Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

মেমসাহেব ও ক্রীতদাসী

দাসী সহ মেমসাহেব। জে এফ অ্যাটকিনসন-এর কারি অ্যান্ড রাইস (১৮৫৯) থেকে।

দাসী সহ মেমসাহেব। জে এফ অ্যাটকিনসন-এর কারি অ্যান্ড রাইস (১৮৫৯) থেকে।

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

মেমসাহেব ও ক্রীতদাসী

মৃণাল মাইতি (‘মানুষ না পিশাচ’, সম্পাদক সমীপেষু, ২৪-৯) লিখেছেন, ‘স্মৃতিতে চলকে উঠল প্রায় দেড়শো বছর আগে কলকাতার একটি ভয়াবহ ছবি। বাংলার গভর্নর তখন ওয়ারেন হেস্টিংস।’ এখানে একটু সময়-বিভ্রাট ঘটেছে। আজ থেকে দেড়শো বছর আগে অর্থাৎ ১৮৬৫ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৩২-১৮১৮) কী করে গভর্নর হবেন?
উইলিয়াম জোনস (১৭৪৬-’৯৪) সম্পর্কে মাইতি জানাচ্ছেন, ‘তিনি বলেছিলেন, কলকাতার ঘরে ঘরে ক্রীতদাসী’। অষ্টাদশ শতকে সারা বিশ্বেই কিন্তু দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। বহু ইংরেজ জাহাজের কাপ্তেন তখন দাস ব্যবসায়ে জড়িত ছিলেন।
শ্রীমাইতি জানাচ্ছেন, হেস্টিংসের সময় মেমসাহেব মালকিনরা লোহা গরম করে ক্রীতদাসীদের শরীরে ছ্যাঁকা দিতেন। এক মেমসাহেব নাকি তার ক্রীতদাসীর কপালে ‘লায়ার’ শব্দটি লিখে দিয়েছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এ দেশে কদাচিৎ কোনও ইংরেজ মহিলার দেখা পাওয়া যেত। ১৮/১৯ বছরের যে ইংরেজ তরুণরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির করণিক (রাইটার) হয়ে এ দেশে আসত, তারা ভারতীয় মেয়েদের সঙ্গেই বসবাস করত। অনেকে স্ত্রীর মর্যাদা পেত, অনেকে পেত না। এদেরই সন্তানসন্ততিদের উনিশ শতকে ইউরেশিয়ান বলা হত। অবসর গ্রহণ করে অনেক ইংরেজ ভারতীয় পত্নীদের সঙ্গে নিয়ে স্বদেশে ফিরতেন। অনেকে আবার তাঁদের এ দেশে ফেলে চলে যেতেন। ১৭৯৯ সালে মির্জা আবু তালেব যখন ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন একাধিক ইংরেজ স্বামীর ভারতীয় পত্নীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল।
মেমসাহেব মালকিনদের যে নিষ্ঠুর অত্যাচারের কাহিনি শ্রীমাইতি শুনিয়েছেন তার সূত্র নির্দেশ করেননি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধী গোষ্ঠী ইংল্যান্ডেও কম ছিল না। খ্রিস্টধর্ম প্রচারকরা কোম্পানি বাহাদুরের উপর রুষ্ট ছিলেন। কারণ, কোর্ট অব ডায়রেক্টর্স ব্রিটিশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচারের সমর্থক ছিলেন না। মিশনারিদের পত্রিকা ‘ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’য় নিয়মিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমালোচনা প্রকাশিত হত। কোম্পানির আধিকারিক ও কর্মচারীরা অনেকেই অসৎ উপায়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। এঁদের অনেককেই বরখাস্ত করে ইংল্যান্ডে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হত। স্বদেশে ফিরে তাঁরা কোম্পানির বিরুদ্ধে সত্য মিথ্যা নানা প্রচার চালাতেন।

এদেরই এক জন উইলিয়াম বোল্টস। ওলন্দাজ (ডাচ) এই ব্যক্তি কোম্পানির অধীনে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে বরখাস্ত করার পরে ইংল্যান্ডে গিয়ে কনসিডারেশন অব ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্স শীর্ষক একটি পুস্তক প্রকাশ করে বদলা নেন। বাংলার তাঁতিদের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ কেটে ফেলার কাহিনিটি বোল্টসের মস্তিষ্কপ্রসূত।

১৮৩০-এর পর থেকে ইংল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে বাষ্পচালিত জাহাজের নিয়মিত যাতায়াত শুরু হয়। হেনরি কটন ১৮৮৫-তে প্রকাশিত তাঁর নিউ ইন্ডিয়া’য় লিখছেন, ১৮৪০-এর পর থেকে শিক্ষিত ইংরেজ মহিলারা দলে দলে ভারতে আসতে শুরু করেন। এঁদের একটা বড় অংশ আসতেন স্বামী পাকড়াও করতে। তৎকালীন ভারতীয় ইংরেজ সমাজে ‘ইন কোয়েস্ট’ শব্দ দুটির খুব চল হয়েছিল। এই মহিলাদের পক্ষে ‘ক্রীতদাসী’দের গায়ে গরম লোহার ছ্যাঁকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। তার কারণ, ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে পার্লামেন্ট সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে।

সোমনাথ রায়। কলকাতা-৮৪

আপত্তি উঠবে কেন

সুগত মারজিত (‘চুক্তি ভাল, তবে...’, ৩০-৯) লিখেছেন, ‘বাড়তি রোজগার ওই ধরনের স্বাধীনতায় যদি হস্তক্ষেপ করে তা হলেই কর্মীদের আপত্তি ওঠে’। এই আশঙ্কা কি কিছুটা মনগড়া নয়? চুক্তির আওতায় তাঁদের আনার ব্যাপারে সরকারের ভাবনাকে যদি কাজের লোকেরা সাদরে আবাহন করেন এবং দ্রুত রূপায়ণের লক্ষ্যে তা নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ঐক্যবদ্ধ হন, তা হলে ছুটির ব্যাপারে আপত্তি ওঠার কি কোনও কারণ আছে?

জয়শ্রী চক্রবর্তী। সম্পাদিকা, সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE