Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

যোদ্ধার মৃত্যু

উদ্বেগ ইহাই যে, সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছাইবার পথে যখন চিকিৎসকদের প্রয়োজন সর্বাধিক, তখনই তাঁহাদের স্থানগুলি শূন্য হইতেছে। ইহা ঘটিবারই ছিল।

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২০ ০০:০৬
Share: Save:

দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে সম্মুখ যোদ্ধারাই যদি ক্রমাগত মারা পড়িতে থাকেন, শত্রুর সঙ্গে লড়াইটি লড়িবে কে? কোভিড-আক্রান্ত হইয়া পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক চিকিৎসক মৃত্যুর ঘটনায় এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। চিকিৎসক সংগঠনগুলি হইতে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে এই পর্যন্ত করোনার কারণে মারা গিয়াছেন প্রায় কুড়ি জন চিকিৎসক। প্রায় প্রতি দিনই সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছে। কিছু দিন পূর্বেই এক বেসরকারি হাসপাতালের তরুণ কার্ডিয়াক সার্জেনের মৃত্যু হইয়াছিল কোভিডে। তাহার রেশ না কাটিতেই একই দিনে চার চিকিৎসকের মৃত্যু হইল। ইহার মধ্যে তিন জনই আক্রান্ত হইবার পূর্ব পর্যন্ত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করিয়াছেন। তাঁহাদের মধ্যে কেহ অন্যদের অনিচ্ছুক দেখিয়া স্বয়ং করোনা-ওয়ার্ডে ডিউটি দিয়াছেন। কেহ গভীর রাত্রিতেও রোগীর প্রয়োজনে উপস্থিত হইয়াছেন। চিকিৎসক হিসাবে তাঁহাদের কর্তব্যবোধ দৃষ্টান্তস্বরূপ। এই দুঃসময়ে তাঁহাদের মৃত্যু শুধু চিকিৎসা জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি নহে, সাধারণ মানুষের নিকট গভীর উদ্বেগেরও কারণ।

উদ্বেগ ইহাই যে, সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছাইবার পথে যখন চিকিৎসকদের প্রয়োজন সর্বাধিক, তখনই তাঁহাদের স্থানগুলি শূন্য হইতেছে। ইহা ঘটিবারই ছিল। ইতিপূর্বে বিদেশেও দেখা গিয়াছে সংক্রমণের তুঙ্গ অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুমিছিল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর প্রভূত চাপ সৃষ্টি করিয়াছিল। পরিস্থিতি সামলাইতে অনেক ক্ষেত্রেই অবসর ভাঙিয়া চিকিৎসকদের কাজে নামিতে হয়। এই ক্ষেত্রে বিদেশ হইতে ভারতের শিক্ষা লওয়া আবশ্যক ছিল। তাহা হয় নাই। বিদেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভারতের তুলনায় উন্নততর। জনসংখ্যাও কম। অপর দিকে, ভারতে বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা লক্ষণীয় ভাবে অপ্রতুল। অতিমারি সেই স্বল্প সংখ্যাতেও নিরন্তর আঘাত হানিলে দুরবস্থার চিত্রটি অনুমান করিতে কষ্ট হয় না। চিকিৎসকদের সুরক্ষাব্যবস্থাটি নিশ্ছিদ্র করিবার প্রয়োজন ছিল। চিকিৎসকদের সরাসরি আক্রান্তের সংস্পর্শে আসিতে হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি তাঁহাদের ক্ষেত্রে সর্বাধিক। সুরক্ষাব্যবস্থাটিও অনুরূপ হওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই ক্ষেত্রে গোড়াতেই বিস্তর গলদ থাকিয়া গিয়াছে। এখনও যে সর্বত্র সেই সুরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা গিয়াছে, এমন বলা চলে না।

ফাঁক থাকিয়া গিয়াছে চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রেও। হাসপাতালে একটি শয্যার খোঁজে ছুটিয়া বেড়াইতে হইয়াছে, ইহা শুধু সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে নহে, চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও সত্য। অথচ, হাসপাতালই তাঁহাদের কর্মস্থল। সেখানেই তাঁহারা অ-চিকিৎসিত থাকিবেন, ইহা কল্পনা করা কঠিন। কিন্তু বাস্তবে তাহাই হইতেছে। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল গড়িবার প্রস্তাবটি উঠিলেও এখনও তাহা বাস্তবায়িত হয় নাই। ফলত, অনেক ক্ষেত্রেই আক্রান্ত চিকিৎসকদের চিকিৎসা শুরু হইতে বিলম্ব হইতেছে। সরকারি হাসপাতালে জায়গা না পাইয়া বেসরকারি হাসপাতালে ছুটিতে হইতেছে, এবং সেখানকার অত্যধিক ব্যয় বহন করিতে হইতেছে। সুতরাং, পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। বস্তুত, ইহা এক ইঙ্গিতও বটে। চিকিৎসকদেরই যদি উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা যায়, তবে সাধারণ মানুষের অবস্থা কতখানি দুর্বিষহ, তাহার ইঙ্গিত। প্রশাসন শুনিতেছে কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE