Advertisement
E-Paper

৪ টাকা ১৩ পয়সা

অর্থমন্ত্রী মহাশয়কে থলি হাতে বাজারে যাইতে হয় না, কিন্তু বাজারদর সম্বন্ধে খানিক ধারণা নিশ্চয় আছে। ৪ টাকা ১৩ পয়সায় কী পাওয়া যায় এবং যায় না, তিনি জানিবেন।

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:১১

শিশুদের ভোট নাই। অতএব, তাহাদের কথা ভাবিবার দায়ও অর্থমন্ত্রীর নাই। অরুণ জেটলির যে বাজেটের ধাক্কায় শেয়ার মার্কেট শুইয়া পড়িয়াছে, তাহাতেও শিশুদের বরাদ্দ যথাপূর্বম্। আরও স্পষ্ট করিয়া বলিলে, বরাদ্দ কমিয়াছে। গত দুইটি বাজেটে মোট বরাদ্দের ৩.৩২ শতাংশ শিশুদের ভাগে পড়িয়াছিল। এই বার, তাহা কমিয়া ৩.২৩ শতাংশ হইয়াছে। অঙ্গনওয়াড়িতে বরাদ্দ বাড়িয়াছে ৭.১%, মিড-ডে মিলে ৫%। হিসাবগুলি টাকার অঙ্কে। মূল্যস্ফীতির হার বাদ দিলে কী পড়িয়া থাকে, অরুণ জেটলিও জানেন। মিড-ডে মিলের জন্য প্রাথমিক স্তরের ছাত্রপিছু বরাদ্দের পরিমাণ এখন ৪ টাকা ১৩ পয়সা। এই বাজেটে বরাদ্দ বাড়ে নাই। আইন বলিতেছে, সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ডিম দিতেই হইবে, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন দিতে হইবে প্রতি দিন। শিশুদের স্বাস্থ্যের বিকাশ যাহাতে ঘটে, নিয়ম রচনা করিবার সময় সে-দিকে খেয়াল রাখিতে রাষ্ট্র ভোলে নাই।

অর্থমন্ত্রী মহাশয়কে থলি হাতে বাজারে যাইতে হয় না, কিন্তু বাজারদর সম্বন্ধে খানিক ধারণা নিশ্চয় আছে। ৪ টাকা ১৩ পয়সায় কী পাওয়া যায় এবং যায় না, তিনি জানিবেন। তাঁহারা মিড-ডে মিল বস্তুটিকে এক নিষ্ঠুর রসিকতায় পর্যবসিত করিলেন। এবং, সেই ইয়ার্কিটি মারিলেন শিশুদের সহিত— প্রত্যাঘাত করিবার তিলমাত্র সামর্থ্যও যাহাদের নাই। ভারতে এখনও প্রতি দশটির মধ্যে চারটি শিশুর উচ্চতা বয়সের অনুপাতে কম; প্রায় সমসংখ্যক শিশুর ওজন বয়সের তুলনায় কম। তাহাদের মুখের গ্রাস কাড়িয়া অরুণ জেটলিরা কোন ভারত গড়িবেন, বাজেট বক্তৃতায় সেই উত্তর নাই। তবে, অনুমান করা যায়— অপুষ্টি, এবং তজ্জনিত অসুস্থতার সহিত লড়িয়া যাহারা সাবালক হওয়া অবধি বাঁচিয়া থাকিবে, রাজনীতির কৃপাদৃষ্টি হইতে তাহারা তখন বঞ্চিত হইবে না। ভোটের বিনিময়ে তাহারা অনুগ্রহ কিনিবে। এখন ভোট নাই, অতএব অনুগ্রহও নাই।

যে নেতারা আর্থিক বৃদ্ধির মালা না জপিয়া জলস্পর্শ করেন না, যাঁহারা কথায় কথায় ভারতের ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’-এর কথা স্মরণ করাইয়া দেন, তাঁহারাই শিশুর পুষ্টি এবং শিক্ষার প্রশ্নগুলিকে সম্পূর্ণ অবহেলা করিতে পারেন— ইহাই বলিয়া দেয়, অর্থশাস্ত্রে তাঁহাদের জ্ঞান কতখানি অগভীর। তাঁহারা মানবসম্পদের গোড়া কাটিয়া বৃদ্ধির গাছে ফলের আশা করিতেছেন। কিন্তু, শিশুর অধিকারের প্রশ্নটিকে আর্থিক বৃদ্ধির পরিণামের অঙ্কে দেখিব কেন? শিশুর অধিকার রক্ষা করা— কোনও পরিণামের কথা না ভাবিয়াই— একটি অনস্বীকার্য কর্তব্য। রাষ্ট্রের সহিত নাগরিকের সম্পর্ককে যদি একটি চুক্তির আকারে দেখা যায়, তাহার গোড়ার কথা, রাষ্ট্র নাগরিকের স্বার্থরক্ষা করিবে। এবং, কোনও ক্ষেত্রে যদি এক নাগরিকের স্বার্থের সহিত অন্য নাগরিকের স্বার্থের সংঘাত ঘটে, তবে রাষ্ট্র দুর্বলতরের পক্ষে দাঁড়াইবে। এই মাপকাঠিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় শিশুদের দাবি যতখানি, আর কাহারও তত নহে। বিশেষত, যে শিশুদের পুষ্টি নির্ভর করিয়া থাকে মিড-ডে মিলের উপর। খাদ্যের অধিকার আইনও এই দাবিকেই স্বীকার করে। অরুণ জেটলির বাজেট, অতএব, নাগরিকের সহিত রাষ্ট্রের চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করিয়াছে। নরেন্দ্র মোদীরা বিলক্ষণ জানেন, শিশুদের স্বার্থহানি করার ন্যায় নিরাপদ অনৈতিকতা আর নাই। কোনও রাজনৈতিক দল এই প্রশ্নটিকে লইয়া বিশেষ মাথা ঘামাইবে না। নাগরিক সমাজও তেমন প্রশ্ন করিবে না। শিশুদের শিক্ষা এবং পুষ্টির খাতে রাষ্ট্র বড় জোর কানাকড়ি বরাদ্দ করিবে, ইহা এমনই দস্তুর হইয়াছে যে তাহার অস্বাভাবিকতা আর দৃষ্টিকটুও ঠেকে না। তাহাদের ভোট নাই, অতএব তাহাদের জন্য কাহারও মাথাব্যথাও নাই। অরুণ জেটলির বাজেট বলিল, ভারতের বিপুল ভূগোলে শিশুদের কোনও দেশ নাই।

Allocation Budget Budget Allocation Children
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy