ধুন্ধুমার: বোলপুরে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জেলা সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষকে (নীল জামা)। সিউড়িতে বিজেপির বাইক র্যালি। নিজস্ব চিত্র
দলের যুব মোর্চার বিজয় সঙ্কল্প যাত্রা ঘিরে রবিবার পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য জুড়ে সংঘাতে জড়িয়েছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। বীরভূমেও তার আঁচ পড়েছে। ওই কর্মসূচি ঘিরে এ দিন বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়েছে মল্লারপুর, মহম্মদবাজার, ময়ূরেশ্বরে। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই মোটরবাইক র্যালি বের করায় সিউড়ি, দুবরাজপুর, বোলপুর, রামপুরহাট-সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় আটকে দেওয়া হয় গেরুয়া শিবিরের বিজয় সংকল্প যাত্রা।
পুলিশ জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দিকে, জেলা বিজেপির নেতাদের দাবি, গ্রেফতার হওয়া নেতা-কর্মীর সংখ্যা ১৭০। এ দিন গ্রেফতার হন দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডল, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষেরা। তাঁদের অভিযোগ, এ ভাবেই বারবার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিকে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্যে আটকানোর চেষ্টা করছে শাসক দল।
এ দিন সকাল থেকেই দফায় দফায় জেলার প্রতিটি শহরে বাইক র্যালি আটকানো নিয়ে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়। র্যালিকে আটকাতে গিয়ে সাঁইথিয়ায় বিজেপি কর্মীদের উপরে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে বলে দাবি করেন সাঁইথিয়া পুরসভার তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর সঞ্জু রায়। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন ২৫০টি মোটরবাইকে প্রায় ৫০০ জন বিজেপি কর্মীর র্যালি বেলা ১২টা নাগাদ সাঁইথিয়া শহর ঘুরে স্থানীয় বনগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঢুকেছিল। সেখানে তিন জায়গায় র্যালিকে আটকায় পুলিশ। বিজেপি কর্মীদের উপর চড়াও হয়ে লাঠিচার্জও করে। লাঠির আঘাতে আমাদের দলের সাঁইথিয়া মণ্ডল কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় দলুই-সহ বেশ কয়েক জন কর্মী জখম হন।’’
জেলার পুলিশ কর্তারা জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। তার মধ্যে বিজয় সংকল্প যাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘বিজেপি কর্মীদের র্যালি বের করতে নিষেধ করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তাঁরা র্যালি বের করেছেন। এর জন্য ৫০ জনের বেশি বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সাঁইথিয়া ছাড়াও সিউড়ি, দুবরাজপুর, বোলপুর, মহম্মদবাজার, মল্লারপুর, ময়ূরেশ্বর, রামপুরহাট, হাঁসন, নলহাটি থেকেও বিজয় সঙ্কল্প র্যালি বের হয়। সিউড়ি, দুবরাজপুর, বোলপুর, রামপুরহাট শহরগুলি থেকে র্যালি বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য পুলিশ
বিজেপি কর্মীদের আটকে দেয়। বাইক র্যালি আটকে যাওয়ায় বিজেপি কর্মীরা প্রথমে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। এর পরে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি দিতে দিতে এবং কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে আবার জয়ী করার স্লোগান শুরু করেন। অনেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এর পরেই পুলিশ উত্তেজিত বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে এবং কয়েক জনকে গ্রেফতার করে।
অন্যদিকে, মল্লারপুরে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র আহ্বায়ক অতনু চট্টোপাধ্যায়, ময়ূরেশ্বর-১ ব্লক মণ্ডল কমিটির সহ সভাপতি মানস বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদক সুশান্ত দে, মল্লারপুর-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সমীর লোহারের মতো কয়েক জন নেতাকে বাইক র্যালি শেষ হওয়ার পরে মল্লারপুর বাজার থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মহম্মদবাজারেও শেওড়াকুড়ি মোড় থেকে চরিচা পঞ্চায়েত এলাকা ঘুরে আসার পরে মহম্মদবাজার তিন মাথার মোড়ে জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় মণ্ডল কমিটির সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। বেশ কয়েকটি মোটরবাইকও পুলিশ এ দিন আটক করেছে।
পুলিশের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও কেন র্যালি বের করেছিলেন, সেই বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি বলেন, ‘‘দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে বিজয় সঙ্কল্প র্যালির জন্য পুলিশের কাছে দলের মণ্ডল কমিটির নেতারা অনুমতি নিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের অনুমতি দেওয়া দূর অস্ত, উল্টে বাড়িতে বাড়িতে নোটিস পাঠিয়ে মিছিল বন্ধ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ফোন করেও বলা হয়েছে।” রামকৃষ্ণবাবুর যুক্তি, ‘‘পুলিশ প্রশাসন তাদের কাজ করেছে। আমরা আমাদের দলের নির্দেশ মেনে র্যালি বের করেছি। তাতে পুলিশ বাধা দিয়েছে, কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। আমরাও সব ঘটনা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy