Advertisement
E-Paper

পদার্থবিদ্যার ছায়ায় তথ্যপ্রযুক্তি

কোয়ান্টাম গবেষক অ্যালান বেনেট-এর সাক্ষাৎকার। বিজ্ঞানী অালোকপাত করলেন নানা বিষয়ে। বিশেষত তথ্য অাদানপ্রদানে গোপনীয়তা রক্ষার সমস্যায়। জানালেন তঁার গবেষণার ইতিহাসও। কথোপকথনের আজ দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি।কোয়ান্টাম গবেষক অ্যালান বেনেট-এর সাক্ষাৎকার। বিজ্ঞানী অালোকপাত করলেন নানা বিষয়ে। বিশেষত তথ্য অাদানপ্রদানে গোপনীয়তা রক্ষার সমস্যায়।

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:১৫

প্রশ্ন: কোয়ান্টাম-নির্ভর তথ্যপ্রযুক্তির এক বড় দিক হল ক্রিপ্টোগ্রাফি বা গোপনে তথ্য আদানপ্রদানে এর প্রয়োগ। অনলাইন বিপণি থেকে মাল কেনাবেচা, যা আজ দুনিয়া জুড়ে চলেছে, তাতে ভরসা ওই ক্রিপ্টোগ্রাফি-ই। ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড নম্বর কেনাবেচায় দিতেও হবে, আবার তা গোপনও রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্রিপ্টোগ্রাফিকে সাহায্য করে গণিত। গুণফল আর উৎপাদকের গণিত। দুটো বিশাল মৌলিক সংখ্যার গুণফল নির্ণয় সোজা। কিন্তু ওই গুণফল থেকে মৌলিক দুটো খুঁজে পাওয়া কঠিন। ওই কঠিন কাজটাকে তালা হিসেবে ব্যবহার করে তথ্যকে গোপন রাখা হয়। কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাজারে এসে গেলে তো সেই তালা লাগানোর দফরফা!

চার্লস বেনেট: হ্যাঁ, তা ঠিক। শুধু গুণফল আর উৎপাদকের গণিত নয়, আরও জটিল অঙ্কও ক্রিপ্টোগ্রাফিতে তথ্যে তালা লাগায়। কোয়ান্টাম কম্পিউটার যেহেতু অনেক অঙ্ক নিমেষে কষে ফেলবে, তাই ওই কম্পিউটার তালা খুলে ফেলতেও সাহায্য করবে।

প্র: সে বিপদ থেকে আগামী দিনে ক্রিপ্টোগ্রাফিকে বাঁচানোর উপায়?

উ: কোয়ান্টাম-নির্ভর ক্রিপ্টোগ্রাফি। আসলে ক্রিপ্টোগ্রাফিকে গণিত থেকে পদার্থবিদ্যার চৌহদ্দিতে নিয়ে আসা। তালা বন্ধ করতে বা খুলতে লাগে চাবি। এখনকার ক্রিপ্টোগ্রাফিতে তথ্যপ্রেরক কিংবা তথ্যগ্রাহক, দু’জনের হাতেই আগাম মজুত থাকতে হয় ওই চাবি। তথ্যপ্রেরক তথ্যগ্রাহককে জানিয়ে দেন কোন চাবি দিয়ে তিনি তথ্যে তালা লাগিয়েছেন। এই জানানোর পথে আড়ি পাততে পারে কোনও হ্যাকার। সে হাতিয়ে নিতে পারে চাবি। তথ্যপ্রেরক এবং গ্রাহকের অজ্ঞাতসারে। সুতরাং, আড়ি পাতা ব্যর্থ করে চাবির লেনদেন ভীষণ জরুরি। এখনকার ক্রিপ্টোগ্রাফিতে কাজটা খুব কঠিন। কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফিতে তা নয়।

প্র: কেন?

উ: চাবিটা যদি কোয়ান্টাম-নির্ভর হয়, তা হলে আড়ি পাতা নিষ্ফল হবে। কোয়ান্টাম অনুযায়ী, কোনও বস্তুর একটা ধর্ম মাপলে অন্য ধর্ম বিঘ্নিত হয়। আড়ি পাতা মানে চাবির ধর্ম মাপার চেষ্টা করা। তা করলে চাবি তো হ্যাকারের কাছে পালটে যাবেই, চাবি প্রেরক এবং গ্রাহক, দু’জনেই টের পাবে, আড়ি পাতার চেষ্টা করেছে কোনও হ্যাকার।

প্র: এই যে কোয়ান্টাম-নির্ভর তথ্যপ্রযুক্তি, এটা শুরুতে নাকি ছিল ‘ফ্রিঞ্জ পার্সুট’। এখন
তা একেবারে মেইনস্ট্রিম গবেষণা। এই পরিবর্তন এল কেন?

উ: কোয়ান্টাম তথ্যপ্রযুক্তি ফ্রিঞ্জ পার্সুট! আমি মানি না। ফ্রিঞ্জ পার্সুট হল এক্সট্রাসেন্সরি পার্সেপশন। কিংবা টেলিকাইনেসিস। হ্যাঁ, তবে সব গবেষণার ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয় একটা ধাক্কা। এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। সেই প্রেরণা যদি বলেন, তা হলে তা এসেছিল ষাটের দশকে জন স্টুয়ার্ট বেল-এর বিখ্যাত পেপার থেকে। যাতে উনি ভুল প্রমাণ করেছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইনকে। দেখিয়ে দিয়েছিলেন এন্টাংগলমেন্ট বা কণায়-কণায় সম্পর্ককে আইনস্টাইন যতই বলুন ‘দূর থেকে ভুতুড়ে প্রভাব’, ওটাই কিন্তু বাস্তবে ঘটে। কোয়ান্টাম বিষয়ে গবেষকরা বেল-রচিত ওই পেপার পড়ে দারুণ উৎসাহিত হন। নানা দিকে পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয়।

প্র: আর কোয়ান্টাম গবেষণা পায় নতুন নাম। এক্সপেরিমেন্টাল ফিলোজফি।

উ: সায়েন্স নিজেই তো একটা ফিলোজফি। এবং এক্সপেরিমেন্ট। সুতরাং, ওই নতুন নামকরণের কোনও বিশেষ তাৎপর্য, অন্তত আমার কাছে, নেই।

প্র: কোয়ান্টাম-নির্ভর নিরাপদ তথ্য প্রেরণ কবে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কার্যকর হবে?

উ: বলতে পারব না। তবে দূরে, আরও দূরে, তথ্যপ্রেরণের ক্ষেত্রে সাফল্য ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি চিনের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে তথ্য পাঠিয়েছেন।

প্র: আর ১৯৮৯ সালে আপনি এবং দুই সহযোগী গিল্স ব্রাসার্ড এবং জন স্মোলিন আইবিএম ল্যাবরেটরিতে যে এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন, তাতে তথ্য পাঠাতে পেরেছিলেন ৩০ সেন্টিমিটার দূরে। আচ্ছা, আপনারা যে বাক্সে এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন, তার নাম কেন দিয়েছিলেন ‘মার্থা খুড়িমা-র কফিন’?

উ: লম্বাটে বাক্সটা বসানো ছিল একটা টেবিলের উপর। এয়ারটাইট বক্স। ল্যাবে ওটা দেখে এক বন্ধু বলল, ‘বাহঃ, বেশ তো মার্থা খুড়িমা-র কফিনটা!’ নামটা আমাদের সবার পছন্দ হল।

প্র: স্মৃতিচারণায় ব্রাসার্ড লিখেছেন আপনাদের প্রথম দেখার গল্প। পোর্টো রিকো-য় ক্যারিবিয়ান সমুদ্রে দু’জনে সাঁতার কাটছিলেন। আপনি ওঁকে জানালেন ব্যাংকনোট জাল করা ঠেকাতে আপনার বন্ধু স্টিফেন ওয়াইজনারের উদ্ভাবিত কৌশল। সেটা ঠিক কী?

উ: নোটে আলোর কণা ফোটন প্রথিত থাকবে। সেই কণার ধর্ম জানবে কেবল ব্যাংক। জালিয়াত নোটের নকল বানানোর চেষ্টা করলে সে ধর্ম যাবে পালটে। ধরা পড়বে জালিয়াতি।

প্র: আপনি ছাত্রাবস্থায় পড়েছিলেন কেমিস্ট্রি। সেখান থেকে কোয়ান্টাম তথ্য প্রযুক্তিতে কী ভাবে এলেন?

উ: তখন ডিএনএ-র গঠন আবিষ্কৃত হয়েছে। চার দিকে হইচই। আমি আকৃষ্ট হলাম বায়োকেমিস্ট্রিতে। এ দিকে আমি পড়ে ফেলেছি ম্যাথমেটিক্যাল লজিকে কার্ট গোয়েডেল-এর বিখ্যাত পেপার। পড়ে আমি মুগ্ধ। ডিএনএ নিয়ে পড়তে গিয়ে দেখলাম তার কাজ আসলে তথ্য সরবরাহ করা। ব্যস, তথ্যবিজ্ঞানটা মাথায় চেপে বসল।

(শেষ)

সাক্ষাৎকার: পথিক গুহ

Confidentiality Charles Henry Bennett quantum computer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy