Advertisement
E-Paper

ছুরির ফলাটা এক দিন আমার বুকেই বিঁধবে না তো?

ঔদাসীন্য বলব? আমানবিকতা বলব? নাকি কল্পনাতীত আত্মকেন্দ্রিকতা বলব? যা-ই বলি, যে নামেই ডাকি, লজ্জা কি লুকোতে পারব? প্রকাশ্য দিবালোক, জনবহুল রাস্তা। সর্বসমক্ষে ছুরি নিয়ে তরুণীর উপর হামলা যুবকের। আঘাতের পর আঘাত, তীব্র আর্তনাদ। তাও বিনা বাধায় চলতে থাকল ছুরিকাঘাত। চলতে থাকল তত ক্ষণ, যত ক্ষণ না নিথর হল দেহ।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৪

ঔদাসীন্য বলব? আমানবিকতা বলব? নাকি কল্পনাতীত আত্মকেন্দ্রিকতা বলব? যা-ই বলি, যে নামেই ডাকি, লজ্জা কি লুকোতে পারব?

প্রকাশ্য দিবালোক, জনবহুল রাস্তা। সর্বসমক্ষে ছুরি নিয়ে তরুণীর উপর হামলা যুবকের। আঘাতের পর আঘাত, তীব্র আর্তনাদ। তাও বিনা বাধায় চলতে থাকল ছুরিকাঘাত। চলতে থাকল তত ক্ষণ, যত ক্ষণ না নিথর হল দেহ। চলতে থাকল তার পরেও, যত ক্ষণ না ঘাতক নিশ্চিত হল তরুণীর মৃত্যুর বিষয়ে। কেউ বাধা দিল না।

এই প্রথম নয়। আগেও ঘটেছে। পর পর ঘটছে। আমাদের সামনেই কখনও ঘাতকের হামলায় প্রাণ যাচ্ছে সহ-নাগরিকের, কখনও দুর্ঘটনাগ্রস্ত দশায় রাস্তায় পড়ে থাকতে থাকতে তার মৃত্যু হচ্ছে, কখনও পথচলতি অসুস্থতায় ধীরে ধীরে সে মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়ছে। আমরা কেউ বাধা দিচ্ছি না, কেউ সক্রিয় হচ্ছি না, কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি না।

অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং সহজাত মানবিক বোধগুলোও কি লোপ পেয়ে যাচ্ছে আমাদের! একটা মানুষ একটু আগেও জীবন্ত ছিল। আমার পাশেই হাঁটছিল রাস্তায়। আচমকা তার উপর মৃত্যুর অস্বাভাবিক হানাদারি দেখছি। আর্তনাদে কেঁপে উঠছি। বুঝতে পারছি আর কয়েকটা মুহূর্ত কাটলেই ওর শরীর থেকে প্রাণটা বেরিয়ে যাবে। জলজ্যান্ত মানুষটা একটা নিথর শবে বদলে যাবে, জড় পদার্থে পরিণত হবে। তবু কেউ পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি, কেউ ভয়ে এগোচ্ছি না, কেউ সময় নেই বলে থামছি না, কেউ গোলমালে জড়াতে চাই না বলে দূরে থাকছি। আর চোখের সামনে অসহায় ভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে একটা প্রাণ! একের পর এক প্রাণ!

বার বার এমন হয়, তাও আমরা এগোই না। অথবা, আমরা এগোই না বলেই বার বার এমন হয়।

সেই বিখ্যাত জার্মান কবিতার কথা মনে পড়ছে। ঘাতকের সঙ্গে নিজের দূরত্ব ক্রমশ কমে আসার সেই কবিতা। ঘাতকরা শ্রমিক ইউনিয়নের লোকেদের তুলে নিয়ে গেল। আমি প্রতিবাদ করিনি, কারণ আমি শ্রমিক নই। ঘাতকরা কমিউনিস্টদের মেরে ফেলল। আমি কিছু বলিনি, কারণ আমি কমিউনিস্ট ছিলাম না। ঘাতকরা এক দিন ইহুদিদেরও গ্যাস চেম্বারে ভরে দিল। তাও আমি কিছু বললাম না, কারণ আমার শিরা-ধমণীতে ইহুদি রক্ত প্রবাহিত হয় না। এর পর ঘাতকরা এক দিন আমাকেও তুলে নিয়ে যেতে এল। কেউ বাধা দিল না, কেউ প্রতিবাদ করল না। কারণ প্রতিবাদ করার জন্য আর কেউ ছিলই না।

এই কবিতার নাট্যরূপই আজ যেন অভিনীত হচ্ছে আমাদের ঘিরে। আজ আমরা নীরব, নিষ্ক্রিয়। এমন দিন আসবে না তো, যে দিন ছুরির ফলাটা আমার বুকেই নেমে আসবে এবং আশপাশে সক্রিয় হয়ে ওঠার মতো কাউকে খুঁজে পাব না?

Anjan Bandyopadhyay Newsletter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy