Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চুলের কেত দেখে কাঁচি ধরলেন প্রধান শিক্ষকই

ঘটনাটি নলহাটি ২ ব্লকের লোহাপুর এম আর এম হাইস্কুলের। প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, ইদানীং সিনেমা দেখে স্কুলের বেশ কয়েক জন ছাত্র চুলে ফ্যাশন শুরু করেছে। কেউ কেউ আবার চুলে লাল, নীল, সাদা রং করে স্কুলে আসছে।

চুল কেটে দিলেন প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

চুল কেটে দিলেন প্রধান শিক্ষক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

পড়ে তারা স্কুলে। কিন্তু, চুলের কেত দেখে তা বলবে কে! কারও মাথায় ঝুঁটি বাঁধা চুল। কেউ বা শখে সেলুনে গিয়ে মাথার চুল করেছে রঙিন। কারও কানের পাশ দিয়ে অনেকটা কাটা। স্কুলে পড়াশোনা করতে হলে এই হরেককিসিমের চুলের স্টাইল করা যে চলবে না, তা নিয়ে একাধিকবার ওই সব ছাত্র এবং অভিভাবকদের সতর্ক করেছিলেন প্রধান শিক্ষক। নির্দেশিকা অমান্য করায় মঙ্গলবার স্কুলেই পাঁচ ছাত্রের চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দিলেন প্রধান শিক্ষক!

ঘটনাটি নলহাটি ২ ব্লকের লোহাপুর এম আর এম হাইস্কুলের। প্রধান শিক্ষক আব্দুল হামিদ জানান, ইদানীং সিনেমা দেখে স্কুলের বেশ কয়েক জন ছাত্র চুলে ফ্যাশন শুরু করেছে। কেউ কেউ আবার চুলে লাল, নীল, সাদা রং করে স্কুলে আসছে। এতে স্কুলের পঠনপাঠনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অন্য ছাত্রেরাও প্রভাবিত হচ্ছে। তাই স্কুলের শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রথমে তিনি অভিভাবকদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে সচেতন করেন। কিন্তু তার পরেও বেশ কয়েক জন ছাত্র চুল রং করে কিংবা মাথার পিছনে চুল কেটে নামের অক্ষর লিখে স্কুলে আসছে। এর পরেই প্রধান শিক্ষক নিজেই কাঁচি ধরে পাঁচ ছাত্রের চুল কেটে দেন।

আব্দুল হামিদ বলেন, “এমন আজব কায়দায় চুল কেটে স্কুলে এলে অন্য ছাত্রের মধ্যেও বিষয়টি সংক্রামিত হয়। তাই প্রথমে অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করেছিলাম। তাতেও কাজ না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

নলহাটির এই স্কুলের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও রাজ্যের বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের কায়দা করে চুল কাটা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। কাঁথির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এলাকার সেলুন মালিকদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন, স্কুলছাত্রেরা সেলুনে গেলে তাদের চুলে ফ্যাশনের কাটিং যেন তাঁরা না করেন। ক্যানিংয়ের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের হাতে টাকা দিয়ে সেলুনে গিয়ে ভদ্রস্থ ভাবে চুল কেটে আসতে বলেছিলেন। তা বলে নিজের হাতে চুল কেটে দেওয়া! এমন ঘটনা শোনা যায় না বললেই চলে। নিজেই কেন কাঁচি ধরলেন? আব্দুল হামিদের যুক্তি, ‘‘এমনটা করা না হলে দিন দিন চুল অদ্ভুত ভাবে কাটার প্রবণতা বেড়ে যাবে। তাই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। আরও কিছু একাদশ শ্রেণির ছাত্র আছে। তাদেরও সতর্ক করে বলেছি, ভদ্র ভাবে চুল কেটে স্কুলে না এলে আবারও আমি হাতে কাঁচি ধরব!’’

প্রধান শিক্ষকের এই সিদ্ধান্তে অবশ্য সিলমোহর দিয়েছেন অভিভাবকেরা। শেফালি বিবি বলেন, “প্রধান শিক্ষক ঠিক কাজ করেছেন। আমরা এত দিন ছেলেদের বলেও পারিনি। প্রধান শিক্ষক তা করে দেখালে। আশা করি, এর ফলে বাকিরাও সচেতন হবে। ভদ্র ভাবে চুল কাটাবে।’’ স্কুলের মধ্যে অনেক পড়ুয়ার সামনে প্রধান শিক্ষক চুল কেটে দিলেও খুব একটা ক্ষোভ নেই ছাত্রদের। ষষ্ঠ শ্রেণির তেমনই দুই ছাত্রের কথায়, “আমরা হিরো সাজার জন্য ওই ভাবে চুল কেটে রং করিয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষক কেটে দিয়েছেন, তাতে আমাদের দুঃখ নেই। এ ভাবে আর চুল কাটব না। প্রধান শিক্ষক আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন।’’

বীরভূম জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত সরকার বলেন, ‘‘এই ঘটনা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nalhati Headmaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE