Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

শ্রমের স্বীকৃতি

সুসময়ে যাহা হয় নাই, দুঃসময়ে তাহার প্রত্যাশা কি সঙ্গত?

বিশাল অসংগঠিত ক্ষেত্রের অসংখ্য শ্রমিক যে তাঁহাদের স্বল্পমূল্যের শ্রম দিয়া সংগঠিত ক্ষেত্রকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছেন, সেই সত্যটি জানিয়াও সকলে এড়াইয়া যান। —ফাইল চিত্র।

বিশাল অসংগঠিত ক্ষেত্রের অসংখ্য শ্রমিক যে তাঁহাদের স্বল্পমূল্যের শ্রম দিয়া সংগঠিত ক্ষেত্রকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছেন, সেই সত্যটি জানিয়াও সকলে এড়াইয়া যান। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের স্বীকৃতি দিবার সময় আসিয়াছে, বলিলেন মহম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের এই নোবেলজয়ী সারা জীবন কাজ করিয়াছেন দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের রোজগার, ঋণ ও স্ব-উদ্যোগ লইয়া। করোনাভাইরাস অতিমারি ও তজ্জনিত আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখে ইউনূস মনে করাইয়াছেন, ‘অসংগঠিত’ বলিয়া আলাদা করা হইয়াছে বলিয়াই অধিকাংশ শ্রমিক অর্থনীতির মূলধারায় ব্রাত্য। তাঁহাদের প্রতি কোনও কর্তব্য কখনও স্বীকার করা হয় নাই। সকল নজর সংগঠিত ক্ষেত্রের প্রতি, সকল ব্যস্ততা তাহাকেই ঘিরিয়া। বিশাল অসংগঠিত ক্ষেত্রের অসংখ্য শ্রমিক যে তাঁহাদের স্বল্পমূল্যের শ্রম দিয়া সংগঠিত ক্ষেত্রকে বাঁচাইয়া রাখিয়াছেন, সেই সত্যটি জানিয়াও সকলে এড়াইয়া যান। তাহারই পরিণাম অতিমারির কালে এই বিপুল সঙ্কট, যখন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক সর্বস্বান্ত হইয়া রাস্তায় নামিয়াছেন। যে শহর তাঁহাদের শ্রমে গড়িয়া উঠিয়াছে, সেখানে তাঁহাদের অন্ন নাই, আশ্রয় নাই, কারণ তাঁহাদের শ্রমিকের স্বীকৃতি নাই। নানা প্রকার আইন ও বিধির জটিলতা সর্বত্র ঠিকা শ্রমিকদের অবৈধ, অপরাধী করিয়া রাখিয়াছে। ঠিকাদাররা তাঁহাদের যথাযথ মজুরি দিতে রাজি নহেন, সরকারি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের তালিকায় তাঁহাদের নাম নাই, শিল্পপতিরা তাঁহাদের সকল প্রকার চাহিদা ও আইনি অধিকারকে তাচ্ছিল্য করিতে অভ্যস্ত। এমনকি শ্রমিক সংগঠনগুলিও অসংগঠিত মজুরদের পার্শ্বে নাই। পরিযায়ী শ্রমিক দেশের নাগরিক হইয়াও অপর রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী। আবার নিজগৃহে কর্মরত হস্তশিল্প, কুটিরশিল্পের কর্মীদের শ্রম অদৃশ্য। উৎপাদনশীল নাগরিক হইয়াও এই শ্রমিকেরা অর্থনীতির নিকট ব্রাত্য, উপেক্ষিত।

সুসময়ে যাহা হয় নাই, দুঃসময়ে তাহার প্রত্যাশা কি সঙ্গত? আজ যখন কর্মহীনতা আর এক অতিমারির আকার ধারণ করিয়াছে, উৎপাদন ও চাহিদা উভয়ই কমিতেছে, প্রায় সকল শিল্পে ব্যয়সঙ্কোচন চলিতেছে, তখন অসংগঠিত শ্রমিকদের স্বীকৃতির আহ্বান কি বাস্তবানুগ এক প্রস্তাব? আশ্চর্য মনে হইলেও সত্য এই যে, ইহাই বস্তুত পুরাতন চিন্তা ত্যাগ করিবার উপযুক্ত সময়। কর্মজগতের পরিচিত ছক এখন বদলাইতেছে। তাহার একটি নিদর্শন, ঘর হইতে কাজ করিবার রীতি। সংগঠিত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের একটি বড় পার্থক্য ছিল কর্মস্থল। বড় বড় কারখানা কিংবা দফতর সংগঠিত ক্ষেত্রের মর্যাদার সৌধ। যাঁহারা ঘরে বসিয়া বিড়ি বাঁধিয়া, জরির কাজ করিয়া, তাঁত বুনিয়া সংসার চালাইয়াছেন, তাঁহাদের সেই অবস্থান অর্থনীতিতে তাঁহাদের প্রান্তিক অবস্থানও নির্দিষ্ট করিয়াছে। অতিমারি সেই দূরত্ব ঘুচাইয়াছে, এখন কর্পোরেট কর্তারাও ঘর হইতে কাজ করিতেছেন, অধিকাংশ পরিষেবা বিপণি হইতে গৃহমুখী হইয়াছে।

দ্বিতীয় পার্থক্য কাজের শর্তে। সংগঠিত ক্ষেত্র ব্যয় কমাইতে স্থায়ী কর্মী কমাইতেছে, এক এক টুকরা কাজ দিয়া মূল্য দিতেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্র চিরকাল এই ভাবেই চলিত। অর্থাৎ, কাজের ক্ষেত্রে বিভেদ ঘুচিতেছে। তবে কর্মীদের মধ্যে বিভেদ কেন? মুষ্টিমেয় ভাগ্যবান সমৃদ্ধি-সুরক্ষার আলোকবৃত্তে আসিবেন, বাকিরা সকল প্রকার বঞ্চনার অন্ধকারে ডুবিবেন, এই অন্যায়কে ‘স্বাভাবিক’ মনে করিবার অভ্যাস এই বার বর্জন করা প্রয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Migrant Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE