Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সংখ্যার মুক্তি

আবেদনটির গুরুত্ব অসীম। চিকিৎসকের উপদেশ হইতে রোগী বুঝিতে পারেন, রোগ কত কঠিন। তেমনই, সংশোধনের জন্য সরকারের প্রতি এই আহ্বান হইতে দেশবাসীর বুঝিবার কথা, সঙ্কট কত গভীর হইয়াছে। সমস্যা দুইটি স্তরে।

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০০:১৩
Share: Save:

বন্দিমুক্তির জন্য সরকারের নিকট আবেদন দুর্লভ নহে। কিন্তু সংখ্যার মুক্তি চাহিয়া আবেদন? এমন বিরল কাণ্ডই ঘটিল। অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের একশো আট জন বিশেষজ্ঞ ভারত সরকারের নিকট আবেদন করিয়াছেন, সরকারি পরিসংখ্যান রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হউক। সারা বিশ্বে পরিসংখ্যান সংগ্রহ-বিশ্লেষণের ভারপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির পেশাগত স্বাতন্ত্র্য রহিয়াছে। ভারতেও আছে। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতর (সিএসও), জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থা (এনএসএসও) এবং এই গোত্রের অপরাপর সংস্থার কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করিতে হইবে। এই সংস্থাগুলির কাজের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করিতে হইবে। সরকারি তথ্য-পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইয়াছে, এই আশঙ্কার সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তিও দেখানো হইয়াছে আবেদনে। তাহার তাত্ত্বিক এবং সংখ্যাতাত্ত্বিক দিকটি বাদ দিলেও এই উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করিবার মতো, ‘‘বস্তুত, যে পরিসংখ্যানই (মোদী) সরকারের সাফল্যে কণামাত্র সংশয় সৃষ্টি করিতে পারে, তাহার সকলই যেন সংশোধন করা হইয়াছে, অথবা চাপা দেওয়া হইয়াছে, এমন কোনও পদ্ধতির ভিত্তিতে যাহা লইয়া প্রশ্ন উঠিতে বাধ্য।’’ যে সকল তথ্য-পরিসংখ্যান সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলিতে পারে, সেগুলি গোপন করিবার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিতে অর্থনীতি, সংখ্যাতত্ত্ব এবং নীতিতত্ত্বের সকল গবেষককে আহ্বান জানাইয়াছেন ওই বিশেষজ্ঞেরা। সকল সময়ে, সকল স্তরে পরিসংখ্যানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখিবার দাবি জানাইয়াছেন।

আবেদনটির গুরুত্ব অসীম। চিকিৎসকের উপদেশ হইতে রোগী বুঝিতে পারেন, রোগ কত কঠিন। তেমনই, সংশোধনের জন্য সরকারের প্রতি এই আহ্বান হইতে দেশবাসীর বুঝিবার কথা, সঙ্কট কত গভীর হইয়াছে। সমস্যা দুইটি স্তরে। প্রথম স্তর অর্থনীতির। জাতীয় উৎপাদন যথেষ্ট বাড়ে নাই, কর্মনিযুক্তি কমিতেছে, বেকারত্ব বাড়িতেছে। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিতে সরকার ব্যর্থ। কিন্তু দ্বিতীয় স্তরটি আরও শঙ্কাজনক। তাহা এই যে, সরকার তাহার ব্যর্থতা স্বীকার করিতে অনিচ্ছুক, তাই সত্যকে গোপন এবং বিকৃত করিতেছে। তাহার ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই কি মিলে নাই? কর্মনিযুক্তি বিষয়ে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা সংস্থার পরিসংখ্যান প্রকাশ করিতে অস্বীকার করিয়াছিল কেন্দ্র। প্রতিবাদে পদত্যাগ করিয়াছিলেন ওই সংস্থার দুই পদস্থ কর্তা। তাহাতে যথেষ্ট সমালোচিত হইয়াছে কেন্দ্র। অতঃপর সংবাদমাধ্যমে ওই অপ্রকাশিত রিপোর্টের যে অংশ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহাতে ওই বেকারত্বের হারে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি দেখা গিয়াছে। সম্ভবত প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের রোষ হইতে বাঁচিতে সরকারি আধিকারিক, নীতি আয়োগের সদস্য প্রভৃতি পদস্থ ব্যক্তিরা ‘অস্বস্তিকর’ পরিসংখ্যান এড়াইতেছেন। অথবা সন্তোষজনক ফল দেখাইতে পদ্ধতিতে নানা যুক্তিহীন পরিবর্তন করিতেছেন। কিন্তু তাহাতে দেশের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হইতেছে। অর্থনীতির পরিসংখ্যানের ধারাবাহিকতা নষ্ট হইলে তাহা অর্থহীন হইয়া যায়। পূর্বের অপেক্ষা উন্নতি হইল না কি অবনতি, বুঝিবার উপায় থাকে না। ‘কী করা প্রয়োজন’, তাহাও অস্পষ্ট হইয়া পড়ে।

পরিসংখ্যান একটি জনসম্পদ। শিল্পীর রেখাচিত্র, কবির কবিতায় যেমন মানুষের জীবনসত্য পরিস্ফুট হয়, তেমনই তাহা ফুটিয়া ওঠে সংখ্যায়। পরিসংখ্যানবিদ তাঁহার বিদ্যা ও দক্ষতার প্রয়োগে সেই সংখ্যা হইতে নাগরিকের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সমাজে সাম্য-অসাম্য, বিবিধ প্রকল্পের সাফল্য-ব্যর্থতার পূর্ণ চিত্র আহরণ করেন। তাহার বিচার-বিবেচনার উপরেই দেশের উন্নয়নের নীতি রচিত হয়। নাগরিকের জীবন হইতে আহরিত পরিসংখ্যান তাই দেশের সম্পদ। শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকের স্বাতন্ত্র্যের ন্যায়, পরিসংখ্যানবিদের স্বাতন্ত্র্যের সুরক্ষাও তাই অত্যন্ত জরুরি। তাহা লইয়া ছেলেখেলার অধিকার কাহারও নাই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Information Indian Government NSSO CSO
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE