Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Gosairhat

ডুয়ার্সের গোঁসাইহাট ইকো পার্ক হারাচ্ছে জৌলুস, বন দফতরের উদাসীনতার অভিযোগ

অভিযোগ, পরিযায়ী পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। পর্যটকদের জন্য তৈরি কটেজের আসবাবপত্র চুরি হয়ে গিয়েছে।

পর্যটক শূন্য গোঁসাইহাটের ইকো পার্ক— নিজস্ব চিত্র।

পর্যটক শূন্য গোঁসাইহাটের ইকো পার্ক— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ১৪:৩৩
Share: Save:

শীতের গোড়াতেও জনশূন্য গোঁসাইহাট ইকো পার্ক। ডুয়ার্সের পরিচিত এই পর্যটনক্ষেত্র হারাতে বসেছে তার জৌলুস। অভিযোগ, বন দফতরের উদাসীনতায় বিপন্ন হতে বসেছে ধূপগুড়ির খুট্টিমারি এলাকার একদা জনপ্রিয় এই পাখিরালয়।

পার্কের ঝিলে এখনও আসেনি শীতের পাখিরা। অভিযোগ, গোঁসাইহাট নেচার পার্কের জলাশয়ের সংস্কার না হওয়ায় আগের মতো আর পাখি আসছে না এখানে। কয়েক বছর আগেও এই ঝিলের আকর্ষণে ভিড় জমাতো দেশি-বিদেশি পাখির ঝাঁক। প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখির দেখা মিলত এখা্নে। লেসার হুইসলিং ডাক (ছোট সরাল), ব্রাহ্মণী ডাক (চখাচখি), নর্দার্ন পিন টেল (সূচীপুচ্ছ হাঁস)-এর মতো পরিযায়ীর পাশাপাশি স্থানীয় জলচর পাখি ডাহুক, জলমুরগি, জলপিপি, পানকৌড়িরাও থাকত গোঁসাইহাটে। পাখিপ্রেমী পর্যটকদের ভিড় হত শীতে। পাখিরালয় সংলগ্ন খুকলুং রাভা বস্তির বাসিন্দাদের একাংশ আর্থিক ভাবে উপকৃত হতেন।

কিন্তু সংস্কার না করায় ঝিলের মধ্যে জমে রয়েছে কচুরিপানা আর এর ফলে পরিযায়ী পাখিরা এখানে আর ভিড় জমাচ্ছে না। গোঁসাইর হাটের পার্ক সংলগ্ন পাখিরালয়টিও বন্ধ। নেই কোনও নজরদারি। যার ফলে কিছু চোরাশিকারি পাখি মারছে বলেও অভিযোগ। পাশাপাশি পরিত্যক্ত পর্যটক আবাসগুলিতে বাড়ছে নানা অসামাজিক কাজ।

স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটি (এফপিসি)-র সদস্য রবি রাভা বলেন, “উদ্বোধনের পর থেকেই পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বন দফতরের নজরদারি ও পরিচর্যা না থাকায়, পাখিরালয় ও জলাশয়টি সঠিক ভাবে পরিচর্যা না হওয়ায় আগের মতো পাখি আসে না । পরিযায়ী পাখি শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। কটেজের আসবাব, খাট সব চুরি হয়ে গিয়েছে।”

২০০৬ সালে রাজ্যের তৎকালীন বনমন্ত্রী যোগেশচন্দ্র বর্মন ঝিলের সংরক্ষণ ও সংস্কার করেছিলেন। এর পর থেকেই পরিযায়ী পাখিরা ধীরে ধীরে আসতে শুরু করে এই জলাশয়ে। পর্যটকের ভিড় বাড়ায় নজরমিনার এবং রাত্রিবাসের জন্য দু’টি কটেজ তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা নামল ৩০ হাজারের নীচে, চার মাসে দেশে সর্বনিম্ন

খুকলুং বস্তির বাসিন্দা তথা শিল্পী সিতেন রাভা বলেন, ‘‘পার্কটি আবার সরকার চালু করুক। পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হোক। তা হলে এলাকার উন্নতি হবে। বেকাররা কাজ পাবে।’’ গোঁসাইহাটে আগেও এসেছেন জলপাইগুড়ির সুমন টেমানি। তিনি বলেন, ‘‘আগে এই সময়ে ৪০-৫০ প্রজাতির পাখি আসত। এখন আর আসে না । সব কিছু চুরি হয়ে যাচ্ছে বন দফতরের নজরদারির অভাবে।’’

ধূপগুড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা এলাকার বাসিন্দা অরবিন্দ সরকার বললেন, ‘‘বহু দিন থেকে গোঁসাইর হাটের পার্কটি বন্ধ রয়েছে। আগের মতো পরিযায়ী পাখি আসে না। বনকর্মীদের নজরদারির অভাবে ঝিলটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা উচিত।"

জলপাইগুড়ির ডিএফও মৃদুল কুমার অবশ্য বলেছেন, “খুব শীঘ্রই চালু করা হবে গোঁসাইর হাটের ইকো পার্ক। পাখিদের জলাশয়টিও পরিষ্কার করা হবে। নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে এই পর্যটনক্ষেত্র।"

আরও পড়ুন: জাতের অঙ্কেই নয়া মন্ত্রিসভা বিহারে, প্রাধান্য পিছড়ে বর্গের

জলপাইগুড়ি অনারারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘ওখানে কটেজগুলির ভেঙে জিনিসপত্র চুরি করা হয়েছে। তবে পার্ক এবং ঝিলটি দ্রুত আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে বনমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রেখেছি। মন্ত্রী বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। আশা করছি, শীঘ্রই চালু হবে গোঁসাইহাট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE