Advertisement
E-Paper

শিল্পের বিবর্তন ও দায়বদ্ধতায় সমবেত প্রয়াস

অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল ‘দ্য ফ্রেম’ এর সম্মেলক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ।দ্য ফ্রেম দলটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। সমবেত ভাবে সৃষ্টিমগ্ন থাকা এবং ভাল করে কাজ করে যাওয়ার প্রয়াস ছাড়া তাঁদের ঘোষিত কোনও লক্ষ্য বা ইস্তাহার কিছু ছিল না। তবে যৌথতার বা ঐক্যবদ্ধতার নিজস্ব একটা শক্তি থাকে। শিল্পভাবনাকেও তা প্রভাবিত করে। সেই প্রেরণাতেই বিগত ২০ বছর ধরে নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিল্প-নান্দনিক বিবর্তনের মধ্যে এই দলের শিল্পীরা নিজস্ব লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন।

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০০

দ্য ফ্রেম দলটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। সমবেত ভাবে সৃষ্টিমগ্ন থাকা এবং ভাল করে কাজ করে যাওয়ার প্রয়াস ছাড়া তাঁদের ঘোষিত কোনও লক্ষ্য বা ইস্তাহার কিছু ছিল না। তবে যৌথতার বা ঐক্যবদ্ধতার নিজস্ব একটা শক্তি থাকে। শিল্পভাবনাকেও তা প্রভাবিত করে। সেই প্রেরণাতেই বিগত ২০ বছর ধরে নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিল্প-নান্দনিক বিবর্তনের মধ্যে এই দলের শিল্পীরা নিজস্ব লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল তাঁদের সম্মেলক প্রদর্শনী। ন’জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ভাস্কর। দুটি প্রবণতা প্রদর্শনীটিকে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। একটি, সাম্প্রতিকের আলোতে ঐতিহ্যের নতুন মূল্যায়ন প্রয়াস। দ্বিতীয়টি, আধুনিকতাবাদী আঙ্গিকের নিবিড় বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে সমকালীন বাস্তবতার বিপর্যস্ততার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভাষ্য গড়ে তোলা। প্রত্যেকেই নিজস্ব ভাবনা ও আঙ্গিকের প্রতি দায়বদ্ধ থেকেছেন।

সুমিতাভ পাল তাঁর আটটি ভাস্কর্যে মূর্ত ও বিমূর্তের মধ্যে দ্বান্দ্বিক সমন্বয় তৈরি করেছেন। এই দ্বান্দ্বিকতা এসেছে বিশুদ্ধ রূপের আধ্যাত্মিক নৈর্ব্যক্তিকতা ও সমাজ-সংঘাতের নাটকীয়তার মধ্যেও। মার্বলের মসৃণ তলবিন্যাসে স্ফীত আয়তনময়তা বাঙ্ময় হয়ে ওঠে যেন একটি প্রদীপের স্পর্শে। আবার ‘২৬/১১’ ব্রোঞ্জের রচনায় স্ফীত হাত থেকে যখন রক্ত ঝরে পড়ে, তখন এক সংক্ষুব্ধ নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়।

সৌমিত্র কর দীর্ঘদিন দেশগত ঐতিহ্যকে আধুনিকতায় উন্মীলিত করতে সচেষ্ট রয়েছেন। তাঁর এবারের চারটি টেম্পারার ছবির শিরোনাম ‘ভোর’, ‘সন্ধ্যা’, ‘দিন’‘রাত্রি’। প্রেক্ষাপটে গভীর বর্ণের সমতল বিস্তার, যেন অপার এক সমুদ্র বা মহাকাশ-সম নৈঃশব্দ। তার ভিতর নানা পুরাণকল্পমূলক প্রতীক এবং বর্ণিল বৃত্তে জীবনের জঙ্গমতা। বিমূর্ত সময়ের মূর্ত প্রকাশ।

বিশ্বজিৎ সাহা সফ্ট-প্যাস্টেলে করা ‘পাওয়ার’ শীর্ষক তিনটি রচনায় তাঁর দীর্ঘদিন চর্চিত ঐতিহ্যগত আঙ্গিককে রূপান্তরিত করে আজকের ক্ষমতার আস্ফালনের অবয়বী ভাষ্য তৈরি করেছেন সংহত প্রতিমায়।

ঐতিহ্যগত আঙ্গিকে অলঙ্করণময় সাদা-কালো রূপারোপকে রূপান্তরিত করে অরুণাংশু রায় এবারে এসেছেন বর্ণিল নাটকীয়তায়। তিনটি অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসে কৌতুকদীপ্ত ভাবে তিনি সমাজসংকটের নানা দিক তুলে ধরেছেন। খুবই সংহত ও স্বাতন্ত্র্যময় তাঁর রচনা।

প্রাণগোপাল ঘোষ নিরন্তর যে নিসর্গ আঁকেন, তাতে ঐতিহ্যই প্রতিচ্ছায়াবাদী আঙ্গিকে উদ্ভাসিত হয়। তিনটি রচনা তাঁর ‘গার্ডেন’ চিত্রমালার অন্তর্গত। প্রস্ফুটিত সাদা ফুলের রচনাটিতে তিনি অসামান্য লাবণ্য সঞ্চার করেছেন। দেবাশিস সামন্তর অস্বচ্ছ জলরঙের তিনটি রচনাও ঐতিহ্য ও প্রতিচ্ছায়াবাদী আধুনিকতার সমন্বয়ের দৃষ্টান্ত। ‘হোপ অব লিভিং’ রচনায় প্রকৃতির সুষমাকে মেলে ধরতে চেষ্টা করেছেন।

বিভূতি চক্রবর্তী অনেকটা কার্টুনের মতো কৌতুকদীপ্ত রূপবিন্যাস করেছেন। আঙ্গিক নিয়ে তিনি নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যান।

এই প্রদর্শনীর যে প্রচলিত ধারা, দু’জন শিল্পী তা থেকে একটু ভিন্ন চিন্তা ও ভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করেছেন। তাঁরা হলেন সন্ধ্যাকর কয়াল ও রবীন রায়। পরিবৃত সমাজসংকটকে দু’জনেই তীব্রভাবে প্রত্যাঘাত করেছেন। আবার দু’জনের মধ্যে ব্যবধানও অনেকটা।

সন্ধ্যাকর কয়াল শব্দের ভাষার সঙ্গে চিত্রের ভাষাকে মিলিয়েছেন। তীব্র ব্যঙ্গাত্মক শব্দ-আলেখ্য। একটি ছবিতে তাঁর লেখার শিরোনাম ‘ঠাঁই-নাড়া পট’। অভিবাসন ও গৃহহারা মানুষের গভীর সংকটকে তিনি রূপ দিয়েছেন দীর্ঘ লেখার সঙ্গে কার্টুনধর্মী ছবিতে। আর একটি ছবিতে বলেছেন ‘আর্ট নয় আমরা ফার্ট করি’। এই ‘ফার্ট’ দিয়ে তিনি প্রচলিত মূল্যবোধকে কশাঘাত করেছেন।

রবীন রায় দারিদ্র, হিংসা, সন্ত্রাস ও মৃত্যুর পরিমণ্ডলকে রূপায়িত করেছেন। চারটি ছবিতে শুভ্র প্রেক্ষাপটে সন্নিবিষ্ট হয়েছে কোলাজধর্মী নানা প্রতিমাকল্প। ‘লাইফ উইথ আ স্কাল’ ছবিতে একটি করোটিকে ঘিরে যে তীব্র নাটকীয়তা, তা পরিবৃত শূন্যতাকে আলোড়িত করে তোলে। বিপন্নতার মধ্যে এক সংক্ষুব্ধ শক্তির প্রকাশ আছে তাঁর প্রতিটি রচনায়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy