Advertisement
E-Paper

আরও কত দিন এ ভাবেই ভোট দেখতে হবে?

প্রত্যাশিত ভাবেই সন্ত্রাস, মারধর, এজেন্ট বসতে না দেওয়া, বুথের দখল নেওয়া, লাগাতার ছাপ্পা দেওয়া-সহ যাবতীয় নির্বাচনী অনিয়ম, কারচুপি ও গা-জোয়ারির অভিযোগ উঠে এল নানা শিবির থেকে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৪৪
উপনির্বাচন ঘিরে অশান্তি। ফাইল চিত্র

উপনির্বাচন ঘিরে অশান্তি। ফাইল চিত্র

যা হওয়ার, তা হয়ে গিয়েছে সময় মতোই। গণতন্ত্রের শ্বাসনালী যে চেপে ধরা হচ্ছে, তা আঁচ করা যাচ্ছিল উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালীনই। কিন্তু মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে ভয়াবহ দুর্ঘটনাটা যাবতীয় উৎকণ্ঠার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল একই দিনে। হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় আর উত্তর চব্বিশ পরগনার নোয়াপাড়ায় শাসকের দাপটে নাগরিকের অধিকার লুঠতরাজের মুখে পড়েছে বুঝেও তাই খুব হইচই জুড়ে দেওয়ার অবকাশ ছিল না। সহ-নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার বাঁচল কি না, তার খেয়াল রাখা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সহ-নাগরিক নিজে বাঁচলেন কি না, তার খেয়াল রাখা সংশয়হীন ভাবে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গোটা বাংলা অতএব দিনভর চেয়ে ছিল ভাণ্ডারদহ বিলের জলের দিকে। ভোটের বুথের দিকে চোখ ফেরানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সাধারণ বাঙালি ভোটের বুথের দিকে তাকাতে পারলেন কি না, তা অবশ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় এ রাজ্যের ভোটে। ‘সযত্নে’ ভোটকেন্দ্রের এবং ভোটযন্ত্রের খেয়াল রাখতে অভ্যস্ত একটি শ্রেণি এ রাজ্যে অত্যন্ত সুলভ। কোনও এক পরম অধিকারবোধ কাজ করে তাঁদের মধ্যে, ভোটগ্রহণ শুরু হলেই অত্যন্ত দ্রুত ভোটকেন্দ্র এবং ভোটযন্ত্রের ‘দায়িত্ব’ নিজেদের কাঁধে তুলে নেন তাঁরা। এই ‘দায়িত্বশীল’ ভোট-সৈনিকরা উলুবেড়িয়ায় এবং নোয়াপাড়ায় সক্রিয় ছিলেন পুরোদস্তুর। সুতরাং, প্রত্যাশিত ভাবেই সন্ত্রাস, মারধর, এজেন্ট বসতে না দেওয়া, বুথের দখল নেওয়া, লাগাতার ছাপ্পা দেওয়া-সহ যাবতীয় নির্বাচনী অনিয়ম, কারচুপি ও গা-জোয়ারির অভিযোগ উঠে এল নানা শিবির থেকে।

নির্বাচন বা ভোটগ্রহণকে ঘিরে এই দৃশ্য এবং অসন্তোষের ছবি আর কত দিন ধরে দেখব আমরা? এ কথা ঠিক যে, বাংলার নির্বাচনী মেজাজ বরাবরই দেশের অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে আলাদা। দেশের নানা প্রান্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ নির্বাচন দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থা এই রাজ্যে ঢুকেই কেমন যেন অসহায় হয়ে পড়ে বার বার। দশকের পর দশক ধরে ভোট মানেই অশান্তির অঢেল আয়োজন আমাদের কাছে। প্রশ্ন হল, অশান্তির সেই অঢেল আয়োজনকেই কি আমরা আমাদের ‘ভোট-ভবিতব্য’ হিসেবে মেনে নেব? অশান্তির মুখ বার বার দেখছি বলে অশান্তিকেই অবধারিত এবং অপ্রতিরোধ্য বলে ধরে নেব?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

ভোটের নামে এই লুঠ সংস্কৃতির বিরুদ্ধেই তো প্রতিবাদ ছিল। গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে বলেই তো বদলে দেওয়ার ডাক ছিল। ‘পরিবর্তন’ই তো সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু তা হল কোথায়? কী বদলাল? একের পর এক নির্বাচনে এ রাজ্যে বিপুল জয় পাচ্ছে শাসক তৃণমূল। কিন্তু কোনও জয়ই পূর্ণ আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারছে না শাসককে। প্রত্যেক নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস কায়েম করার অভিযোগ উঠছে। প্রতিটি ভোটগ্রহণের তারিখ রক্তাক্ত হচ্ছে। যে কোনও স্তরের নির্বাচনকে ঘিরেই যথেচ্ছ অশান্তি হচ্ছে এবং সে ছবি সংবাদমাধ্যমে দেখানোও হচ্ছে। এই রকম ভোটের অর্থ কী? এই রকম জয়ের মূল্যই বা কী?

আরও পড়ুন: দুই কেন্দ্রে দাপিয়ে বেড়াল শাসকই

রাজনীতি আবহমান কাল ধরে একই গতিতে চলে না। নিজের নিয়মেই রাজনীতি তার গতি বদলায়, গতিপথ বদলায়। এই বদলকে সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখা কোনও রাজনীতিকের পক্ষেই সম্ভব নয়। অতএব রাজনীতিকে বলপূর্বক নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টাও বেশ অনর্থক। এ সত্য যাঁরা উপলব্ধি করেন না, রাজনীতি অচিরেই তাঁদের উপর প্রতিশোধ নিয়ে নেয়। রাজনীতির সে প্রতিশোধ যে খুব একটা সুখকর বিষয় নয়, পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন শাসকরা তা কিন্তু এখন টের পাচ্ছেন।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay By-poll By-election uluberia Noapara নোয়াপাড়া উলুবেড়িয়া উপনির্বাচন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy