Advertisement
E-Paper

আত্মকেন্দ্রিক এক আবর্তে অন্ধের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতি

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি বদলে যাচ্ছে? স্বাধীনতা বলতে এত দিন যা বোঝাত, এখন কি আর স্বাধীনতার অর্থটা তেমন নয়? উত্তরটা পাওয়া খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সংশ্লিষ্ট শব্দগুলোর যে অর্থ জেনে এসেছে এ বিশ্ব, এখন আর তার সঙ্গে মিলছে না প্রবণতাগুলো।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৬

গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কি বদলে যাচ্ছে? স্বাধীনতা বলতে এত দিন যা বোঝাত, এখন কি আর স্বাধীনতার অর্থটা তেমন নয়? উত্তরটা পাওয়া খুব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সংশ্লিষ্ট শব্দগুলোর যে অর্থ জেনে এসেছে এ বিশ্ব, এখন আর তার সঙ্গে মিলছে না প্রবণতাগুলো।

পরমতের প্রতি এক দুর্বোধ্য অসহিষ্ণুতা দানা বাঁধছে দিন দিন। আত্মকেন্দ্রিক এক আবর্তে অন্ধের মতো ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে রাজনীতি। দিল্লি থেকে ওয়াশিংটন, সর্বত্র একই ছবি। অসহিষ্ণুতার উদাহরণ ভূরি ভূরি, ঘটনামালার বিবৃতি ফুরনোর নয়। কিন্তু সাম্প্রতিকতম দু’টো দৃষ্টান্ত অত্যন্ত বিচলিত করে তুলল।

ঘটনা-১: দিল্লির রামযশ কলেজ। প্রথম দিন সেমিনার ভেস্তে দিল দেশের শাসক দলের অনুগত ছাত্র সংগঠন। দ্বিতীয় দিন তার প্রতিবাদে মিছিল বেরতেই শুরু হল বেপরোয়া মার। এক ছাত্রনেতা বললেন, এ রকমই হবে এ বার থেকে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো করে তোলার চেষ্টা কিছুতেই সফল হতে দেওয়া হবে না।

অর্থাৎ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ‘আমাদের’। ‘ওদের’ কোনও ঠাঁই নেই, ‘ওদের’ অস্তিত্ব স্বীকারই করি না।

ঘটনা-২: আইসল্যান্ডের রাজধানী রেকিয়াভিকের বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে থাকা আমেরিকাগামী বিমান। হঠাৎ নিরাপত্তারক্ষীরা উঠলেন বিমানে। ব্রিটেন থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণে বেরিয়ে, আইসল্যান্ড সফর সেরে আমেরিকার বিমান ধরেছেন যে শিক্ষক, তাঁকে নামিয়ে নেওয়া হল। কারণ তাঁর নাম মহম্মদ জুহেল মিয়া। পড়ুয়াদের নামে মহম্মদ নেই, তারা আমেরিকা যেতে পারবে। কিন্তু শিক্ষক পারবেন না।

অর্থাৎ, এক বার যখন বলেছি আমেরিকা শুধু ‘আমাদের’, তখন তা শুধু ‘আমাদের’ই। ‘ওদের’ কোনও ঠাঁই নেই, ‘ওদের’ অস্তিত্ব স্বীকারই করি না।

এ কোন ভয়ঙ্কর প্রবণতা! কোন দিশায় এগোচ্ছি আমরা? সভ্যতার ঠিক বিপরীত দিশায় নয় কি? এ পথ যে দিগন্তে গিয়ে মিশেছে, সেখানে ভয়াল আগুন লকলক করছে, তা কি দেখতে পাচ্ছি না?

স্বাধীনতার অর্থ হল সেই ব্যক্তির স্বাধীনতা, যিনি আমার মতো করে ভাবেন না, অন্য ভাবে ভাবেন। প্রত্যেক স্বাধীন ব্যক্তি যখন স্বাধীনতাকে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন, তখনই আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা পাই। আজ এই উপলব্ধির ঠিক বিপ্রতীপে যাত্রা শুরু করেছে একটা দঙ্গল।

গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক বেছে নেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু প্রত্যেক অংশীদারের মতামতকেই সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। নির্বাচনে পরাজিত বা সংখ্যায় লঘিষ্ঠ যে অংশ, সে অংশের সদস্য হলে অধিকারের মাত্রা হ্রাস পায় যে ব্যবস্থায়, সে ব্যবস্থা গণতন্ত্র নয়। কিন্তু গণতন্ত্রকে তেমনই একটা ব্যবস্থায় পরিণত করার চেষ্টা চলছে এখন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারেই বিস্ফোরক কথা বলছিলেন। মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বার বার প্রকাশ করছিলেন, বার বার সঙ্ঘাতের বার্তা দিচ্ছিলেন। তা সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্পই যখন জেতেন, তখনই টের পাওয়া যায় ট্রাম্পের উগ্রতার প্রতি কিছুটা প্রশ্রয়ই রয়েছে মার্কিন জনতার। উগ্রতার প্রতি সেই প্রশ্রয়ের সুর পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে, এমনকী আমাদের নিজেদের দেশের নানা নির্বাচনের ফলাফলেও কিছুটা প্রতীয়মান। বিশ্ব জুড়ে প্রবণতাটা যদি এ ভাবেই ঘুরতে থাকে, সভ্যতার সুদীর্ঘ ঘাত-প্রতিঘাতের ফসল তথা উপলব্ধি যে সব মূল্যবোধ, সে সব যদি এ ভাবেই দ্রুত মূল্যহীন হয়ে পড়তে থাকে, তা হলে সামনে ভয়ঙ্কর এক সংঘর্ষের দিন আসছে, সভ্যতার সঙ্কট আসছে।

Anjan Bandyopadhyay News Letter Delhi University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy