Advertisement
E-Paper

লৌহবাসরে বহু ছিদ্র

এমনটি হইবার কথা ছিল না। ১৯৯৭ সালে ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকা প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে তৎকালীন রাজ্য সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে।

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২১

বিশ্ব ঐতিহ্য দিবসে কলিকাতার ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলি রক্ষার দাবি লইয়া শহরের বিদ্বজ্জনেরা পথে নামিয়াছিলেন। এমন দাবি নূতন নহে। অতীতে বহু ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন সময় শহরবাসী সরব হইয়াছেন। কখনও সেই দাবির সুফল ফলিয়াছে, কখনও তাহা ব্যর্থ হইয়াছে। বঙ্কিমচন্দ্র-কেশবচন্দ্রের বাড়ি রক্ষা পায় নাই, বিদ্যাসাগর-বিবেকানন্দ-নিবেদিতার বাড়ি সংরক্ষিত ও সুসংস্কৃত হইয়াছে। কিন্তু এই বারের দাবির অভিমুখ ভিন্ন। কোনও বিশেষ মনীষীর আবাস রক্ষার জন্য নাগরিকগণ সরব হন নাই, তাঁহারা চাহেন কলিকাতার স্থাপত্যগত চরিত্র অক্ষুণ্ণ রাখিতে উপযুক্ত প্রশাসনিক উদ্যোগ। একদা প্রাসাদনগরী বলিয়া অভিহিত এই শহরের অভিজাত পরিবারের বাসভবনগুলি ছাড়াও এমন অনেক বাড়ি রহিয়াছে যাহা বিশেষ কালপর্বের স্থাপত্য-সাক্ষ্য বহন করিতেছে। বিশেষ করিয়া উত্তর ও মধ্য কলিকাতায় ঊনবিংশ শতকে এবং দক্ষিণ কলিকাতায় বিংশ শতকের প্রথমার্ধে নির্মিত মধ্যবিত্ত পরিবারের বাড়িগুলির নানা বৈশিষ্ট্যের প্রতি আগ্রহীরা দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছেন। আশঙ্কার কথা, প্রোমোটারের থাবা ধারাবাহিক ভাবে এই বাড়িগুলির উপরেই সর্বাধিক পড়িতেছে, এবং ফলত শহর দ্রুত বৈচিত্রহীন বহুতলে পূর্ণ হইয়া উঠিতেছে।

এমনটি হইবার কথা ছিল না। ১৯৯৭ সালে ঐতিহ্যবাহী ভবনের তালিকা প্রস্তুত করিবার উদ্দেশ্যে তৎকালীন রাজ্য সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। একই বছরে ঐতিহ্যবাহী ভবন সংরক্ষণের জন্য কলিকাতা পুরসভার সংশ্লিষ্ট আইনেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হয়। ১৯৯৮ সালেই বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টটি পুরসভা নীতিগত ভাবে গ্রহণ করে। তবে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভবনগুলির চরিত্র অনুযায়ী কোনও গ্রেডেশন বা শ্রেণিবিভাগ করা হয় নাই। সেই শ্রেণি-নির্ধারণে আরও এক দশক কাটিয়া যায়। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে পুরসভা প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি হিসাবে চিহ্নিত ভবনগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করে। এই দুই শ্রেণিতে ঠাঁই হইয়াছিল মাত্র ৯১৭টি স্থাপত্যের, যেগুলি ভাঙিয়া পুনর্নির্মাণের আওতায় আসিবে না। যেগুলি ভাঙিবার অনুমতি মিলিতে পারে, সেই তৃতীয় শ্রেণির স্থাপত্যগুলি লইয়া কোনও পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত আজও হয় নাই।

অর্থাৎ লৌহবাসরে নানা ছিদ্র রহিয়া গিয়াছে। প্রথমত ৯১৭টি স্থাপত্য কলিকাতা মহানগরের সংরক্ষণযোগ্য ভবনের সংখ্যার তুলনায় নগণ্য। দ্বিতীয়ত ইতিমধ্যেই এই তালিকার বহু স্থাপত্য বিলুপ্ত হইয়াছে বা বিলুপ্তির দিন গনিতেছে। তৃতীয়ত পুরসভার ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটি যথেচ্ছ ভাবে বিভিন্ন স্থাপত্যের শ্রেণি পরিবর্তন করিয়া সেগুলি ভাঙিয়া ফেলিবার পথ সুগম করিতেছে, এমন অভিযোগও উঠিয়াছে। এমতাবস্থায় ঐতিহ্য-তালিকাটির পরিমার্জন প্রয়োজন। এক দিকে যেমন তাহার জন্য গঠন করিতে হইবে একটি উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ দল যাঁহারা শহরটিকে হাতের তালুর মতো চিনিবেন, অন্য দিকে তাঁহাদের সিদ্ধান্ত রূপায়ণের জন্য প্রয়োজন হইবে একটি নিরপেক্ষ ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির, যেখানে পুরসভা ও সরকারি দফতরের আধিকারিকবর্গ কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর অনুকূলে তাঁহাদের মতামত চাপাইয়া দিবেন না। এক কথায়, প্রয়োজন প্রশাসনের সদিচ্ছা।

heritage houses Reformation Administration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy