সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটে। সন্ধ্যে নামতেই আঁধার ঘনাতো রোগীর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনের মুখে। কারণ শহরে নামেই রয়েছে ব্লাডব্যাঙ্ক। তার দরজায় যে তালা। ফলে রাতবিরেতে রক্তের দরকার পড়লে ছুটতে হবে শক্তিনগর কিংবা কালনা।
২০১৫ সালের ১৪ আগস্ট চালু হওয়ার পর থেকে এত দিন পর্যন্ত নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে কেবল ওইটুকু সময়েই মিলত রক্ত। কিন্তু সময়ের হিসেব মেনে তো আর রক্তের প্রয়োজন হয় না। ফলে ঘড়ির কাঁটা চারটে পেরিয়ে গেলেই বিপদ। বিশেষ করে রাতের দিকে রক্তের দরকার হলে সেই আগের মতোই রোগীর বাড়ির লোককে ছুটতে হতো অন্য কোথাও। বারেবারেই প্রশ্ন উঠত, তা হলে এত ঘটা করে ব্লাডব্যাঙ্ক চালু করে কী লাভ হল?
ক্ষোভ হবে না-ই বা কেন? মাস খানেক আগের কথা। নবদ্বীপ রানিরচরার বাসিন্দা সঞ্জয় রায়ের মা দুপুর বেলায় অসহ্য পেটের যন্ত্রনা
নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন নবদ্বীপ হাসপাতালে। ডাক্তারবাবু দেখে যখন অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিলেন, তত ক্ষণে বিকেল চারটে বেজে গিয়েছে। বিরাট তালা ঝুলছে ব্লাডব্যাঙ্কের দরজায়। শেষ পর্যন্ত মায়ের অস্ত্রোপচারের জন্য রক্ত জোগাড় করতে সঞ্জয়বাবুকে সেই রাতেই কালনা ছুটতে হয়েছিল।
প্রাচীন মায়াপুরের গোবিন্দ নাথের অভিজ্ঞতা আরও করুণ। ডিসেম্বরের এক রাতে সন্তান প্রসবের জন্য ‘সিজার’ করার পর কিছুতেই রক্ত বন্ধ হচ্ছিল না গোবিন্দবাবুর স্ত্রীর। তাঁকে যখন রক্তের কথা বলা হয়, তখন বেশ রাত। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে রক্ত আনতে মাঝরাত গড়িয়ে গিয়েছিল। এমন ভুক্তভোগীর তালিকা দীর্ঘ।
শেষতক প্রায় আড়াই বছরের মাথায় চব্বিশ ঘণ্টার জন্য চালু হল নবদ্বীপ ব্লাডব্যাঙ্ক। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার বাপ্পা ঢালি জানান, গত ১৫ মার্চ, বুধবার থেকে চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকছে ব্লাডব্যাঙ্ক। ফলে উপকৃত হবে নবদ্বীপ পুরএলাকা, নবদ্বীপ ব্লক এবং সংলগ্ন বর্ধমান জেলার বিস্তীর্ণ অংশের কয়েক লক্ষ মানুষ।
এক সময়ে নবদ্বীপ হাসপাতালের রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে ছুটতে হতো বাইশ কিলোমিটার দূরের শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল বা অন্য কোথাও। ২০১৫ সালে ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু হওয়ার পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, এ বার বোধ হয় সমস্যা মিটল। কিন্তু ‘দশটা-চারটের’ ব্লাডব্যাঙ্ক মানুষের সে আশা পূরণ করতে পারেনি।
কিন্তু ব্লাডব্যাঙ্ক হয়েও কেন এত দিন দশটা থেকে চারটে পর্যন্ত খোলা থাকত?
উত্তরে নবদ্বীপ হাসপাতালের সুপার বাপ্পা ঢালি বলেন, “কর্মীর অভাবেই এত দিন আংশিক চলছিল ব্লাডব্যাঙ্কটি। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বেশ কয়েক জন কর্মী কাজে যোগ দিয়েছেন। আমরাও তাই সারা ক্ষণের জন্য ব্লাডব্যাঙ্ক চালু করে দিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy