Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
আপনার অভিমত
Coronavirus

শরীর-মন ভাল রাখাই এই ঘরবন্দি সময়ে সুস্থ থাকার একমাত্র পথ

সংক্রমণের আতঙ্ক সর্বত্র। চেষ্টা চলছে সামাল দেওয়ার। শরীরের সঙ্গে মনের কথাও ভাবতে হবে। লিখছেন দেব্রবত রায় আমরা শুধু বাঁচার কথা ভাবছি। যে ভাবে হোক বেঁচে যাওয়া। বেঁচে গেলে কিন্তু ভাল ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করবে। যে ভাবে আছি সে ভাবে, অথবা আরও সুন্দর ভাবে বাঁচতে চাইবে মন।

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৭:১৩
Share: Save:

করোনা-পরিস্থিতি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ জানে না। তবু ইতিহাস মনে রাখলে মানতে হবে, আজ না হোক কাল এই আতঙ্কের দিন একদিন শেষ হবেই। মানবসভ্যতাও নিশ্চিত ভাবে বেঁচে যাবে। তা সে যে অবস্থাতেই বেঁচে উঠুক না কেন। কিন্তু পুনর্জন্ম লাভের পর?
আমরা শুধু বাঁচার কথা ভাবছি। যে ভাবে হোক বেঁচে যাওয়া। বেঁচে গেলে কিন্তু ভাল ভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করবে। যে ভাবে আছি সে ভাবে, অথবা আরও সুন্দর ভাবে বাঁচতে চাইবে মন। এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ভাবনার জায়গাটা সেখানেই। বিশ্বঅর্থনীতির বিধ্বস্ত অবস্থা, অনাহারে মৃত্যুমিছিল, কর্মহীনতা এবং সেই কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতি— এ সব এড়ানো প্রায় অসম্ভব। করোনা-পরিস্থিতির পর এই সমস্যা ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দেবে পৃথিবীতে। সংকীর্ণ রাজনীতির বাইরে গিয়ে রাষ্ট্র আন্তরিক প্রচেষ্টা চালালে সেই অবস্থা থেকেও বেরিয়ে আসা যাবে হয়তো। কিন্তু মানুষের মন, তার শরীর, তার স্বাস্থ্য, তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম— কী হবে এ সবের? ভাবতে হবে এখন থেকেই। না হলে দেরি হয়ে যাবে।
এই মহামারী শুরুর আগে যখন বিক্ষিপ্ত ভাবে আমাদের দেশে দু’চারটে খবর আসতে শুরু করেছিল (চিন, ইতালি তখন ভয়ানক ভাবে আক্রান্ত), সংবাদমাধ্যমে আলোড়নও শুরু হয়েছে, সেই সময় কিছু অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে (বয়স ১৭-২৫ এবং অধিকাংশই মেয়ে) অদ্ভুত সব উপসর্গ নিয়ে আমাদের কাছে এসেছিলেন। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল, ওঁরা খুব অসুস্থ। অথচ পরীক্ষা করে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। বোঝা গিয়েছিল, কোনও মানসিক চাপ থেকেই অসুস্থতা।
যেমন গণ-আতঙ্ক শুরু হয়েছিল এই রাজ্যে বছরপাঁচেক আগে ‘কোরা’ নামের একটি রোগ নিয়ে। করোনা-সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক ছিল তাঁদের মনে এবং তাঁরা সেটি স্বীকারও করেছেন পরবর্তী কালে কাউন্সেলিংয়ের সময়। এ হল শুরুর সময়কার কথা। তারপর পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লকডাউনের মতো পরিস্থিতি। আমাদের কাছেই যা সম্পূর্ণ অচেনা, তরুণ প্রজন্মের কাছে তো বটেই। সুতরাং, প্রকাশ্যে না এলেও নিঃসেন্দেহে ভিতরে ভিতরে এই সমস্যা বাড়ছে।
পারিপার্শ্বিক অন্যান্য অনেক আতঙ্কের কারণ আছে বলে সমস্যাটা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা সময় আসবে, যখন সমস্যাটি বেশ বিস্তৃত আকারেই দেখা যাবে। এখন থেকেই পারিবারিক স্তরে কাউন্সেলিং শুরু না করতে পারলে সমস্যা গভীরতর হবে। সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।
এই সময়ে বাচ্চাদের সমস্যা আরও বেশি। এত আতঙ্কের পরিবেশ ওরা কখনও দেখেনি। টিভিতে সর্বক্ষণ রোগ নিয়ে কথা, সম্পূর্ণ ঘরবন্দি হয়ে থাকা— ওদের সমস্ত ভাললাগার জায়গাগুলো দূরে সরে গিয়েছে। ঘরে আটকে থেকে শুধু পড়াশোনা করে ওরা ক্লান্ত। পড়াশোনার চাপ কমায় অনেকে প্রথম দিকে উৎসাহ বোধ করলেও ক্রমশ তা হতাশায় পর্যবসিত। তারপর করোনা মোকাবিলায় নানা রকমের বিধিনিষেধ!
একদমই অভ্যস্ত নয় ওরা। বাইরের ফাস্টফুড এই বয়সি ছেলেমেয়েদের কাছে আকর্ষক। সে সবও বন্ধ। ঘরবন্দি হয়ে থাকা। মনোবিদদের মতে, এর প্রভাব শিশুমনে হবে দীর্ঘস্থায়ী। এমনকি, মানসিক বৈকল্যও আসতে পারে, অপরাধ প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাতে মানসিক চাপও বাড়ছে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদে।
বয়স্ক নাগরিকদের সমস্যা আবার অন্য। মৃত্যুভয়ে বয়স্কদের মানসিক সমস্যার সঙ্গে হার্টের সমস্যা, ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, হাঁপানি বাড়তে শুরু করেছে। একাকিত্ব কাটলেও মৃত্যুভয় মনে গেঁথে বসছে।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায়? কাউন্সেলিং। আরও কিছু সমাধানযোগ্য পরামর্শ। টিভি দেখুন। কিন্তু সবসময় দেখবেন না। টিভিতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখুন। বাচ্চাদের সঙ্গে ঘরে বসে খেলা যায় এমন খেলার (যেমন লুডো, ক্যারাম) অভ্যাস করুন। হালকা মেজাজের গল্পের বই, ম্যাগাজিন পড়ুন। বাচ্চাদের ও বয়স্কদের পছন্দমতো বই জোগাড় করে দিন। গান, কবিতার চর্চা করা যায় এই সময়ে মানসিক সঙ্কট কাটাতে। মোট কথা, সবসময় করোনা সংক্রান্ত খবর দেখে বা পড়ে মানসিক উদ্বেগে থাকার প্রয়োজন নেই। তাতে অবসাদ আরও বাড়বে, কমবে না।
ভবিষ্যৎ তো কারও জানা নেই। তবু হতাশ হলে চলবে না। আতঙ্ক কাটাতে হবে। আমরা নিশ্চয়ই বেঁচে থাকব এবং ভাল ভাবেই বেঁচে থাকব। সুস্থ শরীর, সুস্থ মন ও পরিপূর্ণতা নিয়েই নতুন পৃথিবীতে থেকে যাব আগের মতোই। কিন্তু সেই অবস্থায় পৌঁছতে হলে আমাদের প্রত্যেককে সাবধান থাকতে হবে আগামী আরও কিছু দিন। না হলে এই মারণব্যধির আক্রমণে দুর্যোগ আরও বাড়বে।

(লেখক রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক। মতামত ব্যক্তিগত)

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE