Advertisement
০৪ মে ২০২৪

স্ত্রী জীবিত, খুনের ছক কষে আগাম মাথা মুড়িয়ে শ্রাদ্ধ করলেন স্বামী!

রায়গঞ্জের মিলনপাড়ার সেই মহিলা পরে জানান, সবই তিনি জানতেন। কিন্তু অভিমানে কাউকে কিছু বলতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত গায়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা হলে তাঁর জা এসে তাঁকে বাঁচিয়েছেন। ওই মহিলার স্বামী নরেশ মোদককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

কবর: স্ত্রীকে পুড়িয়ে মেরে এখানেই পুঁততে চেয়েছিল নরেশ। নিজস্ব চিত্র

কবর: স্ত্রীকে পুড়িয়ে মেরে এখানেই পুঁততে চেয়েছিল নরেশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

স্ত্রী মারা যাওয়ার আগেই শ্মশানে গিয়ে মাথা মুড়িয়ে তাঁর জন্য শ্রাদ্ধ করেছেন। বাড়িতে ঘরের মধ্যে কবর খুঁড়ে রেখেছেন। তারপরে গত বুধবার দুপুরে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিতে গিয়েছিলেন। তখনই টের পেয়ে লাগোয়া বাড়ি থেকে এসে আত্মীয়রা ছুটে এসে বাঁচান সেই মহিলাকে। রায়গঞ্জের মিলনপাড়ার সেই মহিলা পরে জানান, সবই তিনি জানতেন। কিন্তু অভিমানে কাউকে কিছু বলতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত গায়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা হলে তাঁর জা এসে তাঁকে বাঁচিয়েছেন। ওই মহিলার স্বামী নরেশ মোদককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ এবং পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নরেশবাবু কাঠের মিস্ত্রি। কিন্তু মদ খেয়ে রাতে ফিরে বাড়িতে প্রায়ই অশান্তি করেন বলে অভিযোগ। পড়শিরাও তাঁকে নিয়ে বিরক্ত। তার স্ত্রী জ্যোৎস্নাদেবী পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁদের দুই ছেলের এক জন শহরের একটি নামী স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির এবং অন্য জন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

অভিযোগ, রবিবার থেকেই জ্যোৎস্নাদেবীকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলেন নরেশ। পাকা ঘর হলেও মেঝে মাটির। সেখানেই ঘরের মধ্যে দুই দিন আগে কবর খোঁড়েন স্ত্রীর জন্য। এ সব দেখে অভিমানে স্ত্রী কেঁদেছেন। কিন্তু কাউকে কিছু বলেননি। দুই ছেলে বাবাকে বলতে গেলে ধমক খেয়েছে। তাদের মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছেন। বুধবার দুপুরে স্ত্রী বাড়ি ফিরতেই অশান্তি শুরু হয়। তার আগে নরেশবাবু মাথা মুড়িয়ে স্ত্রী শ্রাদ্ধও করে এসেছেন় বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: বাল্যবিয়ে রুখে পথ দেখাচ্ছেন মুস্তারি

লাগোয়া বাড়িতে জ্যোৎস্নাদেবীর জা পুষ্পাদেবী, শাশুড়ি বৃদ্ধা দ্রৌপদী মোদকরা থাকেন। জ্যোৎস্নাদেবীর বলেন, ‘‘রেশন থেকে বাড়ির জন্য কেরোসিন তেল এনে রেখেছিলাম। সেটা আমার গায়ে ঢেলে দেয়। গায়ে আগুন দিতে যায়। অভিমানে কিছু কাউকে বলিনি। আমার জা এসে আমাকে টেনে ঘর থেকে বার করে।’’

আরও পড়ুন: অমিত খুনের রায়ের কপি নিল সিআইডি

ওই এলাকার কাউন্সিলর তৃণমূলের পুষ্পা মজুমদার এবং তৃণমূলের মহিলা সমিতির মীরা পাল এবং অন্যরা তাদের বাড়িতে যান। পুষ্পা বলেন, ‘‘এর আগেও ওই দম্পতির এক সদ্যোজাত সন্তানকে মৃত অবস্থায় ফেলে দেওয়া নিয়ে হইচই হয়েছে। কাজকর্ম পাচ্ছে না দেখে কাঠের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম নরেশকে। তাও শোধরায়নি। আগুন লাগিয়ে দিলে কী হত, ভেবেই আঁতকে উঠছি। মহিলা সমিতির সদস্যরা এসে জ্যোৎস্নাকে থানায় নিয়ে যায়।’’

নরেশবাবুর মার অক্ষেপ, ‘‘কেন যে এমন করে কিছুই বুঝতে পুারছি না। মদ খেয়ে ঘরে এসে এ সব করে। কত নিষেধ করেছি, শোনে না।’’ প্রতিবেশী শীলা দাস, টুম্পা মোদকরা বলেন, ‘‘মদ খেয়ে এসে প্রতিদিনই চিৎকার চেঁচামেচি করে। কিন্তু ঘরে কবর খুঁড়েছে বলে জানতাম না। তা জেনে আমরাও হতবাক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Attempt Raigunj Cemetary Domestic Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE