Advertisement
E-Paper

ক্রীড়া ও ‘যুব’কল্যাণ

প্রশ্নটিকে দুই প্রান্ত হইতে দেখা সম্ভব। এক প্রান্তে আছে বাজার। ক্রিকেট ব্যতীত অন্য কোনও খেলার সেই বাজারই নাই, যাহার জোরে পরিকাঠামো গড়িয়া উঠিতে পারে। ব্যাডমিন্টন বা টেবিল টেনিসের ন্যায় খেলায় টাকা তুলনায় ঢের কম।

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৭ ০০:২৭

পশ্চিমবঙ্গ হইতে না হয় আর আইএএস অফিসার হয় না। না হয় এই রাজ্যে আর সফল বিনিয়োগকারীর সন্ধান মিলে না। বিদ্যাচর্চার তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য নিদর্শন তৈরি হয় না। কিন্তু, কিদম্বি শ্রীকান্ত বা পি ভি সিন্ধুর ন্যায় খেলোয়াড়ও কি তৈরি হইতে নাই? এমন খেলোয়াড়, যাঁহারা দুনিয়ার সেরা হইবেন? ঋতুপর্ণা দাস, জিষ্ণু সান্যাল বা শুভঙ্কর দে-রা এক বাক্যে এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন— না, এই পোড়া রাজ্যে সেই সম্ভাবনাটুকুও নাই। নামগুলি যদি অচেনা ঠেকে, তবে জানাইয়া রাখা যাউক, এই নামগুলির মালিকরা প্রত্যেকেই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। রাজ্যে খেলাটির পরিকাঠামোর এমনই অভাব যে হয় তাঁহারা রাজ্য ছাড়িতেছেন, বা কালক্রমে ছাড়িবেন বলিয়াই আশঙ্কা। ব্যাডমিন্টন সংস্থারও আপশোস, সামান্য কক কিনিবারও যথেষ্ট সামর্থ্য নাই বলিয়া রাজ্যের ছেলেমেয়েরা আক্রমণাত্মক খেলাই শিখিয়া উঠিতে পারে না। শুধু ব্যাডমিন্টন নহে, আর পাঁচটি খেলার ক্ষেত্রেও ছবিটি অবিকল এক। এই রাজ্য কি আর দুনিয়াজয়ী খেলোয়াড় তৈরি করিতে পারে?

প্রশ্নটিকে দুই প্রান্ত হইতে দেখা সম্ভব। এক প্রান্তে আছে বাজার। ক্রিকেট ব্যতীত অন্য কোনও খেলার সেই বাজারই নাই, যাহার জোরে পরিকাঠামো গড়িয়া উঠিতে পারে। ব্যাডমিন্টন বা টেবিল টেনিসের ন্যায় খেলায় টাকা তুলনায় ঢের কম। ফলে, রাজ্য সংস্থার হাতেও তেমন টাকার জোর নাই, বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির হাতেও নহে। অন্য প্রান্তে আছে সরকার। ক্রীড়া পরিকাঠামোয় আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা সরকারের কাজ কি না, চরম দক্ষিণপন্থী অবস্থান হইতে এমন একটি প্রশ্ন উঠিতেই পারে। কিন্তু, বিশ্বমানের খেলোয়াড় তৈরি হইলে তাঁহাদের সাফল্য যদি রাজ্যের গর্বের কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়, তবে সেই সাফল্যের জমি নির্মাণ করা সরকারের কাজ বইকি। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে। এই রাজ্য যাত্রা হইতে বাউল গান, ল্যাংচা হইতে আলুর চপ, সবই যখন রাজ্য সরকারের আনুকূল্য পাইয়া থাকে, তখন খেলাই বা কী দোষ করিল?

টাকা খরচে সরকার তো কার্পণ্যও করে না। ক্লাবে ক্লাবে যে টাকা বণ্টিত হয়, তাহা ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রকের তহবিল হইতেই আসে। বেশির ভাগ পাড়ার ক্লাবে ক্যারাম ও তাস ভিন্ন আর কোনও খেলার চর্চা হয় না বটে, কিন্তু সরকারের টাকায় যুবকল্যাণও হইতেছে না, এমন অভিযোগ চরম শত্রুও করিবে না। যে যুবরা দলের মিছিলে হাঁটে, সিন্ডিকেটে নজরদারি করে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ‘ধমকায় চমকায়’, এই টাকা কি তাহাদের উপকারে লাগে না? দুর্জনে যে বলে, এই টাকা অতি দ্রুত তরলে পরিণত হইয়া বোতলবন্দি অবস্থায় যুবদের স্বাস্থ্যরক্ষার কাজে লাগে? কিন্তু সে কথা থাকুক। প্রশ্ন হইল, ক্লাবে ক্লাবে খয়রাতি না করিয়া এই টাকায় কি রাজ্যের ক্রীড়া পরিকাঠামোর উন্নতিসাধন সম্ভব নহে? অন্তত, কিছু দূর অবধি? রাজ্যের কর্তারা প্রশ্নটি লইয়া ভাবিতে পারেন। চ্যাম্পিয়ন পাইতে হইলে পরিকাঠামোকে কতখানি গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়, পুল্লেল্লা গোপীচন্দের অ্যাকাডেমি দেখাইয়া দিতেছে। এক জন কিদম্বি শ্রীকান্ত বা এক জন সাইনা নেহওয়াল পাইলে পশ্চিমবঙ্গেরও কি গর্ব হইত না? ‘যুব’কল্যাণ কি কখনও সেই গর্বের সহিত তুলনীয় হইতে পারে?

Badminton West Bengal National Players
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy