Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আত্মমর্যাদার বোধটাও কি লোপ পাচ্ছে?

সৌজন্যের প্রশ্নটা আর তুলছিই না, কারণ সৌজন্য লঙ্ঘনের চেয়েও অনেকখানি নীচে নেমে গিয়েছে বিষয়টা। শালীনতার গণ্ডিটাকেও টপকে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়াবতী সম্পর্কে অমিত শাহের সাম্প্রতিক মন্তব্য। তাই প্রশ্ন করছি, শালীন-অশালীনের মাঝে যে স্পষ্ট ভেদরেখাটা রয়েছে, সেটাও কি আর দৃষ্টিগোচর হয় না আমাদের?

পরিবর্তন মহা র‌্যালির মঞ্চে অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

পরিবর্তন মহা র‌্যালির মঞ্চে অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:২০
Share: Save:

সৌজন্যের প্রশ্নটা আর তুলছিই না, কারণ সৌজন্য লঙ্ঘনের চেয়েও অনেকখানি নীচে নেমে গিয়েছে বিষয়টা। শালীনতার গণ্ডিটাকেও টপকে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়াবতী সম্পর্কে অমিত শাহের সাম্প্রতিক মন্তব্য। তাই প্রশ্ন করছি, শালীন-অশালীনের মাঝে যে স্পষ্ট ভেদরেখাটা রয়েছে, সেটাও কি আর দৃষ্টিগোচর হয় না আমাদের?

স্পর্ধা এবং প্রতিস্পর্ধা গণতান্ত্রিক রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু তার জের সৌজন্য ভুলিয়ে দেবে? শালীনতার সীমা অক্লেশে অতিক্রম করিয়ে দেবে? রাজনীতির যেমন তেমন স্তর থেকে আবার নয়, শীর্ষ স্তর থেকেই উৎসারিত এই অশালীন উল্লঙ্ঘন। কার মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক? দেশের শাসক দলের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর মন্তব্য ঘিরে। কাদের সম্পর্কে তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য? দেশেরই অন্য দুই জাতীয় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদাধিকারীদের সম্পর্কে। এ কোন ভব্যতা অমিত শাহ? রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় মর্যাদার ন্যূনতম বোধটাও থাকবে না?

বিজেপি সভাপতির মন্তব্য যতটা তাঁর প্রতিপক্ষের জন্য মর্যাদাহানিকর, তার চেয়েও বেশি করে মর্যাদাহানিকর তাঁর নিজের জন্য। যে দায়িত্বশীল পদে তিনি আসীন, সেই পদের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হলে, এমন মন্তব্য বিজেপি সভাপতি করতে পারতেন না।

প্রেক্ষাপট আরও একটা রয়েছে— ভারতীয় সামাজিক প্রেক্ষাপট। নারী-পুরুষের প্রতি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলার যে অভ্যাস ভারতীয় সমাজের এক বড় অংশে আজও রয়েছে, নারীকে পুরুষের চেয়ে পশ্চাৎপদ, হীনবল ভাবার যে সামাজিক বদভ্যাস এখনও রয়ে গিয়েছে, তার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে অমিত শাহের মতো সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদাসীন ব্যক্তি যখন দুই নারী সম্পর্কে এমন কুরুচিকর মন্তব্য অক্লেশে ছুড়ে দেন, তখন সে মন্তব্যের দ্যোতনা শুধু রাজনৈতিক অশালীনতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সামাজিক নেতিটাকেও প্রকাণ্ড রূপে সামনে এনে দেয়।

২০১১ সালে এ বঙ্গের রাজনৈতিক ময়দানেও এই ধরনের কুরুচিকর মন্তব্য বেশ কয়েক বার ধ্বনিত হয়েছিল। জনপরিসরে সে সব মন্তব্য যত্পরোনাস্তি নিন্দিত এবং প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আবার সেই কুরুচির সাক্ষী হতে হল।

দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তরে পৌঁছেও যদি এই কথাগুলো খেয়াল না থাকে, তা হলে নিম্নবর্তী স্তরগুলিতে রাজনৈতিক মূল্যবোধের কোন অবনমনের সাক্ষী হতে হবে ভবিষ্যতে, একটু ভেবে দেখবেন অমিত শাহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE