেশে দুর্লভ। বিষয়টিও অনন্য, তেলঙ্গনার জড়ানো পটের এই ঐতিহ্য এর আগে এ ভাবে চোখের সামনে আসেনি। ১৯৬০-এর দশকে জগদীশ মিত্তল প্রথম এই পটের সন্ধান পান। বোঝা যায়, অন্তত ১৭ শতকের গোড়া থেকেই তেলঙ্গনা অঞ্চলে এই পট আঁকা হচ্ছিল। পটের বিষয় হিন্দু পুরাণের কাহিনি নয়, স্থানীয় লোককথা। দক্ষিণী চিত্রকলার ইতিহাসে শৈলীগত বিশিষ্টতা ছাড়াও এই পটের চরিত্র ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের পট থেকে আলাদা। ৩০-৪৫ ফিট লম্বা আর ৩০-৪৫ ইঞ্চি চওড়া এই পট গ্রামের মধ্যে বাঁশের ফ্রেম থেকে ঝুলিয়ে অল্প অল্প করে দেখিয়ে গল্প বলেন কথক। অন্তত চার রাত্রি চলে এই কথকতা। শিল্পীরা অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ, কথকের নির্দেশে তাঁরা পট এঁকে দেন। সংগ্রহশালায় রক্ষিত দুর্লভ পটগুলির অজস্র ছবি সহ বিষয়টি সবিস্তারে আলোচনা করেছেন জগদীশ মিত্তল। দেশজ চিত্রধারার এই অনন্য নিদর্শনের দিকে সযত্নে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।

folk tradition book review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy