Advertisement
E-Paper

এ যে মেমসাহেব গো, মহুয়া প্রার্থী শুনে বলছে করিমপুর

ভ্রূ ঢাকা রোদ চশমা, মাঝারি বাঙালি উচ্চতায় কুণ্ঠিত হয়ে আধ ইঞ্চি হিলের দিকে ঝুঁকে পড়ার তোয়াক্কা নেই। তবে, সরু পাড় সাদা শাড়ির পাট-ভঙ্গি ধরিয়ে দিচ্ছে— এ মেয়ে বিদিশি ধুলোয় পথ হেঁটেছে বিস্তর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:২২
নজরে করিমপুর। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে মহুয়া মৈত্র।—ফাইল চিত্র

নজরে করিমপুর। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে মহুয়া মৈত্র।—ফাইল চিত্র

ভ্রূ ঢাকা রোদ চশমা, মাঝারি বাঙালি উচ্চতায় কুণ্ঠিত হয়ে আধ ইঞ্চি হিলের দিকে ঝুঁকে পড়ার তোয়াক্কা নেই। তবে, সরু পাড় সাদা শাড়ির পাট-ভঙ্গি ধরিয়ে দিচ্ছে— এ মেয়ে বিদিশি ধুলোয় পথ হেঁটেছে বিস্তর।

মহুয়া মৈত্র, সদ্য ঘোষিত করিমপুরের তৃণমূল প্রার্থী।

বছর সাতেক আগে, রাহুল গাঁধীর ডাক দিয়েছিলেন— ‘আম আদমি কা সিপাহী’র। জেপি মরগ্যানের লাখ টাকার চাকরি হেলায় উড়িয়ে নিউইয়র্কের কেনেডি বিমানবন্দর থেকে সটান দিল্লি পাড়ি দেওয়ার মহুয়ার সেই গল্প কংগ্রেস কর্মীদের মুখে এখনও ফেরে। বছর কয়েকের মধ্যে ঘোর রাহুল-ঘনিষ্ঠ হয়েও তেমনই ফুৎকারেই তিনি উড়ে এসেছিলেন কলকাতায়। কেন?

বছর চারেক আগে পালাবদলের ঢেউয়ে ভাসতে থাকা তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে দাঁড়িয়েও অনভ্যস্থ বাংলায় মহুয়া জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি ডিভোটি, বাংলার জন্য কিছু করতে চাই বলেই কলকাতায় এসেছি।’’

কদাচিৎ মিছিলে হাঁটা, গ্রাম বাংলাতেও বার কয়েক— সেই এক রোদ চশমা, সাদা, প্রায় নিভাঁজ শাড়ি আর নম্র একটা টিপ, ব্যাস। দিনভর, বিন বিন করা নেতা-কর্মীদের ভিড়ে তিনি নেই, মিটিং- মিছিলেও না, দলনেত্রীর পাশে পাশে বার কয়েক হাঁটা ছাড়াও তৃণমূল ভবনের আশপাশে দেখা নেই, দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষতক মাস কয়েক ধরেই প্রায় নেই হয়েই তিনি রয়েছেন ‘সুদূর কোন বিদেশে’। এমনই জানাচ্ছেন, দলের এক তাবড় নেতা।

সেই মহুয়ার নামই কিনা করিমপুরের মতো প্রায়-হারা আসনে? হ্যাঁ, নদিয়ার করিমপুর আসনটিকে এ বাবেই দেখছেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরাও। তাহলে সেই অনিশ্চিত আসনে কেন ঠেলে দেওয়া হল মহুয়াকে?

কংগ্রেসের এক জেলা নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন— ‘‘রাজনীতির হাতেখড়ির সময়ে, আম আদমির সেপাই হয়ে মহুয়া বেশ কিছু দিন কাটিয়েছিলেন কৃষ্ণনগরে। সেই সময়ে বার কয়েক যে করিমপুরের সীমান্ত এলাকায় যাননি এমন নয়। হয়তো সেই সূত্রেই করিমপুরের জন্য তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’

তবে বার কয়েক নদিয়ার সীমান্ত গাঁ-গঞ্জ ঘুরে কি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যায়? পালাবদলের মুখে তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছিল মুর্শিদাবাদের জলঙ্গিতে। রাজি হননি তিনি। নাম বদল করে সেখানে ইদ্রিশ আলিকে প্রার্তী করায় গো-হারা হেরেছিলেন ইদ্রিশ।

তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা মুচকি হাসছেন, ‘‘আসলে নেত্রী ওঁকে (মহুয়া) ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। জিতলে ভাল, না জিতলে আরও ভাল!’’ তিনি যে মহুয়ার উপরে বিরক্ত, দিন কয়েক আগে সে কথা ঘনিষ্ঠদের কাছে জানিয়েও দিয়েছেন মমতা—‘ও কোথায়, ওকে তো দেখিই না!’ তা সেই মেয়েকে হঠাৎ করিমপুরে নিয়ে গিয়ে ফেললেন কেন নেত্রী, জল্পনা এখন তা নিয়েই। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাঁকে চেনেন না। ছবি দেখে তাঁদেরই এক জন বলছেন, ‘‘এ তো মেমসাহেব, করিমপুরে মানাবে তো!’’

ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে মহুয়ার সিভি অন্তত সে কথাই বলছে— মার্কিন মুলুকের ম্যাসাচুসেটস’র হলিওক কলেজ থেকে অর্থনীতি এবং অঙ্ক নিয়ে পঠন শেষ করে মহুয়া তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিং-এ।

যোগ দিয়েছিলেন বহুজাতিক সংস্থা জেপি মপগ্যান-এ। ২০০৯ সালে জেপি মরগ্যানের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে ‘দেশের উন্নয়নে শরিক হতে’ তাঁর দিল্লি উড়ে আসা। কলকাতা তথাপি তৃণমূল পর্ব, রাজ্য়ে পালাবদলের পরে। দলে যোগ দেওয়ার পর উত্তরবঙ্গে কোচবিহারের প্রান্তিক গ্রাম থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের জল-জঙ্গলে, গ্রামীণ মানুষের শিক্ষার প্রসারে তাঁকে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল বেশ কয়েক বার। দল-পতাকা-অনুগামীহীন, একাই। নির্বাচনেও কি তাঁর লড়াই, সেই একা একাই? নাকি করিমপুরের ‘বধ্যভূমি’ থেকে এ বারও চুপি সারে সরে পড়বেন তিনি!

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy