Advertisement
E-Paper

ভাই ভাই না হোক, যুদ্ধ নয়

আমাদের যুদ্ধপ্রিয় পণ্ডিতরা সামরিক খতিয়ান দিয়েই যুদ্ধের লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করতে অভ্যস্ত। কার কত সেনা আছে, কে কতগুলি যুদ্ধবিমান বা ট্যাংক ধ্বংস করল— এগুলিকেই তাঁরা মনে করেন জয়পরাজয়ের চূড়ান্ত হিসাব।

পলাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০৬:০০

মনে হয়েছিল, দোভাল-দৌত্য সফল, ডোকলাম সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে এগোচ্ছে চিন ও ভারত। কিন্তু যুযুধান দুই প্রতিপক্ষের বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতিতে পরিস্থিতি উত্তরোত্তর ঘোরালো হচ্ছে। চিনের দিক থকে অবিরাম বাক্যবাণ ছিলই, সংযম ভেঙে ভারতও ক্রমে সে পথের শরিক হয়। অরুণ জেটলি গলার শির ফুলিয়ে বলেন, ‘১৯৬২ থেকে শিক্ষা নিয়ে সেনা অনেক শক্তিশালী হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্ত রক্ষা করার ক্ষমতাও আমাদের সেনার রয়েছে’। যুদ্ধপ্রিয় দেশপ্রেমিকরা আবার উল্লসিত। কেননা, যুদ্ধ মানেই তো দেশপ্রেমের নতুন জোয়ার। তার পরে অবশ্য দু’পক্ষেই সংযমের সুলক্ষণ দেখা গিয়েছে কিছু কিছু। আবার উল্টো গতিও আছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

আমাদের যুদ্ধপ্রিয় পণ্ডিতরা সামরিক খতিয়ান দিয়েই যুদ্ধের লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করতে অভ্যস্ত। কার কত সেনা আছে, কে কতগুলি যুদ্ধবিমান বা ট্যাংক ধ্বংস করল— এগুলিকেই তাঁরা মনে করেন জয়পরাজয়ের চূড়ান্ত হিসাব। কিন্তু বাস্তব হল, দুটি বৃহৎ, বিশেষত পারমাণবিক শক্তির মধ্যে যুদ্ধে কখনও একতরফা জয়পরাজয় নির্ধারিত হয় না। বরং দুই পক্ষই অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কখনও এই ক্ষতির পরিমাণ এতটাই সুদূরপ্রসারী হতে পারে যে, তা সমসাময়িক কালকে অতিক্রম করে একটা সভ্যতার ইতিহাস ও ভূগোলকে প্রভাবিত করে। কোনও রকম রাখঢাক না করেই বলা যায়, ভারত-চিন সীমিত সংঘাত বা পুরোমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতির আশঙ্কা চিনের তুলনায় ভারতেরই বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতিতে এটি ভারতের পক্ষে নেতিবাচক প্রভাব বয়ে নিয়ে আসতে পারে। সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত যতই যা দাবি করুন, ভারতকে একসঙ্গে আড়াইখানা ফ্রন্টে নয়, এক ডজন ফ্রন্টে লড়াই করতে হবে।

চিন এবং ভারত, উভয় দেশের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশগুলির রয়েছে ঘনিষ্ঠ ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক। চিনের সঙ্গে স্থলসীমান্ত সম্পর্ক রয়েছে ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান ও মায়ানমারের। আবার ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হল নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও মায়ানমার। চিনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বৃদ্ধির হার যতই কমছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির প্রতি তার আগ্রহ ততই বাড়ছে। বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে রয়েছে তার বিপুল বিনিয়োগ। সাম্প্রতিক কালে রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে এই বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়েছে। অন্য দিকে, দিল্লি সম্পর্কে প্রতিবেশী দেশগুলির দীর্ঘ দিনের অভিযোগ হল, ভারত তাদের আবদ্ধ করে রাখতে চায়। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে তাদের মনে এই ধারণাও তৈরি হয়েছে যে, চিন যেখানে প্রতিবেশীদের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঝুড়ি নিয়ে আসে, দিল্লি আসে রাজনৈতিক মূলো নিয়ে। যে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির কাছে দিনে দিনে ভারতের চেয়ে চিনের গ্রহণযোগ্যতা বেশি হয়ে উঠছে। ভারতের সঙ্গে দর কষাকষি করতে তাই চিনের উপস্থিতিকে তারা স্বাগত জানাচ্ছে।

একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ১৯৭১ সালে চিন পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিল। এশিয়ার বহু দেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও চিনের কাছ থেকে তা এসেছিল অনেক পরে। অন্য দিকে, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। অথচ, স্বাধীনতার পরে ভারতের নানা কার্যকলাপের ফলে সে দেশের একটি অংশের জনমানসে ভারত সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে, চিন ধীরে ধীরে সে দেশে অর্থনৈতিক বিনিয়োগ-সহ নানা পরিকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করে নিজেদের সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে।

(চলবে)

India China Doklam ডোকলাম
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy