Advertisement
১১ মে ২০২৪

কাশ্মীরের কলি তা হলে হাতের নাগালেই!

আন্তর্জালে কাশ্মীরি মেয়ে ও ‘ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল’ সার্চ করে বিশ্ব কাঁপালেন আপনারা। ভাগ্যিস, গুগল ছিল! নইলে জানাই যেত না আপনাদের এমন সৌন্দর্যবোধের কথা। লিখছেন জিনাত রেহেনা ইসলামআপনারা কেউ ১০০ শতাংশ সাক্ষর রাজ্যের বাসিন্দা, কারও আবার শিক্ষা-সংস্কৃতির অহঙ্কারে মাটিতে পা পড়ে না! সেই জন্যই বুঝি আপনাদের দেখার চোখও এত সুন্দর!

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৯
Share: Save:

সত্যি আপনারা পারেনও বটে! কাশ্মীরি আপেল ও কাশ্মীরি মেয়েদের কী সুন্দর এক সুতোয় বেঁধে দিলেন। বুঝিয়ে দিলেন, দুই-ই মিষ্টি ও সুন্দর। আন্তর্জালে কাশ্মীরি মেয়ে ও ‘ম্যারি কাশ্মীরি গার্ল’ সার্চ করে বিশ্ব কাঁপালেন আপনারা। ভাগ্যিস, গুগল ছিল! নইলে জানাই যেত না আপনাদের এমন গভীর সৌন্দর্যবোধের কথা। কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ প্রসঙ্গে দেশ উত্তাল। আর এর মধ্যেই আপনাদের মনে হল, দেশ-কাল চুলোয় যাক। কাশ্মীরের মেয়েরা তো এ বার হাতের নাগালে চলে এল!

আপনারা কেউ ১০০ শতাংশ সাক্ষর রাজ্যের বাসিন্দা, কারও আবার শিক্ষা-সংস্কৃতির অহঙ্কারে মাটিতে পা পড়ে না! সেই জন্যই বুঝি আপনাদের দেখার চোখও এত সুন্দর! তবে কী জানেন, যে মেয়েদের জন্য আপনারা এত উতলা হয়ে উঠেছেন, তাঁদের কোমরে বন্দুকের বাটের দাগটা বোধহয় আপনাদের চোখে পড়েনি, না? পিঠে ভারী মেটাল বেল্টের কালশিটেও আপনাদের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু মুখে নেকড়ের আঁচড়ের মতো সেই দগদগে ক্ষতটাও কী করে চোখ এড়িয়ে গেল?

আসুন, আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই আরও কয়েক জন কাশ্মীরি মেয়ের সঙ্গে। ওই মহিলাকে দেখছেন? খেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। এখন সেখানেই বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে আছেন। বাড়িতে রয়েছে ওঁর পাঁচ বিবাহযোগ্য কন্যা। বেচারা এই অপমান সইতে পারলেন না। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মারা গেলেন! আচ্ছা, আপনি কি কারও গোঙানি শুনতে পাচ্ছেন?

ওই দেখুন, আর এক কাশ্মীরি মেয়ে! বুটের আঘাত আর অত্যাচারে রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। ওঁর পেটে ১০টি সেলাই পড়েছে। ওই যে, আর এক মেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। বন্দুকের নলের আঘাতে জরায়ুতে গভীর ক্ষত। এখন পচতে শুরু হয়েছে। প্রাণে বাঁচতে গেলে জরায়ু কেটে বাদ দিতে হবে। এই মহিলা কোনও দিন মা হতে পারবেন না।

দূরের ওই গ্রাম দু’টি দেখতে পাচ্ছেন? কুনান ও পোশপোরা। সেখান থেকেই এক রাতে ৩২ জন মেয়ে উধাও হয়ে যান। দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ বাবা কাঁদছেন! পাগলের মতো স্বামী খুঁজছেন। সন্তানদের কান্না থামানো যাচ্ছে না। কী অপরূপ দৃশ্য, তাই না? ওই যে, আর এক কাশ্মীরি ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে রয়েছে। তাঁকে করাত দিয়ে কাটা হয়েছে। ত্রেহগামের সরকারি বিদ্যালয়ের গবেষণাগারের সহকারীর কপালে আর কী-ই বা জুটত? আর ক্রালখুদের অর্চনা কিংবা শিক্ষা বিভাগের সেই নারী অধিকর্তা? পরিবারের সকলের সামনেই চলে অত্যাচার এবং শেষতক হত্যা!

গুরিহাকার সেই মেয়ের কথা মনে আছে? ভরা পরিবারে শ্বশুর ও ননদের সঙ্গে বসেছিলেন তিনি। সকাল তখন ৯টা। বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। ঠিকই তখনই ভারী বুট রাস্তা থেকে উঠে এল একেবারে ঘরে। বন্দুকের নল গিয়ে ঠেকল বাচ্চার বুকে। মাকে নির্দেশ মতো উঠে যেতে হল। কিছুক্ষণ পরে শোনা গেল চিৎকার। পুলওয়ামার আহারবল জলপ্রপাতে কান পাতলে এখনও হয়তো সেই চিৎকার শোনা যাবে। কাশ্মীরি মেয়েরা সুন্দরী! শুনে দেখবেন এক বার, তাঁদের আতর্নাদও কেমন মিষ্টি!

মবিনা গনি বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িই পৌঁছতে পারলেন না। পথেই মবিনা আর তাঁর মাসির উপর হয়ে গেল অত্যাচার। ২৪ বছরের হাসিনা ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলেন। হাত-পা-মুখ ছিঁড়েখুঁড়ে একাকার। জেলা হাসপাতালে হিহামা গ্রামের সেদিন সাত মেয়ে হাজির। বিয়ের আসর ভেঙে গিয়েছে। নববধূ-সহ সবার শরীরে ক্ষত। বিহোটায় এক মেয়েকে ছাড়াতে ২০ জন মেয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা আটক থাকলেন। বাকিটা ইতিহাস।

সাইদপোরা গ্রামের ১০ থেকে ৬০ বছরের মেয়েরাও জানতেন না, কখন কে অর্ডার হাতে নিয়ে এসে বলবে, ‘সার্চ ইউ’। তার পরে মধ্যরাতে এসে ছিঁড়ে ফেলবে কাপড়। ঘরের কোনায় দাঁড়িয়ে দেখবে আর এক ছোট্ট মেয়ে। সেও জানবে, এক দিন এমনি করেই সার্চ অর্ডার আসবে তারও।

দরজা খুলেই তৈরি হতে হবে তল্লাশির জন্য। আয়াতের মতো মুখস্থ হয়ে যাবে সেই দু’টি বাক্য—‘আই হ্যাভ অর্ডার। আই হ্যাভ টু সার্চ ইউ।’ প্রতিবাদী বৃদ্ধার বুকে লাথি মেরে উল্টে ফেলা হবে। বেঁধে ফেলা হবে তাঁর মুখ। তার পরে সেই ভবিতব্য।

শিক্ষিকা, রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu and Kashmir Women Toruture Rape
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE