Advertisement
E-Paper

বিপজ্জনক বাঁক! এখনও পাশ ফিরে শুয়ে থাকব?

বিহারে বজরঙ্গ দল নতুন ‘রঙ্গ’ দেখিয়েছে। এক সাংবাদিকের গাড়ি থামিয়ে বজরঙ্গিদের নির্দেশ— ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে হবে। না বললে গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। ঘটনাটা সাংবাদিকের সঙ্গে ঘটেছে, বড় বিষয় এটা নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫৫
বিহারে বজরঙ্গ দল নতুন ‘রঙ্গ’ দেখিয়েছে। —ফাইল চিত্র।

বিহারে বজরঙ্গ দল নতুন ‘রঙ্গ’ দেখিয়েছে। —ফাইল চিত্র।

একটার পর একটা অঘটন ঘটছিল, আমরা একটু চমকে উঠছিলাম, তার পর আবার পাশ ফিরে শুয়ে পড়ছিলাম। উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে, পশ্চিমে, মধ্য ভাগে— দেশের সব প্রান্ত থেকেই বিদ্বেষজনিত অঘটনগুলোর খবর আসছিল। কিন্তু আমরা নিজেরাই নিজেদের আশ্বস্ত করছিলাম। বলছিলাম, ও সব বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ঘটনা, কোনও অবিচ্ছিন্ন প্রবণতা নয়। অন্ধ হলে কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকে না, আরও এক বার প্রমাণিত হল সে কথা। সঙ্কীর্ণতা, গোঁড়ামি আর বিদ্বেষের প্রবণতা এ বার নিজের উত্তরণ ঘটিয়ে নিল। এত দিন ফতোয়া আসত— কী কী করা যাবে না, তা নিয়ে। এ বার শুরু হল— এ দেশে থাকতে হলে এই এই করতেই হবে।

বিহারে বজরঙ্গ দল নতুন ‘রঙ্গ’ দেখিয়েছে। এক সাংবাদিকের গাড়ি থামিয়ে বজরঙ্গিদের নির্দেশ— ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে হবে। না বললে গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। ঘটনাটা সাংবাদিকের সঙ্গে ঘটেছে, বড় বিষয় এটা নয়। এই ঘটনায় লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ফতোয়ার ধরনটা কী ভাবে বদলাতে শুরু করেছে। এত দিন গো-ভক্তির নামে, ধর্মের নামে, বর্ণের নামে বা ভাষার নামে স্বঘোষিত বিধাতারা বিধান বা নিদান দিতেন। সে বিধান বা নিদানে বলে দেওয়া হত, কী কী নিষিদ্ধ। যেমন অমুক রাজ্যে থাকতে গেলে, গো-মাংস ভক্ষণ চলবে না। অমুক অঞ্চলে থাকতে গেলে, বাংলায় বা হিন্দিতে কথা বলা যাবে না। অমুক পাহাড়ে ব্যবসা করতে গেলে, তমুক হরফে দোকানের সাইনবোর্ড লেখা দণ্ডণীয়। এমন আরও অনেক কিছু। সেই নিষেধাজ্ঞা জারির ধাপটা পেরিয়ে এ বার অবশ্য-পালনীয় আচরণ বিধি নির্দিষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টাটাও শুরু হয়ে গেল। এ দেশে থাকতে হলে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেই হবে, বজরঙ্গ দলের দাবি সম্ভবত এ রকমই। কোন পথে আমরা এগোচ্ছি, আঁচ করা যাচ্ছে কি?

ফ্যাসিবাদ এই ভাবেই ধাপে ধাপে এগোয়, এই ভাবেই অখণ্ড স্বৈরাচারের পথ প্রশস্ত করে। যে ধর্মের নামেই হোক, যে বর্ণের নামেই হোক, যে ভাষার নামেই হোক, যে জনগোষ্ঠীর নামেই হোক— ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সব সময়ই বিপজ্জনক। প্রবণতাটাকে চিনে নেওয়া তাই খুব জরুরি। অনেকে তা চিনতে দিতে চান না। তাঁরা বলেন, হিন্দুত্বের মূল ধারণায় বা মূল স্রোতে কোনও কলুষ নেই। তাঁরা বলেন, এই সব অঘটনের দায় কিছু দিকভ্রান্ত গোষ্ঠীর। এতে হিন্দুত্বের মূল ধারণা বা মূল স্রোত কলুষিত হয় না বলেও সেই স্বঘোষিত মূল স্রোতের ধ্বজাধারীদের দাবি। এই তত্ত্বেও কি আমরা বিশ্বাস রাখব? বিদ্বেষ এবং ধর্মীয় নির্বিকল্পতা প্রতিষ্ঠার প্রবণতাটা যে নতুন বিপজ্জনক বাঁকটা নিল, তাকেও কি বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ঘটনা ভেবে নিয়েই আশ্বস্ত হব? আবার কি পাশ ফিরে শুয়ে পড়ব? যদি তা-ই করি, যদি আজও না জাগি, তা হলে ঘোর ভারাক্রান্ত এক ভবিষ্যতের দায় কিন্তু আমাদের সকলের ঘাড়েই বর্তাবে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Bajrang Dal বজরং দল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy