Advertisement
E-Paper

আমরা বুঝতে পারছি, এ বার ঘুরে দাঁড়ানো দরকার?  

সাম্প্রদায়িকতার আগুনে আমাদের ঘরবাড়ি যে আগে পোড়েনি, এমনটা নয়। এমনটাও নয়, সেই আগুনের গ্রাস থেকে সব সময় নিজেদের মানসিক কাঠামোকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি আমরা ছাপোষা সাধারণ মানুষ।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:২১
গম্বুজের মাথায় করসেবকরা। ভাঙচুর চলছে বাবরি মসজিদে। —ফাইল চিত্র।

গম্বুজের মাথায় করসেবকরা। ভাঙচুর চলছে বাবরি মসজিদে। —ফাইল চিত্র।

সত্যি কথা বলতে কী, সম্প্রতি বড় উদ্বেগে দিন কাটছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর এই সিকি শতাব্দী পথে পিছন ফিরে তাকাতে গিয়ে মনে হচ্ছে, বিপদ আরও ঘনিয়ে আসছে। এবং আসছে জল-হাওয়ার মতো, মসৃণ অনিবার্য ভঙ্গিমায়। বিপদের আঁচ আমার গায়ে এসে পড়বে না ভেবে আমরা যারা পাশ ফিরেছিলাম, এখন দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে চমকে উঠে বুঝছি, গ্রাস হয়ে যাচ্ছে আমার প্রতিবেশ।

সাম্প্রদায়িকতার আগুনে আমাদের ঘরবাড়ি যে আগে পোড়েনি, এমনটা নয়। এমনটাও নয়, সেই আগুনের গ্রাস থেকে সব সময় নিজেদের মানসিক কাঠামোকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছি আমরা ছাপোষা সাধারণ মানুষ। বিষাক্ত ছোবল এসেছে, তবু আরও একবার জীবনের খোঁজে রাম-রহিম পাশাপাশি এসে দাঁড়িয়েছেন, বহতা সময় পাঁকগুলোকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি সেই প্রবাহটাকে তেমন জোরালো দেখছি কি, প্রশ্ন জাগছে বার বার।

ধর্মের নামে বিভাজন ছিল শাসকের চর্চা অথবা রাজনীতিকদের কৌশল। ক্ষমতার অলিন্দ থেকে বহু দূরে থাকা মানুষের কাছে কৌশলী বার্তা এসে পৌঁছত হয়তো, কিন্তু এই বাংলার প্রান্তর সাক্ষী, দাগ রাখতে পারত না তেমন সেই বার্তা। আমাদের অনেকেরই বসত ছিল মসজিদের পর মন্দির পেরিয়ে ঘৃণার সঙ্গে যেখানে আড়ি, সেই ভুবন-ডাঙায়। ফলে ঢেউ আছড়ে পড়েছে হয়ত অনেক বার, কিন্তু ওই দুর্ভেদ্য দেওয়ালে প্রতিহত হয়েছে, আমরা ছিলাম এমনই।

আরও পড়ুন: ফের মন্দির জিগির, ঘরপোড়া আমরা, ভোট এলেই ডরাই

সম্প্রতি সেই আত্মবিশ্বাস ওই রকম থাকছে কি? দেওয়ালে চিড়ের লক্ষণ দেখি কেন তবে? কবে কী ভাবে হল বুঝতেও পারিনি হয়তো অনেকেই, কিন্তু এখন দেখছি, পরিচিত পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। যখন আবাল্য বন্ধুগোষ্ঠীকে দেখি ক্রমশ অচেনা হয়ে উঠছে, যখন যুক্তির মোড়কে ধর্মের অধর্মকথা পেশ করেন ট্রামেবাসে নিত্যযাত্রার সঙ্গী যুবক, যখন আদমসুমারির সম্ভাব্য ফলের ধর্মনিষ্ঠ বিশ্লেষণে মেতে ওঠেন সদ্য অফিস যোগ-দেওয়া তরতাজা তরুণেরা, যখন জনপ্রতিনিধির রামজাদা ও হারামজাদার কুত্‌সিত বিভাজন নিতান্ত স্বাভাবিক হয়ে পেশ হয় চায়ের আড্ডায়, তখন বুঝতে পারি, রাজনীতিক অলিন্দ ছাড়িয়ে, কৌশলীদের আস্তিনকে লজ্জা দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা এ বার সর্বজনীন হয়ে উঠছে। শিরায় এখন ধর্মশোণিত। ওই রক্ত গরম হওয়ার জন্য আর বাইরের কারও ভাষণের দরকার পড়বে না।

তখনই ভয় গ্রাস করে আমাকে। এমন যে মানবজমিন, সেখানে এখন কীসের আবাদ? বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পঁচিশ বছরের মাথায়, সারাটা দিন ঘুরপাক খেল এই ভাবনা। আমরা বুঝতে পারছি, এ বার ঘুরে দাঁড়ানো দরকার?

Babri Ayodhya dispute Newsletter Anjan Bandyopadhyay বাবরি মসজিদ অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy