Advertisement
E-Paper

ইতির বিরুদ্ধে এই স্পর্ধা ভাবনার দৈন্যই প্রকট করে

মহম্মদ আলি পার্ক পুজো উদ্যোক্তারা হই হই ফেলে দিয়েছেন। দশপ্রহরণধারিনীর পায়ের তলায় অসুরের নির্দিষ্ট আসনটিতে স্টেথোস্কোপ কানে ডাক্তারকে বসিয়ে দিয়ে এক ঢিলে দুই বা তিন বা চার পাখি মেরেছেন তাঁরা। অঙ্কটা কঠিন নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:১৩
সেই পোস্টার।— নিজস্ব চিত্র।

সেই পোস্টার।— নিজস্ব চিত্র।

অগণিত সহৃদয় চিকিৎসকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী আমরা। কলঙ্কের দায় অর্বাচীনের। মোচনের দায় আমাদের সবার।

স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটার জন্য ভিন্ন প্রস্তুতির প্রয়োজন। প্রয়োজন সাহসের এবং পরিশ্রমের ক্ষমতার। অস্বীকারের সাহস, প্রচলিতের বিরুদ্ধে যাওয়ার স্পর্ধা এবং অসম লড়াইয়ের যুঝবার মতো শক্তি থাকার দরকার হয় তার জন্য। অনেকের পক্ষেই সেটা সম্ভব হয় না। কেন সম্ভব হয় না, তা বোঝাও কঠিন হয় না। কিন্তু যেটা বোঝা সম্ভব হয় না, স্রোতকে অন্যায় জেনেও সেই পথে সাঁতরে জলটাকে আরও একটু ঘোলা করার পিছনে ঠিক কোন মানসিকতা কাজ করে? সস্তার দৃষ্টি আকর্ষণ? অথবা রাজার আশীর্বাদ যাচনা?

মহম্মদ আলি পার্ক পুজো উদ্যোক্তারা হই হই ফেলে দিয়েছেন। দশপ্রহরণধারিনীর পায়ের তলায় অসুরের নির্দিষ্ট আসনটিতে স্টেথোস্কোপ কানে ডাক্তারকে বসিয়ে দিয়ে এক ঢিলে দুই বা তিন বা চার পাখি মেরেছেন তাঁরা। অঙ্কটা কঠিন নয়। মাস ছয়-সাত আগে, মানে বড় পুজোর প্রাথমিক পরিকল্পনা যখন শুরু হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি হাসপাতাল কর্তাদের ডেকে কড়া বার্তা দিলেন। হাসপাতালগুলো জুড়ে তুমুল আলোড়ন, স্বাস্থ্য পরিষেবার নামে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ব্যবসা করার প্রবণতা নিয়ে সমাজ জুড়ে বিতর্ক, রাজনীতিকদের ধমকসমক, বাসে-ট্রামে আলোচনা— এই সব যখন চলছে, মহম্মদ আলি পার্ক পুজো কমিটি তখনই স্রোতটি বুঝে গিয়েছিলেন। অতএব পানসিটি ভাসিয়ে দিয়েছিলেন স্রোতে, অসুরের স্টেথোস্কোপটির বায়নাও হয়ে গিয়েছিল তখনই।

অতএব, বিস্মরণের মুহূর্তটিও শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন। কত লক্ষ চিকিৎসক বিশ্ব জুড়ে, এই ভারত, এই রাজ্য জুড়ে কাজ করে চলেছেন, মৃত্যুর সঙ্গে কঠিন লড়াইয়ে জীবন ছিনিয়ে আনছেন কত লক্ষ মানুষের, দুরারোগ্য কত ব্যাধি কী অমানুষিক প্রয়াসে নির্মূল করা যাচ্ছে— এই সব সত্য এক লহমায় ভুললাম আমরা! প্রতিটি পেশাই ভাল-মন্দ মানুষে ভরা। কিছু খারাপ সব ইতিকে ধ্বংস করে দেবে? এক স্পর্ধা দেখাল মহম্মদ আলি পার্ক। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, তা ইতির বিরুদ্ধে।

স্রোতের বিপরীতে যেতে না পারেন, স্রোতকে ভুল জেনেও তাতে ভাসাটা কল্যাণকর নয়। কিছুই দেয় না এই ধরনের কাজ। চূড়ান্ত যাচনা যদি আশীর্বাদ হয়, তবে তা-ও পাওয়া যায় না।

এই বাংলা কল্পনা-চেতনা-ভাবনাকে ক্রমাগত উপরের দিকে নিয়ে চলার যাত্রা করেছে। ভাবনার এই দৈন্য সেই বাংলার উত্তরাধিকার নয়।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Mohammad Ali Park Puja Durga Puja Controversy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy