এ-দিকে বজ্র আঁটুনি, ও-দিকে ফসকা গেরো
একটা সাক্ষাৎকার নিয়ে যে এত সমস্যা হবে, কে জানত! প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এক হিন্দি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন। সেই সাক্ষাৎকার নিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ৭ নম্বর রেসকোর্স রোডে সাংবাদিক পৌঁছে যান। সঙ্গে ছিল চ্যানেলের এক বিশেষ বাহিনী। ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যান, মেক-আপ ম্যান, প্রোডিউসার— সব মিলিয়ে প্রায় বিশ জন। তার ওপর সেখানে নকল স্টুডিয়ো বানানো, সে-ও তো চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকার লাইভ অনুষ্ঠান শুরু করার আগে ঘরোয়া ভঙ্গিতে কথা বলছিলেন। বস্তুত প্রশ্নগুলোও প্রধানমন্ত্রীই ঠিক করে দেন। কোনও অতিরিক্ত প্রশ্ন করার অধিকারও ছিল না। সাক্ষাৎকার পর্ব মিটে যাওয়ার পর প্রধান সাংবাদিক না হলেও টিমের অন্য সদস্যরা এই বিচিত্র সাক্ষাৎকার নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে থাকে। এক অত্যুৎসাহী সাংবাদিক এ-সব কথা আবার এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিয়ে দেন। বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী ক্ষিপ্ত— এ এক গভীর ষড়যন্ত্র। প্রধানমন্ত্রীর দফতর এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে।
অতিথিবৎসল
লোকজন ডেকে খাওয়াতে বরাবরই ভালবাসেন বেঙ্কাইয়া নাইডু। দিল্লির অনেকেই তাঁর বাড়িতে শীতের মধ্যাহ্নভোজনে অন্ধ্রের আমিষ খানার ভক্ত। উপরাষ্ট্রপতি হয়েও বদলাননি তিনি, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন সাংবাদিকদের ডেকে বসিয়ে পিঠে খাওয়ালেন। বাঙালি পিঠে নয়, গোদাবরীর পাড়ের ‘পুঠারেকুলু’। পাটিসাপটার মতো হলেও, ‘পেপার সুইট’ নামেই যার বেশি পরিচিতি। চালের গুঁড়ো দিয়ে একেবারে পাতলা কাগজের মতো মোড়ক তৈরি হয়। পিঠে খাইয়ে পুণ্য হল কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ, এর পর বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন নাইডু। সাংসদ পি সি মোহনের বাড়িতে তাঁর চটিজোড়া খোয়া যায়। ভিড়ের মধ্যে কেউ খোদ উপরাষ্ট্রপতির চটি পায়ে গলিয়ে চলে গিয়েছিল। নিরাপত্তাকর্মীরা দৌড়ে গিয়ে দোকান থেকে চটি কিনে আনলে ফের যাত্রা শুরু করেন বেঙ্কাইয়া। দিল্লি ফিরেই আবার বাড়িতে মকর সংক্রান্তির অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। হাজির ছিলেন বর্তমান ও প্রাক্তন, দুই প্রধানমন্ত্রীই।
এর পরে আর
কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক সেরে দিল্লি ফিরেছেন সিপিএম নেতারা। সঙ্গে ঝুলিতে এসেছে কৌতুকের কাহিনিও। এ কে গোপালন ভবনের অন্দরের কারাট-শিবিরে এখন ঠাট্টা-তামাশার প্রধান বিষয়বস্তু সীতারাম ইয়েচুরি। কলকাতার নেতাদের উপর ভরসা করে তাঁর সাধারণ সম্পাদকের গদি যায়-যায়— এই রসিকতায় নতুন গল্প জুগিয়েছেন এক ইংরেজি টেলিভিশন চ্যানেলের কলকাতার সাংবাদিক। আলিমুদ্দিনের বাইরে ইয়েচুরির সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে রয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট!’ ইয়েচুরি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, এর পরে আর বাইট দেওয়া যায় না। এ নিয়ে যে পরে তাঁর শত্রুশিবির হাসাহাসি করবে, তা জানা ছিল না।
তেল বাঁচাও
দিল্লিতে পেট্রলিয়াম মন্ত্রী তেল বাঁচানোর এক দারুণ নমুনা রাখলেন। ওডিশার নেতা, মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এসেছিলেন প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়াতে, ওডিশার খাদ্য উৎসবের উদ্বোধনে। প্রেস ক্লাব থেকে ওঁর দফতর ঢিল ছোড়া দূরত্বে, তাই গাড়ি না নিয়ে হেঁটেই হাজির হলেন। মন্ত্রীর এই ‘পদক্ষেপ’ প্রশংসিত হল, আবার প্রশ্নও উঠল, প্রেস ক্লাব নবীন পট্টনায়ক অর্থাৎ বিজেডি-র এক জন নেতা বা সাংসদকেও ডাকল না কেন?
সুফি বসন্ত উৎসব
প্রার্থনা: নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগায়
খাজা হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগা ভেসে যাচ্ছে হলুদ রঙে। ঝুড়ি ঝুড়ি হলুদ গাঁদা, সূর্যমুখী ফুল। পাগড়ি, পোশাক, চুনরি, সবেতেই বাসন্তী-হলুদ। সুফি সন্তের দরগায় বসন্তপঞ্চমীর আয়োজন দেখে কে বলবে, দেশে মন্দির-মসজিদের ভেদাভেদ রয়েছে! আমির খসরুর ‘আজ বসন্ত মানা লে সুহাগন’ কাওয়ালিতে তালি পড়ছে। ‘সকাল বান ফুল রাহি সরসোঁ’ গাইছেন সকলে। দ্বাদশ শতাব্দী থেকে চলছে এই ‘সুফি বসন্ত’ উৎসব। সরস্বতী পুজোর দিন দরগায় হিন্দু-মুসলমান সকলেই আসেন। শোনা যায়, আমির খসরু তাঁর গুরু নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মন ভাল করতে হলুদ পাগড়ি ও পোশাক পরে, ঢোল নিয়ে গান ধরেছিলেন। গুরুকে নিবেদন করেছিলেন নিজের লেখা বসন্তের কবিতা। সাতশো বছর পেরিয়ে আজও এখানে চলছে সব ধর্মের মিলনোৎসব।
শব্দছক
আর্থিক সমীক্ষা মানেই পেটমোটা নীরস বই, ধারণাটা ভাঙতে চেয়েছিলেন কৌশিক বসু। মনমোহন জমানায় তাঁর লেখা আর্থিক সমীক্ষায় অর্থনীতির রেখচিত্র দিয়েই প্রচ্ছদের নকশা আঁকতেন। এ বার চমকে দিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী হাসিব দ্রাবু। তাঁর আর্থিক সমীক্ষায় এ বার শব্দছক। পাশাপাশি, উপর-নীচে ছক ভর্তির সূত্রও দেওয়া রয়েছে। অর্থনীতিতে এখন যা-যা আছে, সেগুলি সমাধান হিসেবে দেওয়া রয়েছে। যা নেই, করতে হবে, দেওয়া রয়েছে তারই সূত্র।
জয়ন্ত ঘোষাল, প্রেমাংশু চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy