Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বসিরহাটে খুনের অভিযোগে ধৃত স্ত্রী

পাশে ঘুমিয়ে মেয়ে, দেহ উদ্ধার বাবার

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে বসিরহাটের দিঘিরপাড়ের মেয়ে শিল্পার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কমলের। ওই যুবক কর্মসূত্রে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। দিন কুড়ি আগে তাঁর মা মারা গিয়েছেন। সেই সূত্রেই ফিরেছিলেন বাড়িতে।

বাঁ দিকে, কমল দেবনাথ। ডান দিকে, তাঁর স্ত্রী শিল্পা। নিজস্ব চিত্র

বাঁ দিকে, কমল দেবনাথ। ডান দিকে, তাঁর স্ত্রী শিল্পা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৩৩
Share: Save:

মাদুরের উপরে ঘুমিয়ে তিন বছরের মেয়ে। পাশে তার বাবা। মাঝরাতে সেখানেই জেগে বসে মেয়ের মা। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে আত্মীয়েরা দেখেন, গৃহকর্তার দেহে প্রাণ নেই। নাকে-মুখে রক্ত।অনুমান, স্ত্রী-ই শ্বাসরোধ করে খুন করেছে কমল দেবনাথ (৩২) নামে ওই যুবককে। গ্রেফতার করা হয়েছে স্ত্রী শিল্পাকে।

বৃহস্পতিবার রাতে বসিরহাটের স্মৃতিসঙ্ঘ পাড়ার ঘটনা। দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তে। শুক্রবার শিল্পাকে বসিরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৩ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে বসিরহাটের দিঘিরপাড়ের মেয়ে শিল্পার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল কমলের। ওই যুবক কর্মসূত্রে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। দিন কুড়ি আগে তাঁর মা মারা গিয়েছেন। সেই সূত্রেই ফিরেছিলেন বাড়িতে।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী ও মেয়ে কৌশানীকে নিয়ে কমল নিজেদের মুদির দোকান ঘরে শুয়েছিলেন। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ শিল্পার দাদা ফোন করেন কমলের বাবা চিন্ময়কে। বলেন, তাঁর কাছে ফোনে খবর এসেছে, শিল্পা খুন করেছে কমলকে।

চিন্ময়রা ছুটে যান দোকান ঘরে। দেখেন, শিল্পা মাদুরের উপরে বসে। পাশে কমল ও মেয়ে ঘুমোচ্ছে। চিন্ময়রা পুলিশকে জানিয়েছেন, সকলকে অত রাতে হঠাৎ ঘরে ঢুকতে দেখে হকচকিয়ে যান শিল্পা। বলেন, ‘‘তোমরা কেন এসেছো? কমল তো ঘুমোচ্ছে।’’

এ কথায় সন্দেহ আরও বাড়ে। কমলের ভাই কল্লোল দাদার গায়ে হাত দিয়ে দেখেন, গা ঠান্ডা। একটু ধাক্কা দিতেই নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। তাঁরা জানিয়েছেন, কমলের গায়ে এক টুকরো কাপড় আলগোছে ফেলা ছিল।

খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। কমলকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। কমলের পরিবারের অনুমান, খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত। সব দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কে ফোন করে খুনের খবর দিয়েছিল শিল্পার দাদাকে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে নেমে স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাসখানেক আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান শিল্পা। অভিযোগ হয় থানায়। সপ্তাহ দু’য়েক পরে পুলিশ শিল্পা ও তাঁর প্রেমিককে গ্রেফতার করে। বিয়ের আগে থেকেই ওই যুবকের সঙ্গে শিল্পার সম্পর্ক ছিল। বিয়ের আগে দু’বার বাড়ি থেকে পালিয়েছিলেন তরুণী। এমনকী, বিয়ের দিনও বাড়ি ছাড়েন। কোনও মতে খুঁজে এনে তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়েছিল বাড়ির লোক।

সে সব কথা জানা ছিল না কমলের। পরে সব শুনে কমল ও তাঁর পরিবার হতভম্ব। কমলের আত্মীয়েরা জানিয়েছেন, জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরে শিল্পা কথা দিয়েছিলেন, সংসারে মন দেবেন। কিছু দিন সব ঠিকঠাকই চলছিল। তারপরেই এই কাণ্ড।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, গ্রেফতার হওয়ার পরেও বিশেষ হেলদোল নেই ওই তরুণীর। পুলিশের অনুমান, শিল্পার দাদা বাপনকে তার প্রেমিকই ফোনে খবর দিয়েছিল। শিল্পার দাদা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই যুবক ফোনে বলে, বোন তাকে ফোন করে জানিয়েছে, সে কমলকে মেরে ফেলেছে। এই দাবি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE