Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Kashmir

যদি মুক্ত থাকিতেন

ছয় মাস কম সময় নহে। ইহার মধ্যে কাশ্মীর হইতে ভারতীয় নাগরিক সমাজের দৃষ্টি ঘুরিয়া গিয়াছে অন্য দিকে, সমধিক ভয়ানক সঙ্কটের দিকে।

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

কাশ্মীর একটি আশ্চর্য জায়গা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুইৎজ়ারল্যান্ড আর সামাজিক-রাজনৈতিক দিক দিয়া প্যালেস্তাইন— এক আধা-সরকারি বিদেশি অভ্যাগতের অন্তর্দৃষ্টিময় মন্তব্য সমাজমাধ্যমে ঘুরিতেছে। ভারতীয় রাষ্ট্র যাহাকে নিজের অঙ্গরাজ্য বলিয়া জবরদস্তি অধিকার প্রতিষ্ঠা করিতে চাহে, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর সেখানকার প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করিয়া রাখিবার ছয় মাস সম্পূর্ণ হইল গত ৫ ফেব্রুয়ারি। ছয় মাস কম সময় নহে। ইহার মধ্যে কাশ্মীর হইতে ভারতীয় নাগরিক সমাজের দৃষ্টি ঘুরিয়া গিয়াছে অন্য দিকে, সমধিক ভয়ানক সঙ্কটের দিকে। কাশ্মীরের নাগরিকের উপর দমন-পীড়ন লইয়া যে প্রতিবাদ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রথম দুই-এক মাস ধ্বনিত হইয়াছিল, তাহা হয় ক্লান্ত অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে, নতুবা অন্যত্র নূতন কাশ্মীর তৈরি হইবার আশঙ্কায় নূতন ভাবে প্রতিবাদ পরিকল্পনা করিতেছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস যে কাশ্মীর আসলে ‘স্বাভাবিক’ই রহিয়াছে, আরও স্বাভাবিক হইবে ক্রমশ, এই সব নিশ্চয় নাগরিক সমাজে কিছু প্রভাব বিস্তার করিয়াছে। স্বাভাবিকতা কাহাকে বলে সে বিষয়ে কোনও স্পষ্টতা নাই, সুতরাং কাশ্মীরের এই পরিস্থিতি অবশিষ্ট ভারত এক রকম মানিয়াই লইয়াছে। পরিস্থিতি এখন এই রকম যে, কাশ্মীরের ভিতরে তাহার হইয়া প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিবার মতো বিশেষ কেহ ‘মুক্ত’ নাই, আর নেতৃত্ব ব্যতিরেকেই যদি প্রতিবাদ ঘটে, তবে প্রতিবাদীর কপালে বিরাট দুঃখ, অত্যাচার, বন্দিত্ব বাঁধা। পাশাপাশি কাশ্মীরের বাহিরে কাশ্মীর লইয়া কথা বলিবার মতো অবকাশ বিশেষ কাহারও নাই। সঙ্গত প্রশ্ন উঠিতে পারে, কাশ্মীর কি তবে সত্যই প্যালেস্তাইনের সহিত তুলনীয়, না কি দুর্ভাগ্যের আরও অতল গভীরে? কেননা প্যালেস্তাইনের দমনের ধরনটি প্রকাশ্য, প্রত্যক্ষ, সর্বজনবিদিত। অথচ কাশ্মীরের দমন চলিতেছে এমন ভাবে যাহা তাহার নিজের দেশের মানুষের নিকটই ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া ঠেকিতেছে। যাহা স্বাভাবিক, তাহার প্রতিকারের জন্য তো কাহারও মাথাব্যথা থাকিতে পারে না!

এই সম্মেলক বিস্মরণ ও অবহেলার মধ্যে ‘অধিকন্তু ন দোষায়’ হিসাবে কেন্দ্রীয় প্রশাসন বিজ্ঞপ্তিতে জানাইল যে কাশ্মীরের বিশিষ্ট নেতাদের সকলকে আটক রাখিবার কারণটি ঠিক কী। পিএসএ বা জন নিরাপত্তা আইন অনুসারে তাঁহাদের বন্দি না রাখিয়া উপায় নাই, কেননা ছাড়া থাকিলেই তাঁহারা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করিতে বা বিক্ষোভ দেখাইতে পারেন, যাহাতে সাড়া দিতে পারেন বহু মানুষ। কাশ্মীরি নেতারা বিশেষ জনপ্রিয় বলিয়াই নাকি মুশকিল, জনগণ নির্ঘাত তাঁহাদের ডাকে সাড়া দিবেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদ্বয় ওমর আবদুল্লা এবং মেহবুবা মুফতি বিষয়ে এতখানি জনপ্রিয়তার অনুমান সম্ভবত রাজনৈতিক বিবেচনাসিদ্ধ নহে, তবে সে তর্কের প্রয়োজন কী। বুঝাই যায়, যে কোনও অজুহাতে রাজ্যের নেতাদের বদ্ধ করিয়া রাখাই আপাতত কেন্দ্রের বাঞ্ছিত পন্থা। বাস্তবিক, ইতিমধ্যে স্পষ্ট যে এই দেশে সরকারবিরোধী মানেই রাষ্ট্রবিরোধী। কাশ্মীরে তো তাহা আরও বহু গুণ সত্য। সুতরাং ঝামেলা বাধিতে না দিবার প্রকৃষ্ট পথটি হইল, ঝামেলা বাধিবার অপেক্ষা না করিয়া আগেই সকলকে বন্দিত্বে ভূষিত করা। ঔপনিবেশিক শাসনের ঘরানাটি এই ভাবে অক্ষরে অক্ষরে মানিতেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সন্দেহের অবকাশ নাই, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে এই যুক্তি অতীব ‘স্বাভাবিক’— যদি শব্দটির নূতন অর্থসম্প্রসারণ বাধ্যতামূলক ভাবে মানিয়া লইতে হয়। ‘স্বাভাবিক’-এর সাম্প্রতিক অর্থ এখন, দেশের যে স্ব-ভাব বর্তমান শাসকেরা চাহেন, তাহাতেই বিরাজ করা। সেই মতানুযায়ী, কাশ্মীর যেমন আছে, তাহার পরিবর্তন ঘটিবার কোনও সম্ভাবনা নাই, কোনও কারণও নাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir Article 370 Amit Shah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE