Advertisement
E-Paper

নামভূমিকায়

ভারতীয়, বাঙালি হিসেবে গর্ব হয়, আমেরিকার বহুসংস্কৃতি উদ্‌যাপনে আমাদেরও সূত্র থাকল বলে। নতুন বাইডেন প্রশাসনে উঁচু পদে বাঙালি মেয়ে।

আবাহন দত্ত

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩৪
সুমনা গুহ

সুমনা গুহ

নতুন প্রেসিডেন্ট দল সাজাচ্ছেন নতুন করে। তাতে ঠাঁই পাচ্ছেন ভারতীয়রা— এক বাঙালিও। সুমনা গুহ। বারাক ওবামা প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিশেষ উপদেষ্টা। এ বার তিনিই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দলে ‘সিনিয়র ডিরেক্টর ফর সাউথ এশিয়া’।

জাতীয় নিরাপত্তা, সেনাবাহিনী এবং বিদেশনীতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টের যে মঞ্চ রয়েছে, তা হল হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি কাউন্সিল বা জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ। সেই পরিষদে দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্ব পেয়েছেন ‘ভূমিকন্যা’ সুমনা। বড় কথা, কেননা দক্ষিণ এশিয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালে যে দেশকে ‘স্ট্র্যাটেজিক কম্পিটিটর’ আখ্যা দিয়েছিল আমেরিকা, তার নাম চিন। এক দিকে চিন, অন্য দিকে ইরান থেকে পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশকে সামলাতে গেলে ভারতের দিকে তাকাতেই হবে আমেরিকাকে। সুতরাং জরুরি হয়ে উঠবে সুমনার ভূমিকা।

সুমনা কূটনীতিক, ঠিক ‘স্টার’ নন। এত কৃতিত্ব অর্জনের পরেও বাঙালি তাঁকে চেনে না। জনস হপকিন্স ও জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি-র গ্র্যাজুয়েট; এক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কৌশল সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট; বাইডেন-হ্যারিসের প্রচারদলে যে গোষ্ঠী দক্ষিণ এশীয় বিদেশনীতি নিয়ে কাজ করছিল, তার কো-চেয়ার; ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় স্টেট ডিপার্টমেন্ট এজেন্সির পর্যালোচনাকারী দলের সদস্য; ইতিপূর্বে আমেরিকার বিদেশ দফতরে ফরেন সার্ভিস অফিসার এবং বিদেশসচিবের পলিসি প্ল্যানিং স্টাফ, দক্ষিণ এশিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত। সুমনার কেরিয়ারে গর্ব করার মতো অনেক তারা।

আমেরিকার প্রশাসনে ভারতীয় বা বাঙালিদের ঠাঁই পাওয়া নতুন নয়। নতুন নয় সুমনার কৃতিত্বও; এ বার হয়তো কিঞ্চিৎ বেশি। তবু এত কথা কেন, বুঝতে পিছিয়ে যেতে হবে ভোটের দিনগুলোতে। ভার্জিনিয়ার এক বঙ্গতনয়া গল্প শুনিয়েছেন, কী ভাবে নির্দল তিনি ও তাঁর বন্ধুরা ক্রমশ পক্ষ নিয়ে ফেললেন। নিতে বাধ্য হলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের আইনকানুন তাঁদের প্যাঁচে ফেলছিলই, অনেক বেশি অসুবিধে করছিল প্রেসিডেন্টের বিষাক্ত বচন। ‘অপর’ ধর্ম, গাত্রবর্ণ, লিঙ্গ, সংস্কৃতির মানুষের উপর আক্রমণ, আর সেই সূত্রে আমেরিকার ‘মহান’ হয়ে ওঠা। ভোট যত এগোল, তাপ যত বাড়ল, বিষ যত ছড়াল, তত একরোখা হয়ে উঠলেন ওই বঙ্গতনয়া আর তাঁর বন্ধুবান্ধব। দরজায় দরজায় কড়া নেড়ে বললেন, “বাইডেনকে ভোট দিন।” তাঁর নীতির সমর্থনে না হোক, ট্রাম্পকে ঠেকাতে। একই অভিজ্ঞতা ওহায়োর এক বাঙালি অধ্যাপকেরও। “ভারতীয় আর আমেরিকার ভোটারদের মধ্যে কোনও তফাত নেই।
তাঁরা আবেগ, একদেশদর্শিতা ও ভুয়ো খবর দ্বারা চালিত।”

সুমনার নিজের কথাও শুনি। ‘কর্তৃত্ববাদী দেশ কি বেশি ভাল পরিকাঠামো তৈরি করতে পারে?’— আলোচনাসভায় বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন কূটনীতিক সুমনা। তাঁর জবাব, তা হলে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর কাজকর্ম দেখা হোক, উত্তর মিলে যাবে। পরিকাঠামো উন্নয়নের আসল রহস্য বিনিয়োগে। আর, সরকার যদি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং পরমতসহিষ্ণু না হয়, তা হলে বিনিয়োগবান্ধব উন্নত পরিবেশ তৈরি হবেই বা কী করে?

যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ট্রাম্পের পরাজয়ে এত হইচইয়ের কী আছে, বাইডেনের ট্র্যাক রেকর্ডও কি খুব স্বস্তির? সুমনা একাই হয়তো এই প্রশ্নের জবাব। আমেরিকায় দুই দলের নীতিতে হয়তো বিশেষ ফারাক নেই, কিন্তু ফারাক তৈরি করেন প্রতিনিধিরা। দুই প্রশাসনের আসল তফাত কিছু মুখের উপস্থিতি। বাইডেনের নিরাপত্তা পরিষদে যেমন সুমনার সঙ্গেই থাকবেন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও হার্ভার্ড ল’ স্কুল-এর গ্র্যাজুয়েট তরুণ ছাবরা। প্রথম প্রজন্মের এই আমেরিকান প্রযুক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিনিয়র ডিরেক্টর। থাকবেন শান্তি কালাতিল। লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া বার্কলে-র গ্র্যাজুয়েট মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেটর।

কৃষ্ণাঙ্গ সেনেটর রাফায়েল ওয়ার্নক কিংবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের দলের নীতি, আর ক্যাপিটলে তাণ্ডব চালানো জনতার নেতার নীতি একই হবে, এ কথা যিনি বলেন, তাঁর বাস মূর্খের স্বর্গে।

তরুণ, শান্তি, সুমনা-রা যত বেশি করে জায়গা করে নেবেন প্রশাসনে, তত বাড়বে তার বৈচিত্র, বহুস্বর বলতে পারবে নিজ নিজ বয়ান, তত বিস্তৃত হবে অ-কর্তৃত্ববাদী সরকারের দূরদৃষ্টি ও পরমতসহিষ্ণুতা।

ভারতীয়, বাঙালি হিসেবে গর্ব হয়। সুমনা গুহ নামে কেউ আমেরিকায় গুরুত্ব পাচ্ছেন বলে নয়। বহু সংস্কৃতি, বহুত্ববাদ উদ্‌যাপনে আমাদেরও সূত্র থাকল বলে।

US Joe Biden
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy