কৃষকের সমস্যা বা কৃষকের আন্দোলন কোনও একটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ নয় আজ। ছবি: সংগৃহীত।
নীতি এ ভাবে দু’রকম হতে পারে না। একটিই রাজনৈতিক দল গায়ে গায়ে লেগে থাকা দু’টি রাজ্যে দু’টি সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ নীতির প্রয়োগ করলে বড়ই বেমানান এক দৃশ্যপট তৈরি হয়। কৃষিঋণ মকুব নিয়ে বিজেপির অবস্থান তেমনই এক বেমানান ছবির জন্ম দিল।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই কৃষিঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এ বার বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্রও সেই পথেই হাঁটল। দেবেন্দ্র ফডণবীসের মন্ত্রিসভাও জানিয়ে দিল, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ঋণ মকুব করছে মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু এই মহারাষ্ট্র আর উত্তরপ্রদেশের মাঝে থাকা আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশ কিছুতেই কৃষিঋণ মকুবের পথে হাঁটতে চায় না। তীব্র কৃষক বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে পাঁচজনের মৃত্যুর জেরে গোটা মধ্যপ্রদেশ উত্তাল হয়ে ওঠার পরেও নয়। একই দলের হাতে থাকা হরিয়ানার সরকারও ঋণ মকুবকে সমীচীন পদক্ষেপ মনে করছে না।
প্রশ্ন হল, কার নীতি ঠিক? কোন নীতিটা ভুল? মহারাষ্ট্র হোক বা হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ হোক বা মধ্যপ্রদেশ— আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিত কিন্তু খুব একটা আলাদা নয়। কৃষকদের হাল হরিয়ানায় যেমন, উত্তরপ্রদেশে একেবারেই তেমন নয়— এমন কথা কোনও মহলেই শোনা যায় না। মহারাষ্ট্রে কৃষকদের অবস্থা খুব খারাপ, কিন্তু লাগোয়া মধ্যপ্রদেশে তাঁরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন— বিজেপি নেতৃত্বও এমন দাবি করেন না। তা সত্ত্বেও মধ্যপ্রদেশ আর হরিয়ানায় যে কৃষক-নীতি বিজেপি নিল, মহারাষ্ট্র আর উত্তরপ্রদেশে তার ১৮০ ডিগ্রি বিপ্রতীপে হাঁটা শুরু হল। কেন? আদিত্যনাথ আর ফডণবীস কি তা হলে ভুল পথে হাঁটলেন? নাকি শিবরাজ সিংহ চৌহান আর মনোহরলাল খট্টর কৃষকদের সঙ্গে অন্যায় করছেন? প্রশ্নগুলো ওঠা অবধারিত। উত্তর দেওয়ার দায়টা বিজেপির এবং একমাত্র বিজেপির।
দেশ বিজেপির শাসনে। অধিকাংশ রাজ্য বিজেপি বা বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র শাসনে। অতএব দেশে কৃষক যদি দুর্দশায় থাকেন, তা হলে সুরাহা সন্ধানের দায় বিজেপির-ই যে সবচেয়ে বেশি, সে নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়। কৃষকের দুর্দশা ঘোচানোর পথ সরকার তথা শাসককেই খুঁজে বার করতে হবে। কৃষিঋণ মকুব করলেই দুর্দশা ঘুচবে, নাকি সমাধান রয়েছে অন্য কোনও পথে, সে নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। সেই তর্ক-বিতর্ক, যুক্তি-পাল্টা যুক্তির মধ্যে থেকে সারকথাটা সরকারকেই তুলে আনতে হবে। সমাধান সূত্রটা শাসককেই খুঁজে বার করতে হবে। কিন্তু সারকথা কিছু উঠে আসছে না, সমাধান সূত্রের দেখা মিলছে না। বাড়ছে শুধু বিভ্রান্তি।
কৃষকের সমস্যা বা কৃষকের আন্দোলন কোনও একটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ নয় আজ। কৃষক বিক্ষোভ এখন জাতীয় রাজনৈতিক ইস্যু। অতএব রাজনৈতিক পথেই এর সমাধান খুঁজতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনৈতিক প্রশাসনকে। সেই সিদ্ধান্তকে হতে হবে বলিষ্ঠ এবং দ্ব্যর্থহীন। দেশের সরকার এবং অধিকাংশ রাজ্যের সরকার অভিন্ন রাজনৈতিক প্রেরণা কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত এখন। তাই বলিষ্ঠ এবং দ্ব্যর্থহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে কোনও বাধা থাকার কথা নয়। বিজেপির মতো সুসংগঠিত দল যখন ক্ষমতাসীন, তখন তো সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় মতানৈক্য মাথাচাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা আরওই কম। তা সত্ত্বেও এই বিভ্রান্তি কেন? কেন এই নীতিপঙ্গুত্ব?
প্রশ্নচিহ্নগুলো কিন্তু ক্রমশ বড় হবে। তার আগেই উত্তর খুঁজে নেওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy