Advertisement
E-Paper

অপ্রস্তুত

প্রশ্নটি শুধু একদিনের একটি দুর্ঘটনার নহে। মন্দারমণি নামক সমুদ্রসৈকতে দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও সম্পূর্ণ মিলাইয়া যায় নাই। সেই দুর্ঘটনাও আমোদের ফাঁক গলিয়াই ঘটিয়াছিল।

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ০০:৪৩
সেই দুর্ঘটনার ছবি।

সেই দুর্ঘটনার ছবি।

প্রশাসন আমোদ শিখিয়াছে, দায়িত্বজ্ঞান শেখে নাই। কলিকাতার উপকণ্ঠের ইকো পার্ক গত কয়েক বৎসরে শহরের অন্যতম জনপ্রিয় আমোদকেন্দ্রে পরিণত হইয়াছে। এলাহি ব্যবস্থা। শিশুদের জন্য যে বিশেষ প্রাঙ্গণটি রহিয়াছে, তাহাতে হরেক খেলা। সবই আপাত-নিরাপদ। তেমনই একটি আয়োজন রবিবারের ঝড়ে উড়িয়া গেল। বারোটি শিশু খেলিতেছিল। তাহারা ছিটকাইয়া পড়িল। প্রত্যেকেই কম-বেশি আহত, একাধিক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত হিডকো-র কর্তারা যে যুক্তিগুলি খাড়া করিয়াছেন, সেগুলি যথাক্রমে— এক, সংশ্লিষ্ট খেলাটি এক বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করিত; এবং দুই, ঘণ্টায় আশি কিলোমিটার বেগে হাওয়া বহিলে তাহাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভিন্ন আর কী-বা বলা চলে। মন্ত্রিবর জানাইয়াছেন, শিশুদের চিকিৎসার খরচ হিডকো বহন করিবে। প্রশাসনের দায়িত্ব, অতএব ফুরাইল। ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ যে ঘটিতে পারে, এই কথাটি কর্তাদের বুঝি অজানা ছিল। তাহার জন্য যে সতর্ক হইতে হয়, ঝড় আসিবার উপক্রম হইলে বিপজ্জনক খেলা তৎক্ষণাৎ বন্ধ করিয়া দিতে হয়, এবং সেই দায়িত্বটি যে সম্পূর্ণ পার্কের পরিচালকদের, এই কথাগুলিও তাঁহারা জানিতেন না। অজ্ঞতা যখন এতই বিপুল, তখন আর দায়িত্বে থাকা কেন? কোনও বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দিলে তাহারা সুরক্ষাবিধি মানিতেছে কি না, সেই দিকে নজর রাখিবার কাজটিও কর্তৃপক্ষের। পার্কটি খেলিবার জন্য, শিশুদের জীবন লইয়া খেলা করিবার জন্য নহে। কর্তৃপক্ষ যদি দায়িত্ব লইতে অক্ষম হয়, তবে আমোদ বরং তোলাই থাকুক।

প্রশ্নটি শুধু একদিনের একটি দুর্ঘটনার নহে। মন্দারমণি নামক সমুদ্রসৈকতে দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও সম্পূর্ণ মিলাইয়া যায় নাই। সেই দুর্ঘটনাও আমোদের ফাঁক গলিয়াই ঘটিয়াছিল। এবং, সেই ক্ষেত্রেও প্রশাসনের নির্লিপ্তি ছিল বিস্ময়কর। দুইটি দুর্ঘটনায় ফারাকও অবশ্য আছে। মন্দারমণির ক্ষেত্রে সরকারি দফতরের কোনও প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল না। কিন্তু, বেসরকারি সংস্থা, বা এমনকী ব্যক্তি-ব্যবসায়ীও কোনও নিয়ম ভাঙিতেছে কি না, সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করিতেছে কি না, সেই দিকে নজর রাখাই তো প্রশাসনের কাজ। দুর্ঘটনা যে ঘটিতে পারে, সেই সম্ভাবনাটিকে পাত্তা না দেওয়াই এই ধরনের বিপদের মূলে। সত্য, দুর্ঘটনা প্রত্যহ ঘটে না। মনস্তাত্ত্বিকরা বলিবেন, সেই কারণেই দুর্ঘটনার সম্ভাব্যতাকে মানুষের মন হিসাব করিতে পারে না। কোনও একটি বিপদ ঘটিয়া যাওয়ার পর কিছু দিন সম্ভাবনাটিকে বাড়াইয়া দেখে, এবং তাহার পর প্রয়োজনের তুলনায় ঢের কম গুরুত্ব দেয়। ফলে, বিপদ ঠেকাইতে যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে কি না, তাহাও নিশ্চিত করিয়া উঠিতে পারে না। বিপদের গুরুত্ব বুঝিতে না পারা মানবস্বভাবের একটি গঠনগত খামতি। তাহাকে ঢাকিবার একটিই উপায় আছে। নিরাপত্তার ব্যাকরণ মানিয়া চলা। কোনও কাজ বিপজ্জনক কি না, সেই বিচারের দায়িত্ব প্রশাসনের সাধারণ কর্মীদের নহে। তাঁহাদের কাজ, যে নিয়মগুলি আছে, তাহার প্রতিটি মানা হইতেছে কি না, সেটুকু দেখা। কর্মীরা যাহাতে নিজেদের কাজটি ত্রুটিহীনভাবে করেন, তাহা নিশ্চিত করিবার দায় কর্তাদের। অজুহাত খাড়া করা ছাড়াও তাঁহাদের অন্য কাজ আছে, কথাটি স্মরণ করাইয়া দেওয়া ভাল।

Amusement park Eco Park Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy