বর্তমান সঙ্কটের সমাধান খুঁজতে গেলে মনে রাখতে হবে, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির মধ্যে আসলে সংযোগটা গভীর, এ কথা কাল আলোচনা করেছি (‘‘বিকল্প নয়, ঘনিষ্ঠ সহযোগী’’, ২০-৪)। সমাধানের ক্ষেত্রে, মাঝারি মেয়াদে দরকার, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, এবং একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষমতাকে আরও বাড়ানো। তার জন্য বাড়তি লোকবল, সরঞ্জাম, চিকিৎসাব্যবস্থার প্রয়োজন। যেমন, একটা বড় সংখ্যায় স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের জন্য সরকার বিনিয়োগ করতে পারে। এই কর্মীরা গোড়ার পরীক্ষাগুলো করতে পারবেন, কিছু ব্যবস্থাও নিতে পারবেন। এঁরা কাজ করবেন সেই সব জায়গায় যেখানে ভাল চিকিৎসা পরিষেবা নেই। এ ভাবে স্বাস্থ্যপরিষেবাতেও প্রাথমিক ভাবে রোগনির্ণয় ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কর্মীরা নিযুক্ত হবে, আবার রোজগারের সুযোগের ফলে অর্থনীতিও কিছুটা ক্ষতি পূরণ করতে পারবে।
আবার দীর্ঘ মেয়াদে দেখাটাও জরুরি। এই ধরনের সঙ্কটে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হল সীমান্ত বন্ধ করা, বিশ্বায়নের গতিকে উলটো পথে চালানোর চেষ্টা। দীর্ঘ মেয়াদে তা ভ্রান্ত এবং ক্ষতিকর। অতীতেও মহামারি ঘটেছে, বিশ্বায়ন ঘটার আগেই। মহামারির সমস্যাটা যেমন সীমান্ত মানে না, তার সমাধানটাও তাই। এর সমাধান খুঁজতে হলে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আর্থিক সম্পদ একত্র করে কাজ করতে হবে, কোনও দেশ একা তা করতে পারবে না।
বিমানযাত্রার গোড়ার দিনগুলোয় অনেক বেশি বিমান দুর্ঘটনা ঘটত। ৯-১১-র সন্ত্রাসী হানাও ঘটেছে। তার জন্য আমরা বিমানযাত্রা বন্ধ করিনি। আমরা আরও নিরাপদ প্রযুক্তি, আরও বেশি সুরক্ষার ব্যবস্থা পালন করছি সারা বিশ্বে, সব দেশ পরস্পরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নজরদারি চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও একই পথ নিতে হবে। গোটা বিশ্বে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে হবে, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য সুরক্ষিত রাখার উপায় সকলকে জানাতে হবে। সেই সঙ্গে সংক্রামক রোগ শুরু হলে কী ধরনের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত যাতে সংক্রমণের বিস্তার ও মেয়াদ সীমিত হয়, সে বিষয়ে বিধিনিয়ম সবাইকে জানাতে হবে। তার জন্য যা প্রয়োজন তা দেশগুলির মধ্যে আরও বেশি সমন্বয় ও সহযোগিতা— বিচ্ছিন্নতা নয়।