Advertisement
E-Paper

বিষকুম্ভ

মেহবুবা মুফতি এমন কোনও নির্দেশ দিয়াছিলেন কি না, সেই প্রশ্নে সরকারের বক্তব্যকে বিশ্বাস না করিলেও একটি কথা ঠিক যে, জম্মুতে বিজেপির রাজনীতি আপাতত এই প্রশ্নে ন্যক্কারজনক রূপ গ্রহণ করিতেছে।

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০০:১৬

রাম মাধবকে আর পাঁচ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থকের পর্যায়ভুক্ত করা চলে না। স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পদ হইতে ২০১৪ সালে তাঁহাকে উঠাইয়া আনিয়া বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে বসানো হইয়াছিল। জম্মু-কাশ্মীরে দলের দায়িত্বেও তিনি। অতএব, আসিফা বানুর ধর্ষক-খুনিদের সমর্থনে মিছিল করা দুই বিজেপি মন্ত্রীর পদত্যাগপত্রের ‘বিনিময়’-এ তিনি যখন দাবি করেন যে মেহবুবা মুফতিকেও রাজ্যের অরণ্যে যাযাবর জাতির অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত নির্দেশিকাটি প্রত্যাহার করিতে হইবে, তখন সেই দাবিটিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা প্রয়োজন। কারণ, প্রথমত নির্দেশিকাটিই এ ক্ষেত্রে বিতর্কিত। গত ফেব্রুয়ারি মাসে রটিয়া গিয়াছিল, মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে জম্মুর অরণ্য এলাকা হইতে গুজ্জর-বাখরেওয়াল জনজাতির মানুষদের উচ্ছেদ করা যাইবে না, এবং জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের অনুমতি ভিন্ন এমন কোনও অভিযানে পুলিশ পাঠানো চলিবে না। রটনাটি কত দূর সত্য, তাহা অনিশ্চিত, কেননা সরকারের তরফ হইতে বার বার তাহা অস্বীকার করা হয়। তাহার পরও বিজেপি প্রশ্নটিকে ছাড়ে নাই। কারণটি সহজ। হিন্দু-মুসলমান রাজনৈতিক সমীকরণে গুজ্জর-বাখরেওয়াল জনজাতির জম্মুতে ‘অনুপ্রবেশ’-এর প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মে মুসলমান এই যাযাবর জনজাতি জম্মুর জনসংখ্যায় ধর্মীয় অনুপাতটিকে হিন্দুদের বিপরীতে লইয়া যাইবে, এমন একটি আশঙ্কা ব্যবহার করিতে পারিলে বিজেপি নেতাদের বিস্তর রাজনৈতিক লাভ। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিটি পেশ করিয়া রাম মাধব বুঝাইয়া দিলেন, তাঁহার দল সচেতন ভাবেই বিভাজনের রাজনীতি করিয়া চলিবে। একটি আট বৎসরের বালিকার ধর্ষণ ও হত্যার প্রেক্ষিতও সেই রাজনীতিকে এক বিন্দু প্রতিহত করিবে না।

মেহবুবা মুফতি এমন কোনও নির্দেশ দিয়াছিলেন কি না, সেই প্রশ্নে সরকারের বক্তব্যকে বিশ্বাস না করিলেও একটি কথা ঠিক যে, জম্মুতে বিজেপির রাজনীতি আপাতত এই প্রশ্নে ন্যক্কারজনক রূপ গ্রহণ করিতেছে। জনজাতি সংক্রান্ত তর্কবিতর্ক একটি আলাদা বিষয়। সেই তর্কবিতর্কের সহিত বাখরেওয়াল জনজাতির উপর হামলা এবং সেই হামলার ধর্মীয় আবরণ-দানকে গুলাইয়া ফেলা চলে না। এই সব জনজাতি যে জম্মুর পাকাপাকি বাসিন্দা হইতে আসেন না, গ্রীষ্মে কাশ্মীরে ও শীতে জম্মুতে বসবাস করেন, এই তথ্যটি বিজেপির স্থানীয় নেতারা বিলক্ষণ জানেন, কিন্তু রাজনীতির স্বার্থে তাঁহারা মানুষকে অন্য রকম বুঝাইতে চান। ফলে, যে গুজবের ভিত্তিতে এই বিপুল বিদ্বেষের জন্ম, যে বিদ্বেষ বালিকা আসিফা বানুর নির্মম পরিণতির হেতু— প্রথম হইতে শেষ অবধি তাহা নিখাদ রাজনীতির খেলা।

এই খেলা যে সহজে থামিবে না, রাম মাধবের স্পর্ধিত দাবিতেই তাহা স্পষ্ট। আসিফার হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করিয়া দেশব্যাপী বিক্ষোভের জেরে শেষ অবধি বিজেপির দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করিলেও মাধব জানাইয়াছেন, তাঁহারা দোষী নহেন, তাঁহাদের বিবেচনাবোধের অভাব ছিল মাত্র। এবং, পাল্টা শর্ত হিসাবে নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি পেশ করিয়া তিনি বুঝাইয়া দিয়াছেন, তাঁহাদের রাজনৈতিক খেলায় আসিফারা বোড়েমাত্র। বস্তুত, জনজাতির অরণ্যের অধিকার থাকা বা না থাকার প্রশ্নটিও নেহাত পারিপার্শ্বিক— মূল বিবেচ্য সেই জনজাতির ধর্মীয় পরিচয়। তাঁহারা মুসলমান। অতএব, তাঁহাদের যাযাবর পরিচিতিটির অপেক্ষা ধর্ম-পরিচিতিটি এখানে বেশি গুরুতর, জম্মুর হিন্দুদের মুসলমান-ভীতি ও বিদ্বেষকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য অধিকতর মোক্ষম। আরও এক বার প্রমাণ হইল, দেশব্যাপী ধিক্কার যে উচ্চতাতেই উঠুক, বিজেপির এই বিষকুম্ভ-সম কদর্য রাজনীতি সংযত হইবার নয়।

BJP Ram Madhav
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy