Advertisement
E-Paper

এসেছে ফিরিয়া

কোন মার্কিন নথি-ফথি বেরোল আর লোকে ‘অ্যা বাবা, নিমগাছে হচ্ছে সিম, উগ্রপন্থার অবতার ভিতুর ডিম!’ বলে হাততালি শুরু।আরে ভাই, এতে এত অবাক হওয়ার কী আছে? যে লোকটা ছমছমে ভূতের গল্প লেখে, সে আবছা রাতে কলাগাছের নড়ন দেখে ভিরমি খাবে না? আমি তাবড় তাবড় রাষ্ট্রকে নাকানিচোবানি খাইয়ে দেওয়া সব টেররিস্ট প্লট ভাঁজছি, তা হলে আমার তো মনে হবেই, পাঁচশো গ্রাম চিনি দিতে দিতে মুদিটা তেরছা তাকাল, তার মানে মেশিনগানের ছর্‌রা গুলির সিগনাল দিচ্ছে?

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০০:৫৬

আরে ভাই, এতে এত অবাক হওয়ার কী আছে? যে লোকটা ছমছমে ভূতের গল্প লেখে, সে আবছা রাতে কলাগাছের নড়ন দেখে ভিরমি খাবে না? আমি তাবড় তাবড় রাষ্ট্রকে নাকানিচোবানি খাইয়ে দেওয়া সব টেররিস্ট প্লট ভাঁজছি, তা হলে আমার তো মনে হবেই, পাঁচশো গ্রাম চিনি দিতে দিতে মুদিটা তেরছা তাকাল, তার মানে মেশিনগানের ছর্‌রা গুলির সিগনাল দিচ্ছে? আমেরিকার জোড়া টাওয়ারে জোড়া প্লেন সেঁধিয়ে দিলাম, সে দিন থেকে কমোডে বসে অবধি বারে বারে জানলা দিয়ে উঁকি মেরেছি, বাথরুম ভেঙে হেলিকপ্টার ঢুকে আসতে কত ক্ষণ! পাইলট আবার কী পোজিশনে দেখে ফেলবে! তাইলে এখন কোন মার্কিন নথি-ফথি বেরোল আর লোকে ‘অ্যা বাবা, নিমগাছে হচ্ছে সিম, উগ্রপন্থার অবতার ভিতুর ডিম!’ বলে হাততালি শুরু— মানে হয়? হ্যাঁ, চ্যালাদের বলেছি তো, ই-মেলে বেশি কথাবাত্তা লিখিস না, হ্যাক হয়ে যাবে। এক জায়গায় জড়ো হোস না, বোম মেরে দেবে। হ্যাঁ, এও ভয় ছিল, আমার বউয়ের কাপড়চোপড়ে কারা মিনি-যন্তর ঢুকিয়ে দেবে, হয়তো আমি যা বলছি সব রেকর্ড হয়ে যাবে! এমনকী ইঞ্জেকশন নিতে চাইতাম না, হয়তো ডাক্তারটা আমেরিকার স্পাই, একটা মাইক্রোচিপ আমার বডিতে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, এ বার থেকে যেখানে যাব, কোন রেডারে সে লোকেশন নিরন্তর বিপবিপ। ভাইসব, এটা প্যারানোইয়া নয়, যার বুদ্ধি সুপ্রিম-প্যাঁচোয়া, সে রাইভালকেও সম-বুদ্ধিমান ধরে। এটা, জিনিয়াসেরই অন্য অ্যাঙ্গলে ক্লোজ-আপ।

নথির বলিহারি, আমার বইয়ের তাকে কী কী ছিল, সে লিস্টি অবধি করেছে। দেখে সক্কলেরই চক্ষু চড়কগাছ। হবেই। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গ্রাম্ভারি গদাম, গাদা গাদা চক্রান্ত-তত্ত্বের চক্কর, আমেরিকা-বিরোধী প্রোপাগান্ডা। সবচেয়ে নজর টেনেছে, নোম চমস্কির বই। হাহাহা। ভদ্রলোক মাথা ঝাঁকিয়ে পাত্রাধার তৈল না তৈলাধার পাত্র ভেবে ভেবে আঁতেল-চূড়ামণি নাম কিনলেন, শেষে কিনা টেররিস্টের প্রিয় লেখক! এ বার মিডিয়া এই নিয়ে কী লাউঘণ্ট ম্যানুফাকচার করে দেখো! ইদিকে লোকে বলাবলি করছে, দেখেছ সন্টু, ভাল টেররিস্ট হতে গেলেও কী লেভেলে পড়াশোনা করতে হয়! যাও, টিভি বন্ধ করে ম্যাথ্সটা নিয়ে বোসো! ওরে গাড়লা, বই কিনে থাকে থাকে সাজিয়ে রাখা মানেই কি এই: গেরস্থ ওই বই এক সেকেন্ডের জন্যেও খুলে দেখেছে? তাইলে তো বলতে হয় বাঙালি রবীন্দ্র রচনাবলি পড়ে উলটে গেছে! সোজা কথা, বিউটিফুল শান্ত জ্ঞানী সন্ত-র মতো দেখতে আমায়, তার একটা ইমেজ-খাজনা দিতে হবে তো। টিভিতে দেখেও লোকে ভাববে, ভাসা ভাসা চোখের পেছনে কিলবিল জাঁহাবাজ ফুটনোট, গ্লসারির মশারি!

তবে হপ্তা দুই আগে সেমুর হার্শ যা করেছেন, হেভি আমোদ পেয়েছি। আমেরিকার এই একটা তুঙ্গ জিনিস আছে, সরকার যদি বলে কাঠবেড়ালির পিঠে তিনটে দাগ, ওই চমস্কি থেকে হার্শ সবাই চেঁচিয়ে বলবে, কক্ষনও না, আসলে দুটো, তুমি তোমার অত্যেচারের সুবিধের জন্যে তৃতীয়টা তুলি বুলিয়ে সেঁটেছ! আহা গো, হার্শ কী কাঁদন-নাইট্যটাই না নিকেচে! আমি খুব অসুস্থ ছিলাম, পাকিস্তান আমায় বন্দি রেখেছিল অ্যাবটাবাদে, তাপ্পর আমেরিকার সঙ্গে তার লেনদেন পাক্কা হল, আমেরিকা আমায় মারতে এল পাকিস্তানের অগোচরে তো নয়ই, বরঞ্চ পুরোপুরি তাদের জানিয়ে এবং সাহায্য নিয়ে। এই সবই আমাকে লাস্ট সিনের অসহায় হিরো করে তোলে। এক কালে যার যার হাতে আগুন দাপাত, এখন যার গাঁট-ওঠা আঙুল ভিক্ষের মুদ্রায় স্টিল। টুইন টাওয়ার ধামসে যে টুইন-পাওয়ারের কাছে কেঁচো হয়ে গেল! ডাক্তার এল, ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে শত্তুরদেরই হাতে তুলে দিল। সোজা কথায়, আমেরিকা আর পাকিস্তান, দুটোই মহা শয়তান রাষ্ট্র, হাতে হাত মিলিয়ে আমাকে নিকেশ করল। জানতই যদি কোথায় আছি, আগেই কোতল করেনি কেন? কারণ, ঠিক কখন আমায় খুন করলে, ওবামা ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ভোটগুলো পাবে, কাঁটায় কাঁটায় ভাবা ছিল। দুর্ধর্ষ চিত্রনাট্য, না? বেইমানি আর থ্রিলার-মশল্লায় ভর্তি। সাধে কি বলা হয়েছে, এর প্রত্যেকটা বাক্য ডাহা মিথ্যে?

সত্যি না মিথ্যে, বলব না। পুরোটা জানিও না। কেউ যখন আন্তর্জাতিক খেলুড়ে হয়ে যায়, সে আদ্ধেক সময় বুঝতে পারে না, নিজের ইচ্ছে বলে যেটাকে মনে হচ্ছে সেটা কি তারই ইচ্ছে, না চার পাশের সময়ের ইচ্ছে, না শত্তুরের কিস্তিমাত-ইচ্ছে? কিন্তু এটা ঠিক, বেইমানির থিমটা বাজতে থাকে গাঁকিয়ে। আমেরিকা যখন সোভিয়েত-বিরোধিতার জন্য আফগানিস্তানে জেহাদি তৈরি করছিল হাঁইহাঁই করে, আমি সেই লাইনে ঢুকে পড়ি। তা হলে, এক দিক থেকে, আমেরিকা আমার জনক। আবার, নতুন ছেলেপুলেদের সব ট্রেনিং-ফেনিং’ই আমি দেওয়াতাম পাকিস্তানেই। তা হলে পাকিস্তান এক অর্থে আমার পালক। দুই বাবা-ই দুঃসময়ে আমায় ত্যাজ্য করে, ছবি বিশ্বাসের মতো স্ক্রিনের সাইডে দাঁড়িয়ে গেল। বাবা যখন সন্তানকে ছিঁড়ে খায়, গ্রিক ট্র্যাজেডিও বোমকে যায়। বৃদ্ধ শাজাহানের নাটক শুনে আমরা কেঁদে ভাসাই, কারণ নিজের ছেলে তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে। কিন্তু কু-পুত্র যদি বা হয়, কু-বাবা! যে কোলেপিঠে খেলতে দিল, এইটা ভাব আর সেইটা ভাবিস নে বলে বড় করল, হাতে তুলে দিল মারণাস্ত্র ও ঘেন্না-পুথি, সে-ই বললে, এ বার তোর মাংস কেটে মার্কেটে নিয়ে যাব! বেইমানি যদি না-ই হবে, হিস্ট্রি চ্যাপটারের মেগা-মস্তানকে কুকুরের মতো মরতে হয়? বডিটা কোথায় গেল, তা অবধি কেউ জানে না? হার্শ তো লিখছে, টুকরো করে হিন্দুকুশ পাহাড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে! মরণ অবশ্য আমার নেই, আমেরিকাই বাঁচিয়ে রাখবে, রূপকথার একটা জম্পেশ জুজু তো চাই রে বাবা। এই তো ক’দিন বাদেই আমার পর্নোগ্রাফি কালেকশন নিয়ে সিআইএ নতুন নথি লিক করে দিল বলে!

লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়।

osama bin laden terrorist Pakistan America Barack Obama
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy