Advertisement
E-Paper

দলিত ছাপের ভিত্তি

ধর্মাম্তরিত মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ‘দলিত’ হিসাবে গণ্য করিতে প্রস্তুত নয় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যুক্তি: দলিতত্ব তথা অস্পৃশ্যতা একান্তভাবেই হিন্দু ধর্মের একটি সামাজিক অন্যায়, ইসলাম বা খ্রিস্ট ধর্মে যাহার কোনও শাস্ত্রীয় অনুমোদন নাই। তাই যিনি একবার ওই দুই ধর্মের কোনও একটিতে অন্তরিত হইয়াছেন, তিনি আর নিজেকে দলিত বা তফশিলি জাতিভুক্ত বলিয়া দাবি করিতে পারিবেন না।

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৮

ধর্মাম্তরিত মুসলিম ও খ্রিস্টানদের ‘দলিত’ হিসাবে গণ্য করিতে প্রস্তুত নয় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যুক্তি: দলিতত্ব তথা অস্পৃশ্যতা একান্তভাবেই হিন্দু ধর্মের একটি সামাজিক অন্যায়, ইসলাম বা খ্রিস্ট ধর্মে যাহার কোনও শাস্ত্রীয় অনুমোদন নাই। তাই যিনি একবার ওই দুই ধর্মের কোনও একটিতে অন্তরিত হইয়াছেন, তিনি আর নিজেকে দলিত বা তফশিলি জাতিভুক্ত বলিয়া দাবি করিতে পারিবেন না। স্বভাবতই দলিতদের প্রাপ্য সংরক্ষণের সাংবিধানিক রক্ষাকবচের দাবিও তাঁহার আর থাকিতে পারে না। যুক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ। জাতিভেদপ্রথার কারণে হাজার বছর ধরিয়া শ্রমজীবী যে সব জনশ্রেণি সামাজিক অন্যায়ের শিকার হইয়া শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে পশ্চাৎপদ হইয়া পড়িয়াছেন, তাঁহাদের সমাজের প্রাগ্রসরদের সমপর্যায়ে উন্নীত করার জন্যই সংবিধান-প্রণেতারা রক্ষাকবচের ব্যবস্থা করেন। দলিতত্ব বিসর্জন দিয়া ধর্মান্তরিত মুসলিম বা খ্রিস্টানরা হিন্দু সমাজ হইতেই স্বেচ্ছা-নির্বাসনে গেলে সেই রক্ষাকবচের সুবিধা পাইবেন কেন।

বিতর্কটি নূতন নয়। বিহারে এই তথাকথিত দলিত মুসলিমদের সংরক্ষণের দাবিতে লালুপ্রসাদ-নীতীশ কুমাররা নির্বাচনী রাজনীতি সরগরম করিয়া রাখেন। দেখাদেখি অন্যান্য রাজ্যেও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির জন্য ক্রমে উচ্চ শিক্ষায় ও সরকারি চাকুরিতে সংরক্ষণের দাবিটি দানা বাঁধিয়াছে। যেহেতু ভারতের ধর্মান্তরিত মুসলিম ও খ্রিস্টানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই অতীতে দলিত কিংবা আদিবাসী ছিলেন, তাই এই দাবি মানিতে হইলে চলতি সংরক্ষণের কোটা বিপুল ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা, যাহাতে শেষ পর্যন্ত মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতার ব্যাপারটাই লুপ্ত হইয়া যাইতে বাধ্য। রাষ্ট্রনীতি হিসাবে ইহা যেমন অবাস্তব, তেমনই অবাঞ্ছিতও বটে। আর এখানেই নৈতিকতা ও আদর্শের প্রশ্নটি আসিয়া পড়ে। শিক্ষা ও সরকারি চাকুরিতে কোটা সংরক্ষণ মারফত অনগ্রসরদের উন্নয়ন ও সামাজিক বিকাশ যদি ঘটাইতেই হয়, তবে জাত-পাতের সংকীর্ণ পরিচিতি নয়, সেই সংরক্ষণের ভিত্তি হওয়া উচিত একান্ত ভাবেই অর্থনৈতিক। অর্থাৎ দারিদ্রের কারণে যাঁহারা শিক্ষার সুযোগ হইতে বঞ্চিত, বুনিয়াদি, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশুনায় শামিল হইতে পারে না, সুযোগের বন্ধ দরজা তাহাদের চোখের সামনে মেলিয়া ধরার দায় রাষ্ট্রের আছে। একই ভাবে শিক্ষান্তে এই শ্রেণির চাকুরির ব্যবস্থার দায়ও রাষ্ট্রেরই।

বস্তুত, এই প্রক্রিয়ায় ছয় দশকে দলিত সমাজের দীনাতিদীন অংশ হইতে স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তি জাতীয় জীবনের সামনের সারিতে উঠিয়া আসিয়াছেন। দুর্ভাগ্য, উপরে উঠিয়া আসা বিশিষ্ট জনেদের প্রায় কেহই নিজ সম্প্রদায়ের অন্যান্য অনগ্রসরদের উন্নয়নে তৎপর হন না। সরকার ও রাষ্ট্রের ঘাড়েই দায় চাপাইয়া দেন। সম্প্রদায়ের নেতারা আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়া অর্থনৈতিক দারিদ্রের পরিবর্তে থাকবন্দি সমাজের বর্ণকাঠামোয় নীচের দিকে থাকা জাতগুলির সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন করেন। এই ভাবে ক্রমশ সংরক্ষণের ব্যবস্থাটি সামাজিক ন্যায়বিচার বুঝাইয়া দিবার বদলে সামাজিক বিভাজনকেই জটিলতর করিয়াছে। এমন বেশ কিছু শ্রেণি সংরক্ষণের সুযোগ লইয়াছে (যথা কুর্মি, যাদব, জাঠ) যাহারা কোনও নিরিখেই অনগ্রসর নয়। অর্থনৈতিক ভিত্তি ব্যতীত অন্য কোনও পরিচিতিকে সংরক্ষণের জন্য বিবেচনা না করিলেই একমাত্র এই সমস্যা মিটিতে পারে।

editorial dalitism ABP editorial religious conversion bjp regime dalits
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy