Advertisement
E-Paper

উল্লাসের পিছনে

নিরবচ্ছিন্ন পঁচিশ বছর সে রাজ্যে সিপিআইএম শাসন চলিয়াছে, অবশ্যই স্থিতাবস্থা-বিরোধিতা সেখানে দেশব্যাপী বাম রাজনীতির অস্তাচলগমনের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
উত্তর-পূর্বে বড় জয়ের পর দিল্লিতে বিজেপির উচ্ছ্বাস। ফাইল চিত্র।

উত্তর-পূর্বে বড় জয়ের পর দিল্লিতে বিজেপির উচ্ছ্বাস। ফাইল চিত্র।

ত্রিপুরার সৌজন্যে উত্তরপূর্ব ভারতে গৈরিক পতাকাটি দৃঢ় ভাবে প্রোথিত হইল। বিজেপির নিকট এ বারের ত্রিপুরা জয়ের লক্ষ্যটি কত গুরুতর ছিল, জয়লাভের পর বিজেপির অবারিত উল্লাস এবং নেতৃত্বের বিপুল প্রফুল্লতাই তাহা বলিয়া দেয়। নিরবচ্ছিন্ন পঁচিশ বছর সে রাজ্যে সিপিআইএম শাসন চলিয়াছে, অবশ্যই স্থিতাবস্থা-বিরোধিতা সেখানে দেশব্যাপী বাম রাজনীতির অস্তাচলগমনের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু তাহার সহিত ইহাও সত্য, একটি রাজ্যে প্রায়-অনস্তিত্বশীল দলীয় অবস্থান হইতে এই বিশাল জনসমর্থনে জিতিয়া আসা যথেষ্ট কৃতিত্বের বিষয়। এই কৃতিত্ব বিজেপির সাংগঠনিক কৃতিত্ব। গত কিছু কাল ধরিয়া যে দক্ষতার সহিত বিজেপি ত্রিপুরার কোণে কোণে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করিবার কাজে ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল, নির্বাচনী ফলাফল তাহার সাক্ষাৎ পুরস্কার। এই কৃতিত্বের কিছু ভাগ অবশ্যই প্রাক্তন শাসক দলকেও দিতে হইবে, কেন না তাহাদের আত্মঘাতী আত্মসন্তুষ্টির অবকাশেই বিজেপি সংগঠন এতখানি কার্যকর হইতে পারিল। প্রভূত প্রশাসনিক দুর্বলতা ছিল বলিয়াই বিজেপি আক্ষরিক অর্থে উড়িয়া আসিয়া জুড়িয়া বসিতে পারিল। মানিক সরকার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সৎ ও বিবেকবান হইতে পারেন, কিন্তু তাঁহার প্রশাসনে ফাঁকফোকরের অন্ত ছিল না, তাঁহার দলীয় তরফেই তাহা স্বীকৃত। একই সঙ্গে বিজেপির জয়ে কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলেরও কৃতিত্ব আছে। বহু বৎসরের রাজনৈতিক বিরোধিতার সুযোগ পাইয়াও তাহারা জনমানসে কোনও দাগ ফেলিতে পারে নাই, এ-যাবৎ প্রাপ্ত ভোটের ঝুলিখানি উজাড় করিয়া বিজেপির হাতে তুলিয়া দিয়াছে।

ইহার পরও অবশ্য একটি কথা রহিয়া যায়। এই জয় উপলক্ষে বিজেপির উল্লাসের মধ্যে একটি মাত্রাছাড়া বাড়াবাড়ি লক্ষণীয়। ১৩৪ কোটি জনসংখ্যার দেশে ত্রিপুরার বাসিন্দা সাকুল্যে ৪০ লক্ষ। মাত্র দুইটি লোকসভা আসন সে রাজ্যের ভাগে পড়িয়াছে। এমন একটি রাজ্যে জয় লইয়া অদম্য উল্লাসের কারণটি ঠিক কী? সম্ভবত, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের বক্তব্য সেই কারণটি ধরাইয়া দিতে পারে। অমিত শাহ বলিয়াছেন, এই জয় দেখাইয়া দিল, গোটা দেশের সমর্থন এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীর পিছনে। ত্রিপুরার বাস্তব হইতে ভারতের বাস্তবে পৌঁছাইবার মধ্যে এই যে কল্পনার উল্লম্ফন, তাহার মনোবিশ্লেষণই বলিয়া দিবে মোদীকে লইয়া সম্প্রতি কতখানি উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা জমা হইয়াছিল দলের অন্দরে। গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচনে কান-ঘেঁষা জয় ও রাজস্থানের উপনির্বাচনে প্রবল পরাজয়ের পর হইতে তাঁহারা বিনিদ্র অশান্তিতে ছিলেন। নীরব মোদী কেলেংকারি সেই অশান্তির জমিতে আতঙ্কের বীজ বুনিতে বসিয়াছিল। এত দিনে সেই উদ্বেগক্ষতে শান্তিবারি সিঞ্চন করিল ত্রিপুরা। নীরবতা ভাঙিয়া মোদীর বিজয়হুঙ্কার তাই আবারও ধ্বনিত দিকে দিকে।

একই কারণে ত্রিপুরার ফলাফল আসিতে না আসিতেই রাহুল গাঁধীর প্রতিও মোদী তাঁহার ব্যঙ্গতিরটি ছুড়িবার মওকা পাইলেন। ক্রমশ শক্তি ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াইয়া রাহুল সাম্প্রতিক কালে মোদীর সত্যকারের প্রতিস্পর্ধী হইয়া উঠিতেছেন, মোদীকে নিরন্তর সংকটের মধ্যে রাখিতেছেন। তাঁহাকে আক্রমণ করিবার উপযুক্ত অবকাশ মোদী হাতড়াইয়া বেড়াইতেছিলেন। ত্রিপুরা সেই সুযোগ আনিয়া দিল। পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, কর্নাটকের সহিত ত্রিপুরার বিশেষ সাদৃশ্য না থাকিলেও বিজেপির পরবর্তী লক্ষ্য যে এই সব রাজ্য, সেই স্পর্ধিত ঘোষণা শোনা গেল দলনেতাদের কণ্ঠে। ত্রিপুরায় বিজেপির নির্বাচনী জয়ের একটি তাৎপর্য যদি হয় উত্তরপূর্ব ভারতের গৈরিকীকরণের সূচনা, অন্য তাৎপর্যটি লুকাইয়া আছে নরেন্দ্র মোদীর আত্মিক ও রাজনৈতিক সংকট হইতে মুক্তিপথ সন্ধানের মধ্যে।

Tripura Assembly Election 2018 Election Result BJP CPIM Tripura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy