Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Poila Baishak

হাসিনার না, তবু আগুনে-ইলিশের দিকে চোখ নববর্ষে

সবার কাছে ইলিশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগটা নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, বেড়ে গিয়েছে ইলিশের দাম। ফলে ঢাকার ইলিশের বাজারে আগুন জ্বলছে।

বাঙালির অতি প্রিয় সর্ষে ইলিশ ভাপা।

বাঙালির অতি প্রিয় সর্ষে ইলিশ ভাপা।

অঞ্জন রায়
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:০০
Share: Save:

প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে ইলিশ খেতে নিষেধ করে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর যুক্তি, এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ে। আর বাঙালির ঐতিহ্যের কোথাও পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার রীতি নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা? পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ এখন রীতিমতো নিয়মেই পরিণত হয়েছে।

সবার কাছে ইলিশের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সুযোগটা নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, বেড়ে গিয়েছে ইলিশের দাম। ফলে ঢাকার ইলিশের বাজারে আগুন জ্বলছে। বাংলাদেশের, বাংলা বর্ষবরণে পান্তার সঙ্গে ইলিশের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ইলিশ নিতান্তই হালের রীতি। ছোট হোক বড় হোক, তবুও বছরের প্রথম দিন ইলিশ পাতে চাই। এমনটিই যেন এক সাধারণ চাহিদাতে পরিণত হয়েছে।

আবহমানকাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনে মেলা, হালখাতা-সহ নানা আয়োজন ছিল। বাংলা বছরের প্রথম দিনে গ্রাম-শহরের প্রতিটি ঘরে ভাল খাবারের আয়োজনই ছিল বৈশাখ বরণের অনুষঙ্গ। তবে পান্তা কিংবা ইলিশ কখনওই পহেলা বৈশাখের অনুষঙ্গ ছিল না।

নব্বুইয়ের দশকের শেষের দিকে রাজধানীতে নাগরিক আয়োজনে পহেলা বৈশাখের প্রচলন হলে সে সময় ইলিশ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার রীতি চালু হয়। দ্রুতই পান্তা-ইলিশ পহেলা বৈশাখ পালনের অংশে পরিণত হয়েছে।

বছরের এই সময়টাতে, অর্থাৎ বৈশাখ মাসেই খোকা ইলিশের নদী থেকে সাগরে ফিরে যাওয়ার সময়। আর সেই কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশ সরকার এই সময়ে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করে আসছে। তবুও পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার প্রচলন ঘটার কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জাটকা ইলিশ নদী ও সাগরে ধরা হয় চোরাই পথে। সরকারি ভাবে বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করা হলেও এবং বিভিন্ন ভাবে জেল-জরিমানার ব্যবস্থা থাকলেও পুরোপুরি আটকানো যায় না ইলিশ শিকার।

বাজারে আগুন দামে বিকোচ্ছে ইলিশ।

অন্য দিকে, মজুদ করা ইলিশের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে দাম বাড়িয়ে সুযোগ লুফে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়াকে বরাবরই নিরুৎসাহিত করা দরকার। হাসিনা নিজেও এই দিনে ইলিশ না খেতে এর আগেই আহ্বান জানিয়েছেন।

চৈত্র প্রায় শেষ। বৈশাখ শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি। বৈশাখ বরণে ইলিশ কোনও অনুষঙ্গ না হলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে ইলিশের দাম। ঢাকার কয়েকটি মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেল, ইলিশের দামে ঊর্ধ্বগতি।

ঢাকার পাইকারি মাছের বাজারের জন্য বিখ্যাত কারওয়ান বাজার। এ বাজারে গত সপ্তাহে ৩০০ গ্রাম ওজনের চারটি (হালি) ইলিশের মোট দাম ছিল ৫০০ টাকা। চলতি সপ্তাহে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ টাকায়। অন্য দিকে, ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকায়, কিন্তু সেই মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়।

ঢাকার শান্তিনগর কাঁচা বাজারে ৩০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের প্রতি হালি (চারটি ইলিশ) বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। ৫০০ গ্রাম সাইজের একটি ইলিশের দাম এক হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। মালিবাগ বাজারে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ থেকে ১৮৫০ টাকা পর্যন্ত। রামপুরা বাজারে ৩০০ গ্রাম ইলিশের প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০৫০ টাকায়। আর এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়।

অবশ্য গত কয়েক বছরের টানা প্রচারে কিছুটা কমেছে বছরের প্রথম দিনে ইলিশ পাতে টানার ঝোঁক। আর সে কারণেই ভরা মরশুমে বাংলাদেশের বাজারে ইলিশ পাওয়া গিয়েছে তুলনায় বেশি, কমেছে দাম। সে কারণেই গত কয়েক বছর ইলিশ ছিল সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE