Advertisement
E-Paper

ত্রাসের দাসত্বে

‘জাতীয় স্বার্থ’ কথাটি বিজেপি নেতাদের ভারী প্রিয়— যাহাতে দলের নেতৃত্ব, বিশেষত মোদী-শাহ জুটি, অস্বস্তিতে পড়িতে পারে, এমন সবই তাঁহাদের নিকট জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। আর এক মন্ত্রী, হরদীপ সিংহ পুরী, বজাজের অভিযোগটিকে মিথ্যা এবং অভিযোগ জানাইবার ধরনটিকে সরকারের প্রতি অপমানজনক বলিয়া দাগাইয়া দিলেন।

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:৫০
শিল্পপতি রাহুল বজাজের তীব্র সমালোচনা শুরু করে দিল অমিত শাহের দল!

শিল্পপতি রাহুল বজাজের তীব্র সমালোচনা শুরু করে দিল অমিত শাহের দল!

হাতেনাতে প্রমাণ যাহাকে বলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নিকট, অতি বিনীত ভঙ্গিতে, যে আশঙ্কার কথা প্রকাশ করিয়াছিলেন শিল্পপতি রাহুল বজাজ, বিজেপির মন্ত্রী-নেতারা তাহাকে সত্য প্রমাণ করিতে প্রাণপাত করিলেন। নির্মলা সীতারামন বলিলেন, নিজের ধারণার কথা এই ভাবে প্রকাশ্যে বলা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী হইতে পারে। ‘জাতীয় স্বার্থ’ কথাটি বিজেপি নেতাদের ভারী প্রিয়— যাহাতে দলের নেতৃত্ব, বিশেষত মোদী-শাহ জুটি, অস্বস্তিতে পড়িতে পারে, এমন সবই তাঁহাদের নিকট জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। আর এক মন্ত্রী, হরদীপ সিংহ পুরী, বজাজের অভিযোগটিকে মিথ্যা এবং অভিযোগ জানাইবার ধরনটিকে সরকারের প্রতি অপমানজনক বলিয়া দাগাইয়া দিলেন। বিজেপি নেতা জিভিএল নরসিংহ রাও বিস্মিত হইলেন— এক জন শিল্পপতি কেন বাণিজ্যের প্রসঙ্গ ছাড়িয়া গোসন্ত্রাস বা প্রজ্ঞা ঠাকুরের প্রসঙ্গে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করিবেন! তবে তিনি নিশ্চয় ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর সদস্য! আইটি সেলের সেনাপতি ঘোষণা করিলেন, কংগ্রেসের প্রতি অনুগত বলিয়াই বজাজ মিথ্যার জাল বুনিতেছেন। তবে, বজাজ যাঁহার নিকট অভিযোগ করিয়াছিলেন, এবং যাঁহার শাসনকাল সম্বন্ধে অভিযোগ, সেই দুই জন চুপ। সম্পূর্ণ চুপ। এই নীরবতায় যদি রাহুল বজাজের শিরদাঁড়া বহিয়া শীতল স্রোত নামে, খুব দোষ দেওয়া কঠিন। কিরণ মজুমদার শ’ ব্যতীত আর কোনও শিল্পপতি কেন প্রকাশ্যে বজাজকে সমর্থন করেন নাই, তাহাও বুঝিতে কষ্ট হয় না। বজাজ মৃদু ভাষায় যে ভয়ের রাজত্বের কথা বলিয়াছেন, আসলে তাহা ততখানি মৃদু নহে। ভারতীয় শিল্পমহল এক সুতীব্র আতঙ্কে বাঁচিতেছে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ যে নিজের লেখায় এবং বক্তৃতায় একাধিক বার এই ভয়ের প্রসঙ্গ টানিয়াছেন— শেষ বার তাহা উল্লেখ করিয়াছেন রাহুল বজাজের ঘটনার ঠিক আগের দিন— তাহাকে সমাপতন বলা মুশকিল। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুও কার্যত একই কথা বলিয়াছেন— তাঁহার কথার মূল সুর ছিল ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় বিশ্বাসের অভাব ঘটিতেছে। শিল্পমহলকে সন্দেহের চোখে দেখা, মুষ্টিমেয় লগ্নিকারী ব্যতীত আর প্রত্যেকের প্রতিটি সিদ্ধান্ত বা কথার পিছনে ভিন্নতর উদ্দেশ্যের সন্ধান করা— শাসক দলের এই অভ্যাসগুলির কারণেই শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বাসে ঘাটতি পড়িয়াছে। এবং, বিজেপি নেতারা সম্ভবত অবাক হইবেন, কিন্তু ঘটনা হইল, বিশ্বাসের অভাব অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি করে। যে জমানায় প্রশ্ন করিবার অধিকার নাই, সরকারি নীতির আগা-গোড়া বুঝিবার সুযোগ নাই, সর্বোপরি যেখানে সর্বদা হেনস্থা হওয়ার ভয়— সেখানে কেহ লগ্নির ঝাঁপি উপুড় করিতে সাহস করেন না। কেননা, যে সরকারকে প্রশ্ন করা চলে না, তাহাকে বিশ্বাস করাও কঠিন। ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় বৃদ্ধির হার কেন প্রবল বেগে হিন্দু রেট অব গ্রোথ-এর অভিমুখে ছুটিতেছে, কাল না হউক পরশুর পরের দিন নরেন্দ্র মোদীরা নিশ্চয় সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজিবেন। নেহরুর দোষ কতখানি, সাড়ে চার শতাংশ বৃদ্ধির হার প্রকৃত প্রস্তাবে ইউপিএ জমানার তুলনায় ভাল কি না— এই জাতীয় পরিচিত ছক সম্পূর্ণ হইলে তাঁহারা রাহুল বজাজের কথা ভাবিতে পারেন। অথবা মনমোহন সিংহ, কৌশিক বসু, রঘুরাম রাজনদের কথা। কেহ তাঁহাদের সাবধান করিয়া দেয় নাই, ত্রাসের রাজত্বের বিপদের কথা বুঝাইয়া বলেন নাই, এমন দাবি করিবার উপায় তাঁহাদের থাকিবে না। সাইবার সেলের অস্ত্রে তাঁহারা ‘শত্রু’ বধ করিবেন, না কি শিল্পমহলের উদ্বেগকে প্রকৃত গুরুত্ব দিবেন, সেই সিদ্ধান্ত তাঁহাদের করিতে হইবে। প্রশ্নটি নির্মলা সীতারামন বা হরদীপ সিংহ পুরীকে লইয়া নহে। প্রশ্ন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বিবেচনার। দুর্জনে বলিবে, তাঁহারা সামাজিক ক্ষেত্রে ভয়ের কারবারি। কিন্তু, রাজনীতির সেই অস্ত্র যে অর্থনীতির ময়দানে বিপরীত ফলদায়ী, এই কথাটি তাঁহারা বুঝিলে মঙ্গল।

Rahul Bajaj Amit Shah Nirmala Shitaraman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy