প্রতীকী ছবি।
সুরক্ষিত এবং নিরাপদ জীবন প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের ন্যূনতম বা প্রাথমিক চাহিদা ওই সুরক্ষিত এবং নিরাপদ জীবনটুকুই। কিন্তু সেই ন্যূনতম চাহিদাটুকু পূরণ করতেই রাষ্ট্র ব্যর্থ হয় বার বার। শুধু ভারতীয় রাষ্ট্রে নয়, পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রেই এই ব্যর্থতা কম-বেশি রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যর্থতার পরিসর সঙ্কুচিত হয়ে আসবে, এটুকু তো আশা করা যেতেই পারে। বাস্তবতা অবশ্য আশার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে অপঘাত তো লেগেই থাকে। সে আর নতুন কী! সন্ত্রাসবাদ বা চরমপন্থাও বহু বার এ দেশে শ’য়ে শ’য়ে নাগরিকের প্রাণ নিয়েছে। আরও কত নেবে, নিশ্চিত করে বলা যায় না। অর্থাৎ প্রাণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত নয়, সে বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত। এ বার দেখা যাচ্ছে সাধারণ জনতার ক্লেশের উপার্জনটুকুও নিরাপদ নয় মোটেই।
টাকা অরক্ষিত রাখলে লুঠ হতে পারে— এ কথা সকলেরই জানা। যদিও প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, আদর্শ রাষ্ট্রের ধারণায় লুঠের ঠাঁই কোথায়? সে ক্ষেত্রে পাল্টা প্রশ্ন করতে হয়, আদর্শ রাষ্ট্রই বা কোথায়? কিন্তু সে বিতর্ক আপাতত এক পাশেই সরানো থাক। কারণ লুঠ যে হচ্ছে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় বাস্তব। সে লুঠ রোখার বিষয়ে আমাদের রাষ্ট্র বা প্রশাসন যে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী এখনও পর্যন্ত নয়, তা-ও খুব বড় বাস্তব। আর ক্লেশোপার্জিত ধন নিরাপদে গচ্ছিত রাখার জন্য যাকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে আমরা মনে করতাম, সেই ব্যাঙ্ক নিজেই যে অনিরাপদ হয়ে পড়েছে নানা ভাবে, সে-ও সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতির বিহিত দরকার অবিলম্বে। যে কোনও বিপন্নতার সঙ্গে নাগরিক মানিয়ে নেবেন, এমনটা ভেবে নেওয়ার অধিকার বোধ হয় দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদের নেই। মাঝে-মধ্যেই নাগরিকের জীবনে নতুন নতুন অনিরাপত্তা হানা দেবে আর পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবনতি না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র বা সরকার বা প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসবে না, এই অভ্যাসকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না।
আরও পড়ুন: রাজ্যের ১০ হাজার এটিএম সাইবার অপরাধীদের কাছে ‘মুক্তাঞ্চল’
এটিএম জালিয়াতি গুরুতর উদ্বেগ চারিয়ে দিয়েছে নাগরিক পরিসরে। এই জালিয়াতি কলকাতাতেই প্রথম হল, তা নয়। এর আগেও মুম্বই, দিল্লি বা দেশের অন্যত্র এই ধরনের ফন্দি-ফিকির প্রয়োগ করে সাধারণ নাগরিকের টাকা গায়েব করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তার পরেও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কলকাতায় ঘটল কী ভাবে? সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা সেখানেই।
জালিয়াতরা যে এটিএম থেকে টাকা গায়েব করা শুরু করেছে, তা প্রশাসনের জানা ছিল, ব্যাঙ্কগুলিরও জানা ছিল। ক্লোনিং বা স্কিমিং— কোন কোন পদ্ধতিতে এটিএম থেকে বিভিন্ন গ্রাহকের টাকা জালিয়াতরা হাতিয়ে নিতে পারে, তাও প্রশাসনের জানা ছিল, ব্যাঙ্কগুলিরও জানা ছিল। তা সত্ত্বেও ফের জালিয়াতরা সফল হল কী ভাবে? ফের হানাদারি হল কেন? কোন পথ দিয়ে বিপদ আসতে পারে, কী ভাবে আসতে পারে, সব জানা সত্ত্বেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? এই প্রশ্নের জবাব দিতে আজ কেউ এগিয়ে আসবেন বলে মনে হয় না।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
যাঁরা জালিয়াতির শিকার হয়েছেন, ব্যাঙ্ক তাঁদের জানিয়েছে, খোওয়া যাওয়া টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে, জালিয়াতদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে, শিকড়ে পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে। সাধু! সবই অত্যন্ত প্রশংসনীয় বিষয়। কিন্তু প্রশ্নটা তবু করতেই হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলো আগে করা হয়নি কেন? এ ভাবেও যে বিপদ আসতে পারে, তার বিন্দুবিসর্গ আগে জানা ছিল না, এমনটা তো বলার জো নেই!
প্রতারণার শিকার হওয়া গ্রাহকরা টাকা ফেরত পেয়ে গেলেই কি সব মিটে গেল? তার আগে যে হয়রানির মধ্যে তাঁদের পড়তে হল, তার কী হবে? যে ভাবে উদ্বেগের মধ্যে কাটল বেশ কয়েকটা দিন, তার কী হবে? অন্য সব কাজ বকেয়া রেখে অনেককেই যে বেশ কয়েক দিন ধরে এটিএমে-ব্যাঙ্কে-থানায় ছোটাছুটি করতে হল, তার দায় কে নেবে? নাকি সাধারণ নাগরিককে এ সবের মুখোমুখি মাঝেমধ্যে হতেই হবে, এমনটাই ধরে নিয়েছেন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ? শুধু নিরাপত্তা বা সুরক্ষা নয়, সাধারণ নাগরিকের মান-সম্মানের নিশ্চয়তা রয়েছে কি না, এ বার সে প্রশ্নও উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy