Advertisement
E-Paper

মধ্যস্থের প্রহেলিকা

কথোপকথনের মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের দিকে আগাইবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এক জন মধ্যস্থ ঠিক করিতে গিয়া কেন হঠাৎ তাঁহার মতো এক জন প্রাক্তন আই বি ডিরেক্টরকে বাছিলেন, ভাবিয়া বিস্মিত হইতে হয়!

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০

দীনেশ্বর শর্মা কাশ্মীরে পৌঁছাইবার আগেই নিশ্চিত করিয়া দিয়াছেন যে, যে কাজটি করিবার লক্ষ্যে তিনি যাইতেছেন, সে বিষয়ে তিনি কত অযোগ্য। বাস্তবিক, কথোপকথনের মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের দিকে আগাইবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এক জন মধ্যস্থ ঠিক করিতে গিয়া কেন হঠাৎ তাঁহার মতো এক জন প্রাক্তন আই বি ডিরেক্টরকে বাছিলেন, ভাবিয়া বিস্মিত হইতে হয়! আই বি-র তরফে শর্মা কাশ্মীরে কাজ করিয়াছেন, এবং সম্প্রতিকালেই করিয়াছেন। অর্থাৎ কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিপক্ষে সরাসরি কাজ করিবার অভিজ্ঞতা তাঁহার যথেষ্ট সাম্প্রতিক। অনুমান করা চলে যে যিনি টেবিলের ও-প্রান্তের বিরুদ্ধে তদন্ত ও কার্যক্রম চালাইয়াছেন, তাঁহার পক্ষে ‘ও দিকের’ সঙ্গে আলোচনায় মধ্যস্থের ভূমিকা পালন করা রীতিমত কঠিন। কঠিন যে, তাহা দীনেশ্বর শর্মা নিজেই বুঝাইয়া দিয়াছেন। যাইবার আগেই তাঁহার অভিযানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাঁহার মত: কাশ্মীরের যুবসমাজকে চরম পথ হইতে ফিরাইয়া আনা এবং কাশ্মীরকে আর একটি সিরিয়া না হইতে দেওয়া। অর্থাৎ, যুবসমাজের কী করা উচিত এ বিষয়ে আগে হইতেই তাঁহার স্পষ্ট জ্যেষ্ঠতাতসুলভ মনোভাব। এই মনোভাব লইয়া কাশ্মীরি প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি কী প্রকার মধ্যস্থতা করিবেন? মধ্যস্থের কাজ তো নিজের দৃঢ় মতামত জ্ঞাপন নহে। অন্যের মত মন খুলিয়া শোনা এবং সেই অনুযায়ী সমাধানের রাস্তা ভাবা, ইহাই কাম্য। সমাধানটি আগে হইতে ভাবিয়া লন যিনি, তাঁহার তো অন্যের কথা না শুনিলেই হয়।

অবশ্য দীনেশ্বর শর্মাকে যাঁহারা পাঠাইতেছেন, তাঁহারা যে সত্যই সমাধানের রাস্তা খুঁজিতেছেন, এমন ভাবাও ছেলেমানুষি। সরকারের বিভিন্ন কোণ হইতে ইতিমধ্যেই কলরোল উঠিয়াছে, ‘কাশ্মীর’ বলিয়া সত্যই কোনও ‘সমস্যা’ নাই, সুতরাং সমাধান কিসের! পিএমও অফিসে বসিয়াই জিতেন্দ্র সিংহের মুখে শোনা গিয়াছে এ কথা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ যদিও বলিয়াছেন যে কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকার কথোপকথনের একটি ধারা তৈরি করিতে চায়, দীনেশ্বর সিংহ সেই প্রয়াসের প্রথম পদক্ষেপ— বিজেপি সাংসদরা অনেকেই তড়িঘড়ি সংবিধানের ৩৭০ ধারা কিংবা হুরিয়ত কনফারেন্স বিষয়ে প্রবল অনমনীয়তার পরিচয় দিতেছেন। কংগ্রেস নেতা চিদম্বরম কাশ্মীরের স্বশাসনের প্রসঙ্গটি একটু বেমক্কা পাড়িয়া ফেলিয়াছেন ঠিকই, কিন্তু তাহার প্রতিক্রিয়ায় গোটা বিজেপি দলের যে আক্রমণাত্মক মনোভাব বাহির হইয়া আসিয়াছে, তাহা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমনকী প্রধানমন্ত্রী মোদীর মতেও চিদম্বরমের বক্তব্য ‘নির্লজ্জ, অসংবেদনশীল’। মোদীজির কাছে প্রশ্ন, এতগুলি দশক কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দেখিবার পরও স্বশাসনের ভাবনাটির উল্লেখই যাঁহার নিকট ‘অসংবেদনশীল’ ঠেকে, কত দূর ‘আলোচনা’র আশা রাখা যায় সেই ‘সংবেদনশীলতা’র ভাণ্ডার দিয়া?

আর একটি কথা। হুরিয়ত বিষয়ে বিজেপির মনোভাব যত দিন না পর্যন্ত নমনীয় হইতেছে, অর্থময় কথোপকথনের আশা বাতুলতা মাত্র। গিলানি, মালিক ও মিরওয়াইজ, হুরিয়তের নেতারা এখন কাশ্মীর উপত্যকায় জনপ্রিয়তার নজির তৈরি করিয়া ফেলিয়াছেন। তাঁহাদের মত, অবস্থান, আদর্শ, পন্থা, এ সব কাহারও পছন্দ হউক না হউক, কাশ্মীরি জনসাধারণের কাছে তাহার আবেদন বিশাল। যে কোনও ভাবেই হউক এই নেতাদের টেবিলে আনিতে হইবে, নয়তো যে কথাই হউক না কেন, তাহার প্রয়োগযোগ্যতা হইবে শূন্য। একমাত্র যদি কথোপকথন চালাইবার মূল উদ্দেশ্য হয় বিজেপির রাজনৈতিক স্কোর বাড়াইয়া ভোটের বাজার মাত করা, এবং উপত্যকার সংকটের প্রেক্ষিতে কিছু সময় কেনা, তবেই এতগুলি বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লইয়াও মধ্যস্থ পাঠাইবার কিছু অর্থ পাওয়া সম্ভব!

Dineshwar Sharma IB J&K Rajnath Singh special representative
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy