Advertisement
E-Paper

শিক্ষায় সন্ত্রাস

রাজনীতির কথাটি না উঠাইয়া গতি নাই। এই প্রতিষ্ঠানের অভিমুখ সাম্প্রতিক কালে এত দ্রুত বদলাইয়া গেল কেন, এই প্রশ্নের একটিই বুদ্ধিগ্রাহ্য উত্তর: নবনিযুক্ত উপাচার্য মহাশয় সাক্ষাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের দূত।

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০০:৩৩

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটি হয়তো এই বার পাল্টাইবার সময় আসিয়াছে। নামে যদি কিছুমাত্র আসিয়া যায়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাহা হইতে স্পষ্টত ভিন্ন অভিমুখে হাঁটা আরম্ভ করিয়াছে, বেশ কিছুটা হাঁটিয়াও ফেলিয়াছে। নতুবা ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদ’ নামে একটি কোর্স চালু করিবার কথা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাবিতেও পারিতেন না। দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্যতম বলিয়া খ্যাত যে প্রতিষ্ঠান, সেখানে যখন ‘ইসলামি সন্ত্রাস’ নামক পাঠ্যক্রম তৈরি হয়, তখন তাহার মান বিষয়েও গভীর সন্দেহ উঠে। প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যতের পক্ষে ইহা দুর্ভাগ্যজনক, আর তাহার ইতিহাসের পক্ষে— মর্মান্তিক। বিকল্প ভাবনার প্রতিষ্ঠান, র‌্যাডিকাল চিন্তার ক্ষেত্র হিসাবে এত দিন এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজগতের বাহিরেও স্থান করিয়া লইয়াছিল, নাগরিক পরিসরে বিশিষ্টতা অর্জন করিয়াছিল। জেএনইউ-এর পড়াশোনার ধারা লইয়া যাঁহারা সমালোচনা করিতেন, তাঁহারাও একবাক্যে মানিতেন প্রতিষ্ঠানটির আদর্শগত স্পষ্টতার কথা। এখন যদি সেই প্রতিষ্ঠান এইটুকুও না বোঝে যে, সন্ত্রাস নামক কার্যক্রমটি কখনও ইসলাম ধর্ম বা কোনও একটি বিশেষ ধর্মের সহিত সম্পৃক্ত হইতে পারে না, কোনও দেশ জাতি গোষ্ঠী কিছুর সহিত ওতপ্রোত যুক্ত হইতে পারে না— তবে অবশ্যই তাহার গুরুতর আত্মসমীক্ষার সময় আসিয়াছে। সংবাদটি প্রকাশিত হইবার পর অবশ্য জেএনইউ কর্তৃপক্ষের তরফে দ্রুত সাফাই শোনা গিয়াছে। যে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এই নোটিস পাশ করিয়াছিল, সেই কাউন্সিলই যুক্তি দিয়াছে যে, তাহারা ইহাকে কোনও ‘কোর্স’ হিসাবে বিবেচনা করে নাই, কোর্সের অন্তর্ভুক্ত ‘থিম’ হিসাবে ভাবিয়াছিল। যুক্তিটি অত্যন্ত ফাঁপা। কোর্সের মূল বিষয় না হইয়া অন্যতম আলোচ্য হইলেও সমস্যা কিছুমাত্র কমে না। অনেক মুসলিম সন্ত্রাসবাদী, সুতরাং মুসলিম মাত্রেই সন্ত্রাসবাদী, কিংবা ইসলামের সহিত সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক স্বীকৃত— এই যুক্তির মধ্যে যে বিশাল ভ্রান্তি, তাহা বোঝার জন্য তর্কশাস্ত্র পড়িতে হয় না, লাগে কেবল সাধারণ বুদ্ধি। আর লাগে রাজনৈতিক সততা।

রাজনীতির কথাটি না উঠাইয়া গতি নাই। এই প্রতিষ্ঠানের অভিমুখ সাম্প্রতিক কালে এত দ্রুত বদলাইয়া গেল কেন, এই প্রশ্নের একটিই বুদ্ধিগ্রাহ্য উত্তর: নবনিযুক্ত উপাচার্য মহাশয় সাক্ষাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের দূত। শ্রীযুক্ত জগদেশ কুমার এই প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে পদক্ষেপণ ইস্তক এখানে ‘হিন্দুত্বময়’ ঘটনার প্রস্ফুরণ ঘটিতেছে— দুইটি বিষয়ের যোগ একেবারে কাকতালীয় বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া শক্ত। পূর্বে এই প্রতিষ্ঠানের উপাচার্যরা সারস্বত সিদ্ধান্তে সরাসরি হস্তক্ষেপ করিতেন না, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনাবশ্যক মাথা গলাইতেন না। নূতন উপাচার্য নিয়মিত ভাবে তাহা করিয়াছেন, এবং বামমনস্ক শিক্ষক-গবেষকদের বিরুদ্ধে বেশ একটি যুদ্ধ শুরু করিয়াছেন। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল আপাতত তাঁহার বিশেষ বশংবদ বলিয়াই প্রতিভাত। গত অক্টোবরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত এমেরিটাস অধ্যাপক একটি খোলা চিঠিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনিয়াছেন যে তিনি একা হাতে এই প্রতিষ্ঠানের সুনামের বারোটা বাজাইতেছেন। তাঁহার অনুরোধে দিল্লির মন্ত্রিবর্গ জেএনইউ ক্যাম্পাস শোভিত করিতে একটি আস্ত আর্মি ট্যাঙ্ক পাঠাইয়া দিয়াছেন; উদ্দেশ্য, গোটা শিক্ষাসমাজকে জাতীয়তাবাদের শিক্ষা দেওয়া! যাঁহারা এই ভাবে ভাবেন, তাঁহারা যে ইসলামি সন্ত্রাস পড়াইতেও ব্যস্ত হইতে পারেন, তাহা সহজ অঙ্ক। অতএব বিদায় নেহরু, বিদায় মুক্ত চিন্তার স্বাধীন পরিসর। অতঃপর জেএনইউ-এর ভবিষ্যৎ, সাঁজোয়া গাড়ির ছত্রচ্ছায়ায় মুসলিমবিদ্বেষ প্রচারের তীর্থক্ষেত্র নির্মাণ।

protest JNU 'Islamic Terror' course
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy